আ: লতিফ মোড়ল, ডুমুরিয়া (খুলনা): খুলনা শহর থেকে মোঃ লিটন হোসেন প্রতিদিন দু’ বার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়ি বাঁধের উপর দিয়ে টিয়াবুনিয়া বিলে নিজ খামারে যাতায়াত করেন। তিনি কখনও মোটর সাইকেলে, কখনও ইজিবাইকে আবার কখনও পায়ে হেঁেট সেখানে যান। বর্তমানে পাউবোর বেড়ি বাঁধের উপর দিয়ে চলতে পারেন না। ট্রাক চলাচল করে মাটির রাস্তা ধূলাবালিতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ট্রাক গেলেই ধূলা উড়ে পরণের পোষাক, পরিচ্ছদ নষ্ট হয়ে যায়। মুখে মাস্ক ব্যবহার করে চলতে হয়। বালি, মাটি বহনকারি ট্রাক মালিকরা অত্যন্ত প্রভাবশালী তাদেরকে নিষেদ করেও কোন সুরাহা হয় না । এ অভিযোগ স্থানীয় অধিবাসীদের।
জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার গ্রামীন সড়কের সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ডাম্পিং ট্রাক। গুটুদিয়া, খর্নিয়া, রুদাঘরা ইউনিয়নের শোলগাতিয়া, শোভনা, ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের হাজিবুনিয়াসহ বেশ কয়েকটি স্থানে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। এ সকল ইটভাটায় বিভিন্ন এলাকার বিল থেকে মাটি কেটে ট্রাকে করে সেই মাটি গ্রামের রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সকল রাস্তার কোন কোনটা পীচ দিয়ে কার্পিটিং করা। ট্রাক চলার কারণে পীচ উঠে গিয়ে বালি মাটি উঠে গেছে। ট্রাক চলাচলের সময় তা বাতাসে উড়ে আশপাশের এলাকার ফসলি ক্ষেত গাছ- গাছালি ধূলায় বিবর্ন হয়ে পড়েছে। সবজি এলাকা বলে খ্যাত এই এলাকার সবজি ক্ষেতের বিভিন্ন প্রজাতির সবজি ধূলায় মান নষ্ট হচ্ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার কোমলপুর গ্রামের মামুন হোসেন বলেন, হাজিবুনিয়া বিলে মাছের খামার রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন মোটর সাইকেলে করে যেতে গিয়ে ধূলা বালিতে মোটর সাইকেল নোংরা হয়ে পড়ে। নষ্ট হয় পরনের পোষাক পরিচ্ছদ। গুটুদিয়া গ্রামের জনৈক বিএনপি নেতা সরকার দলীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে ডাম্পিং ট্রাকে করে মাটি নিয়ে বিভিন্ন ইট ভাটায় সরবরাহ করে থাকে।
জিলেরডাঙ্গা গ্রামের গৃহবধূ আরতি রানী মন্ডল গবাদি পশু গরু ছাগল নিয়ে প্রতিদিন সকালে নিয়ে যান চাতরার বিলে। তিন বলেন ওয়াপদার ( পানি উন্নয়ন বোর্ড) রাস্তা দিয়ে চলতে পারি না। বড় বড় ট্রাক চলে। মাটি বালি ইট বয়ে নিয়ে যায়। রাস্তায় ধূলাবালির কারণে চলতে পারিনা। কাপড়ে মুখ ঢেকে চলতে হয়।
এ বিষয়ে গুটুদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা সরোয়ার বলেন সরকারের নির্দেশনা উপেক্ষা করে এক শ্রেণির ব্যক্তি বেআইনীভাবে ফসলী জমির মাটি কেটে ইটভাটায় সরবরাহ করছে। তারা গ্রামীন সড়ক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ, স্থাণীয় সরকার বিভাগের রাস্তার উপর দিয়ে ৩০ থেকে ৫০ টন মাটি, বালি ও ইট পরিবহন করে। এ বিষয়ে পানি উন্নযন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট পোল্ডারের সেকশন অফিসার মোঃ হাসনাতুজ্জামান বলেন, আমরা বেড়িবাধ দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে গিয়ে পারছি না। যারাই মাটি, বালি ও ইট পরিবহণ করছে তারা স্থানীয় প্রভাবশালী। জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে তারা বেআইনী কাজ করে। তিনি বলেন বালি, মাটি, ইট বহনকারি এ সকল ডাম্পিং ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে আইনের আশ্রয় নেয়া হবে।
এ বিষয়ে খুলনা জেলা প্রশাসক মো: অমিনুল আহসান বলেন ফসলি জমির টপ সয়েল (উপরিভাগের মাটি) কেটে ইটভাটায় না দিতে নির্দেশনা দেয়ংা রয়েছে। এ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়নে উপজেলা নির্বাহি অফিসারদের নির্দেশনাও দেয়া রয়েছে। গ্রামীন রাস্তায় ভারী ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানাও করা হচ্ছে।