ডুমুরিয়া : চলতি বোরো মৌসুমে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন বিলে ব্লাষ্ট রোগের আক্রমনে ধানের আগা (বাইল) শুকিয়ে যাচ্ছে। বড় ক্ষতির মুখে পড়ে চাষিদের মাথায় হাত।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ডুমুরিয়া উপজেলায় ২২ হাজার ১শ’ ৩৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে ১৩ হাজার ৯’শ ৩৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ হয়েছে। আর ২ হাজার ২শ’ ৭৮ হেক্টর জমিতে ব্রি- ২৮ জাতের, ২ হাজার ৩শ’ ৩৩ হেক্টর জমিতে ব্রি- ৬৭ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য জমিতে চাষিরা বিভিন্ন জাতের ব্রি ধান চাষ করা হয়েছে।
সম্প্রতি ডুমুরিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলেই অল্প-বিস্তর আকারে ব্লাষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে ধান ক্ষেতে বাইল শুকিয়ে(মরে) যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূলতঃ ব্রি- ২৮ জাতের ধানেই এই ব্লাষ্ট রোগ দেখা দিয়েছে। তারমধ্যে উপজেলার মেছাঘোনা, মাগুরখালি, কৈপুকুরিয়া, উলা, রঘুনাথপুর, আটলিয়া, শরাফপুর, সাহস, গুটুদিয়া, শোভনা, রুদাঘরা, খর্ণিয়া-সহ বিভিন্ন বিলেই কম-বেশি আক্রান্ত হওয়ায় চাষিরা বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছে।
খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কে বালিয়াখালী ব্রীজের আগে উপজেলার মেছাঘোনা বিলে কৃষক মফিজুর রহমানেরিএক বিঘার ধান ক্ষেতে ব্লাষ্ট ছড়িয়ে পড়ায় চোখে পড়ার মতো ক্ষতি হয়েছে। মফিজুর রহমান বলেন, আমি গত ১৪ বছর ধরে এই জমিতে ২৮ জাতের ধান চাষ করে থাকি। এবার কয়েকদিন আগে হঠাৎ বর্ষা ও কুয়াশায় আমার ধানে ভাইরাস আক্রমন করেছে। আমি কীটনাশক ব্যবহার করেছি। এখন এসে কৃষি অফিস আমাকে ওই ধান কেঁটে ফেলতে বলছে, যাতে রাস্তা থেকে দেখা না যায়। মাগুরখালি ইউনিয়নের কৈপুকুরিয়া এলাকার শিক্ষক মৃন্ময় কান্তি বালা বলেন, আমাদের কৈপুকুরিয়া বিলের অবস্থা ভয়াবহ। অনেক চাষিরই কাঁচি নিয়ে বিলে যেতে হবে না। কৃষক নরেশ পোদ্দার দুঃক্ষ করে বলেন, কোথায় কোন বিলে কি পরিমান ব্লাষ্ট আক্রমন করেছে, উপজেলা কৃষি অফিস কি-তা জানে ? তাদের তো দেখা পাইনি। ভান্ডারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান গোপাল চন্দ্র দে বলেন, আমার ইউনিয়নের নলঘোনা, চাত্রা, খড়িবুনিয়া, হাজিবুনিয়া বিল-সহ বিভিন্ন বিলেই ব্লাষ্ট আক্রমন করেছে। তবে এ পর্যন্ত কৃষি অফিসের কেউ আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি।
ডুমুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, আমরা মৌসুমের শুরু থেকেই চাষিদের ব্রি-২৮ জাতের ধান চাষ করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু তারপরও যারা চাষ করেছে, তাদের কিছু কিছু ক্ষেতে হালকা-বিক্ষিপ্ত ভাবে আক্রান্ত হয়েছে। তবে ইতো মধ্যে কীটনাশক স্প্রে করায় কিছুটা দমন হয়েছে। আশা করছি ফলনের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে না। খুলনা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।