ডুমুরিয়ায় ধামালিয়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর ছড়াছড়ি

প্রকাশঃ ২০২১-০২-১১ - ১৬:৫৮

সুজিত মল্লিক, ডুমুরিয়া : আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে ডুমুরিয়া উপজেলার ১নং ধামালিয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীর ছড়াছড়ি। দিন গেলেই বাড়ছে নৌকা প্রত্যাশীর সংখ্যা। দুই প্রার্থী আছে ধানের শীষের তালিকায়। আবার জামাতের পক্ষ্যেও দেখা যাবে প্রার্থীর আভির্বাব।
জানা গেছে, উপজেলার উত্তর অঞ্চল তথা যাশোর জেলার সিমানা ছুয়ে আছে ধামালিয়া ইউনিয়ন। রাজনৈতিক দিক দিয়ে এখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জামাতে ইসলামী ও বিএনপি এই তিন দলেরই আছে প্রভাব। ইউপি নির্বাচনে এই তিন দলের প্রার্থীদের মধ্যে হয় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। বিগত নির্বাচন পর্যালোচনায় দেখে গেছে, এই ইউনিয়নের কান্ডারি হিসেবে পরপর দুইবার চেয়ারম্যান ছিলেন জামাত নেতা মাওলানা জাফর। এরপর গতবারের নির্বাচনে দলীয় নেতা-কর্মীদের কঠোর পরিশ্রম আর প্রচেষ্টায় বিজয়ী হয়েছিলেন বর্তমান চেয়ারম্যান মোল্ল্যা রেজোয়ান হোসেন। তিনি এবারও নৌকা প্রতীক প্রত্যাশী। কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে নৌকা প্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এরমধ্যে চমক প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন সাবেক ইউপি সদস্য ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী হাসনা হেনা। এছাড়াও আছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক গাজী আব্দুস সালাম, আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যক্ষ মতলেব সরদার, যুবলীগের খান তৌহিদুল ইসলাম রাতুল ও প্রভাষক মাসুদ রানা, ইউপি সদস্য আজম হালদার এবং আনিছুর রহমান। ইউনিয়নে বিএনপির দুই প্রার্থী হলেন হুমায়ুন কবির স্বপন ও জহুরুল হক। এছাড়াও জামাতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা জাফর ও মাওলানা মুসতাক আহমেদের নাম শোনা যাচ্ছে।
আসন্ন নির্বাচন ও দলীয় নমিনেশন নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মোল্ল্যা রেজোয়ান হোসেন বলেন, এই ইউনিয়ন এক সময়ে আওয়ামী লীগের কোন কর্তৃত্ব ছিল না। তাই বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এত প্রতিযোগিতাও ছিল না। এক ধরনের অনিশ্চিয়তায় আমাকে প্রতীক দেওয়া হয়েছিল। তখন আমি নৌকা প্রতীক পেয়ে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কঠোর পরিশ্রম আর প্রচেষ্টায় আমাদের বিজয় হয়েছিল। আমি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এলাকায় দলের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল ও সমুন্নত করা হয়েছে। এলাকার রাস্তাঘাট, স্কুল, খেলার মাঠে, মসজিদ মাদ্রাসা, মন্দির-শশ্মানে অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। এমন কোন প্রতিষ্টান নেই সেখানে কাজ হয়নি। ইউনিয়নের সকল প্রতিষ্টানে বরাদ্দ দেওয়া হয়। তাই আমি আবারও নৌকা প্রতীক প্রত্যাশা করছি এবং বিজয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।
এখানে আরও দলীয় প্রতীক নৌকা প্রত্যাশী হলেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসনা হেনা। তিনি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। দলীয় প্রার্থীতা নিয়ে তিনি বলেন, কলেজ লাইফ থেকে আওয়ামী রাজনীতির সাথে আমি সম্পৃক্ত। বিগত সময় থেকে আজ পর্যন্ত দলের সকল কর্মসুচীতে অংশ গ্রহন করে আসছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নীতি আদর্শ মেনে রাজনীতি করে আসছি। তাই এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা প্রত্যাশা করছি।
প্রার্থীতা নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী আব্দুস সালাম বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে এখানে আওয়ামী লীগের মিটিং-এ কোন লোক হাজির হত না। আমি জোট সরকারের সকল হুমকি, হুলিয়া উপেক্ষা করে দলের জন্য কাজ করে আসছি। জামাত-বিএনপির জ্বালাও পাড়াও এ সময়ও আমি সামনের সারিতে থেকে তাদের বিরুদ্ধে মোকাবেলা করেছি। ইউনিয়নের সকল ওয়ার্ড ও পাড়া-মহল্লায় আমি উঠান বৈঠাক ও সর্ব শ্রেনী-পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় অব্যাহত রেখেছি। তাই আসন্ন ইউপি নির্বাচনে আমি নৌকা প্রত্যাশী।
মনোনয়ন প্রত্যাশী আরও একজন হলেন খান তৌহিদুল ইসলাম রাতুল। তিনি উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও ইউনিয়ন কমিটির যুগ্ম-আহবায়ক। এছাড়াও তিনি ওই ইউনিয়নের প্রায়ত লালু চেয়ারম্যানের ছেলে ও যশোর জেলার জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম খান টিপু সুলতানের ভাইপো। সেক্ষেত্রে দলের শীর্ষ-স্থানীয় নেতৃবৃন্দের তার সাথ্যতা বেশি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমার মরহুম বাবা ও চাচাদের স্বপ্ন ছিল এই এলাকা ও ইউনিয়ন বাসীর সেবা করা। আমি তাদের উত্তরসুরী হয়ে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই।
তবে এছাড়াও দলীয় প্রতীক নৌকা প্রত্যাশীর তালিকায় ইউনিয়নের সভাপতি মাস্টার শহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মতলেব সরদার, যুবলীগের প্রভাষক মাসুদ রানা, ইউপি সদস্য আজম হালদার ও আনিছুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে।
তবে এই্ ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থীরা হলেন দুইজন। দু’জনই ধানের শীষ প্রতীক প্রত্যাশী। এরমধ্যে গতবারের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির স্বপন। তিনি এবারও প্রতীক প্রত্যাশী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ধামালিয়া ইউনিয়নটি হল বিএনপির ঘাঁটি। এখানে দলের একক প্রার্থী থাকলে বিজয় নিশ্চিত। গতবারের নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে আমি পরাজিত হয়েছিলাম। তবে এবারের নির্বাচনে আমি সম্পূর্ণ আশাবাদী। আর ইউনিয়নের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আমার সঙ্গে আছে। ধানের শীষ প্রত্যাশী অপর প্রার্থী হলেন জহুরুল হক। তিনি ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক। তিনি বলেন, গতবারের নির্বাচন থেকে আমাদের দল পরাজয়ের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে অনুভব করতে পেরেছে। আশাকরি এবার আর দলের হাই-কমান্ড সে ভুল করবে না। তাই ধানের শীষ প্রতীক প্রত্যাশীতে আমি শতভাগ আশাবাদী।
এছাড়াও এই ইউনিয়নের পরপর দু’বার চেয়ারম্যান ছিলেন জামাতে ইসলামীর মাওলানা জাফর আহমেদ। তিনি বৃদ্ধ হলেও এলাকায় প্রচার-প্রচারণায় শোনা যাচ্ছে তিনিসহ জামাতের আরেক নেতা মাওলানা মুসতাকের নাম। স্থাণীয়দের ধারণা, নির্বাচনি পরিবেশ ও ভাবধারা অনুকুলে থাকলে হয়তঃ তাদের মধ্যে থেকে যে কেউ প্রার্থী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।