ডুমুরিয়ায় আটলিয়া ইউপিতে নৌকা নিয়ে চলছে হিসাব-নিকাশ

প্রকাশঃ ২০২১-০১-৩১ - ১৩:১০

সুজিত মল্লিক, ডুমুরিয়া (খুলনা) : আসন্ন ইউপি নির্বাচনে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদ নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ। মুলতঃ কে পাচ্ছেন নৌকা এই নিয়েই চলছে হিসাব-নিকাশ। যা নিয়ে চিন্তিত তৃণমুল থেকে দলের হাই-কমান্ড। তবে স্বস্তিতে আছে বিএনপি। ওদিকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আছে নো-টেনশানে।
জানা গেছে, ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্যে বৃহত্তর ও অন্যতম ইউনিয়ন হল আটলিয়া। যার মধ্যে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী চুকনগর বাজার। যোগাযোগ ও বানিজ্যিক ব্যবস্থপনার কারণে চুকনগর বেশ নামকরা। বড় ধরনের শিল্প-কারখানা গড়ে না উঠলেও এখানে আছে বাজার ব্যবস্থাপনা ও বানিজ্যিক সুনাম। আছে নামী-দামী আর ধনাঢ্য ব্যক্তিসহ শিল্পপতি ও অভিজাত পরিবারের বসবাস। এরই মধ্যে আছে রাজনীতি ও জন-প্রতিনিধিত্ব। আর এই প্রতিনিধি নির্ধারণের লক্ষ্যে সামনে আসছে ভোটযুদ্ধ। সে যুদ্ধে অংশ নিবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সমার্থিত ও স্বতন্ত্রপ্রার্থীরা। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের পক্ষ্যে দলীয় টিকিট ও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ এবিএম শফিকুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক জি এম ফারুক হোসেন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান এ্যাড, প্রতাপ কুমার রায় ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব। প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে, এই চারজনের মধ্যেই চলছে মনোনয়ন যুদ্ধ। চারজনই হলেন নৌকার দাবিদার। রাজনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে তাদের প্রত্যেকেরই আছে কম-বেশি অবস্থান। আর ওই অবস্থান ধরে নিয়েই স্ব স্ব প্রার্থী এখন কাঙ্খিত স্বপ্ন দলীয় প্রতীক নৌকার প্রত্যাশায় মরিয়া। প্রত্যেকে এখন তৎপর। যে কোন উপায়ে হতে চান নৌকার কান্ডারি। চারজনই আছেন প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসে। এছাড়া এই ইউনিয়নে বিএনপির পক্ষ্যে মাত্র একজন প্রার্থী হিসেবে সরদার দৌলত হোসেনের নাম শোনা যাচ্ছে। ফলে তিনি আছেন স্বস্তিতে। ওদিকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নো-টেনশান অবস্থায় আছেন শেখ হেলাল উদ্দিন।
তবে এই মুহুর্তে নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগের দলীয় টিকিটি ও নৌকা প্রতীক প্রত্যাশীতে প্রচার-প্রচারণায় শীর্ষে আছেন অধ্যাপক জি এম ফারুক হোসেন। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। ইউনিয়ন জুড়েই তার প্যানা-পোস্টারে ছেয়ে গেছে অলিগলি। তিনি বিগত নির্বাচনেও ছিলেন নৌকা প্রত্যাশী। কিন্তু প্রতীক বঞ্চিত হয়েও রয়েছেন মাঠে। এবারের নির্বাচনেও তিনি হাল ছাড়েননি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমি ছাত্র-জীবন থেকে আওয়ামী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। মুলতঃ ১৯৯২ সাল থেকে রাজনীতি শুরু করি এবং ১৯৯৭ সালে খুলনার ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয় বিএল কলেজে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। সেখানে পড়াশুনা শেষ করে ২০০৫ সালে জেলা যুবলীগে সম্পৃক্ত হই এবং জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মনোনীত হই আর এর কিছুদিন পরেই ডুমুরিয়া উপজেলা যুবরীগের আহবায়ক হিসেবে একটানা ৭ বছর দায়িত্ব পালন করেছি। বর্তমানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগাঠনিক সম্পাদক। নিজের অবস্থান নিয়ে তিনি আরও বলেন, আমি প্রায় ১০ বছর ধরে প্রচার-প্রচারণার মাঠে। বিগত নির্বাচনে দলীয় প্রতীক চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিলাম। তারপরও আমি মানুষের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।
