মোঃ আঃ লতিফ মোড়ল, ডুমুরিয়া (খুলনা) : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগরে এক নতুন পীর বাবার আবির্ভাব ঘটেছে। তার পানি পড়াতে নাকি ভাল হয় সব রোগ। সর্দি জ্বর থেকে শুরু করে বাতব্যথা, চর্মরোগ, এলার্জী, সাপে কাটা, কুকুরে কামড়ানো, বিড়ালে কামড়ানো, জ্বীনের আছর, বারণ দেয়া যে কোন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ তিনি। আস্তানা গেড়েছেন চুকনগর শহরের হাইস্কুল রোডের একটি ঘরের মধ্যে। প্রতিদিন শত শত রোগী আসছে পীর বাবার কাছে। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা এবং বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত রোগী দেখেন। গত শনিবার বিকাল ৫ টার দিকে তার আস্তানায় গিয়ে দেখা যায় প্রায় ৫০ জনের মত রোগী। যার মধ্যে ৪০ জনের মত মহিলা। সকলের হাতে পানি ও তেলের বোতল। একেক জনকে একেক ভাবে চিকিৎসা করাচ্ছেন তিনি। পীর বাবার নাম আব্দুল লতিফ। তিনি ডুমুরিয়া উপজেলার রোস্তমপুর গ্রামের মোক্তার মোড়লের পুত্র। বয়স ৩৫ বছরের মত। তার আস্তানায় মোট ৪ টি সাইন বোর্ড রয়েছে। একটিতে লেখা রয়েছে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা, একটিতে রোগের চিকিৎসা ফি-সাপে কাটা ফি ৫০০ টাকা, কুকুরে কামড়ানো ফি ২৫০ টাকা, বিড়ালে কামড়ানো ফি ১৫০ টাকা, অশ্ব রোগী ২০০ টাকা, জ্বিনে ধরা ফি ৩০০ টাকা, প্রয়োজনে বারণ ফি ১০০ টাকা, বাড়ি বন্ধ করা ফি ৩০০ টাকা। একটি সাইন বোর্ডে লেখা আছে প্রথম সাক্ষাত ৫০ টাকা, দ্বিতীয় সাক্ষাত ৩০ টাকা। আরেকটি সাইন বোর্ডে লেখা আছে আল্লাহর রহমত চাই, আপনাদের সহযোগিতা চাই, ২০১৯ সালে হজ্ব করতে চাই। এসময় পীর বাবার কাছে চিকিৎসার কোন সনদ আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন কোন সনদ নেই আল্লাহর কালাম পড়ে ফু দিলে সব রোগ ভাল হয়ে যায়। আস্তানায় উপস্থিত কয়েকজন রোগীর সাথে কথা হয় সাংবাদিকদের। এদের মধ্যে রাবেয়া বেগম (৬০) এসেছেন এলার্জী রোগ নিয়ে, রওশানারা (৪০) এসেছেন পেটে ব্যথা রোগের চিকিৎসা নিতে। মাজায় ব্যথা সারাতে এসেছেন হাফিজা বেগম (৪০)। এমনিভাবে বহু রোগী তাদের রোগ নিরাময়ের জন্য হুজুরের দরবারে এসেছেন। কিন্তু তাদের সবাই প্রথম বারের মত এসেছেন। আশপাশের অনেকেই হুজুরের পানি পড়াতে সুস্থ হয়ে গেছেন এই গুজব শুনে এসেছেন তারা। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে হুজুর তার সব সাইনবোর্ড অপসারণ করে ফেলেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রোস্তমপুর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ শহিদুল ইসলাম বলেন যদিও ঝাড় ফুক, পানি পড়ার কোন ভিত্তি নেই, তবে তার হাতে অনেক রোগী ভাল হয় শুনেছি। আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডঃ প্রতাপ রায় বলেন, এ সবই ভাওতাবাজী ও প্রতারণা। এ ধরনের কাজের সাথে জড়িতদের আ্ইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
ডুমুরিয়া থানার অফিসার্স ইনচার্জ মোঃ হাবিল হোসেন বলেন; বর্তমান যুগেও যারা এসবে বিশ্বাস করে তারা বোকার স্বর্গে বাস করে। আমার কাছে অভিযোগ আসলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
র্যাব-৬ এর কোম্পানী কমান্ডার লেঃ কমান্ডার জাহিদ বলেন; এ ধরনের অপচিকিৎসার আইনগত কোন ভিত্তি নেই, এতে সাধারণ মানুষ একদিকে যেমন প্রতারিত হয় তেমনি হিতে বিপরীত হয়ে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আমরা সময়মত তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।