এই ইউনিয়নের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেন হাবিবুর রহমান হাবিব। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ছাত্রলীগের মধ্যে দিয়ে রাজনীতি শুরু করেন। কিন্তু ২০০৮ সালের আগে তার তেমন পরিচিতি বা ডাকনাম ছিল না। এর কিছুদিন পরেই অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার সাহসী ভূমিকায় সকলের জনরে আসেন তিনি। জামাত-বিএনপির ঘাঁটি নরনিয়া এলাকা তার নেতৃত্বে তছনছ হয়ে পড়ে। ওই নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাসীন হয় আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন থেকে শুরু করে দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে সাখ্যতা গড়ে গঠে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৪ সালে জামাত-বিএনপি রাস্তায় রাস্তায় গাছ ফেলে হরতাল করা, গাড়ীতে প্রেট্রোল বোমা ছুড়া, আওয়ামী লীগের লোকজন ধরে নিয়ে পিটানো। তখন দলের অনেক নেতা লেজ গুটিয়ে ঘরে বসে ছিল। তখন আমি অগ্রভাগে থেকে এ সবকিছুর প্রতিবাদ করেছি। জামাত-বিএনপিকে তছনছ করে দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছি। সংগঠনের জন্য জীবনের ওপর দিয়ে অনেক ঝুকি ঝামেলা পেরিয়ে গেছে। বিগত জোট সরকারের আমলে ১১টি মামলাসহ অনেক হামলার শিকার হয়েছি। কিন্তু বর্তমান সময়ে আওয়ামী ক্ষমতায় থেকেও প্রকৃত আওয়ামী লীগের কর্মী-সমার্থক রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমি এর অবসান চাই। আর এ জন্যই আগামী ইউপি নির্বাচনে আমি দলীয় টিকিট প্রত্যাশী।
আটলিয়া ইউনিয়নে নৌকা প্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান এ্যাড. প্রতাপ কুমার রায়। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ছাত্র জীবন থেকেই তিনিই সাহসী। চুকনগর অঞ্চলটি বরাবরই জামাত-বিএনপির। এখানে তার রাজনৈতিক ভুমিকা প্রশাংসানীয়। দলের প্রতিটি পদ-পদবী পেতে তাকে চ্যালেঞ্জ করেই পেতে হয়েছে। সর্বশেষ বিগত চেয়ারম্যান নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া তার অনন্য উদাহরণ। আসন্ন নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রতীকে আশাবাদী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে এ পর্যন্ত এসেছি। সেই ১৯৯৭ সালের আঞ্চলিক ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদকের পদ প্রাপ্তি থেকে শুরু করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ-পর্যন্ত আমাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পেতে হয়েছে। আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নীতি আদর্শে বিশ্বাসী। আমি জানি নীতি ও আদর্শে সঠিক থাকলে কোন ষড়যন্ত্র আটকিয়ে রাখতে পারে না। যার ফসল হিসেবে বিগত ইউপি নির্বাচনে আমার বিজয় হয়েছিল। আর আমি চেয়ারম্যান হয়ে এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছি। আশাকরি আগামী নির্বাচনে আমি আবারও দলীয় প্রতীক নৌকা পাবো এবং বিজয়ী হয়ে মানুষের সেবা করবো।
এই ইউনিয়নের বিএনপির পক্ষ্যে একমাত্র প্রার্থী হলেন সরদার দৌলত হোসেন। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির প্রথম যুগ্ম-আহবায়ক। বিগত ইউপি নির্বাচনে তিনি দলীয় প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। দলের এই দুঃসময়ে তিনিই অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ক্ষমতাসীন দলের সকল হামলা-মামলার মুখে তার ভূমিকাই বেশি। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, আটলিয়া তথা চুকনগর অঞ্চল বিএনপির উর্বর ভূমি। বিগত নির্বাচনে আমার পরাজয় হয়েছিল দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে। আশাকরি এবারের নির্বাচনে আমি আবারও দলীয় প্রতীক পাবো। আর নির্বাচনে ভোট চুরি, কেন্দ্র দখল ও কাটাকাটি না হলে বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
এই ইউনিয়নে অন্যতম নক্ষত্র হলেন শেখ হেলাল উদ্দিন। তিনিই হলেন সকল প্রার্থীর গলার-কাঁটা। রাজনীতিতে তিনি বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত। তবে দলে তার তেমন কোন পদ-পদবী নেই। কিন্তু ইউনিয়ন জুড়ে আছে ব্যাপক পরিচিতি। বিগত নির্বাচনে তিনি বাঘা বাঘা প্রার্থীদের পাশ কাটিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিলেন। এবারের নির্বাচনেও তিনি বেশ জোরে-সোরে নেমেছেন প্রচারণার মাঠে। মুলতঃ তিনি হলেন চিংড়ি পোনা ও ঘের ব্যবসায়ী। ইউনিয়নে দান-অনুদানে, সাহায্য-সহযোগিতায় তার জুড়ি নেই। ফলে প্রাতিটি ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় রয়েছে তার নিজস্ব লোকজন। রাজনীতির বাহিরেও তার পক্ষে আছে গণ-জোয়ার। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেন, ইউনিয়নের প্রতিটি পাড়া-মহল্লা, পরিবারের সাথে আমার সু-সম্পর্ক রয়েছে। তাই নির্বাচন নিয়ে আমি টেনশান করি না। কারণ জনগণ চাই একটু সম্মান-মর্যাদা। কিছু মানুষ চাই বিপদে আপদে সহযোগিতা। আর কিছু মানুষ চাই তাদের নিরাপত্তা। আমি সামান্য একজন সেবক হিসেবে তাদের পাশে থেকে সেগুলো করে যাচ্ছি।