ডেঙ্গু টিকা প্রয়োগের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি: এ বি এম আব্দুল্লাহ

প্রকাশঃ ২০২৩-০৮-২০ - ১৭:১২
ডেঙ্গু মোকাবিলায় বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের যৌথ দায়বদ্ধতা শীর্ষক আলোচনা সভায় অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ

ইউনিক ডেস্ক : ডেঙ্গু ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা সহজলভ্য নয়। একইসঙ্গে এ টিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এ অবস্থা দেশে ডেঙ্গু টিকা প্রয়োগ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ।

আজ রবিবার (২০ আগস্ট) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শহীদ ডা. মিল্টন হলে ডেঙ্গু মোকাবিলায় বর্তমান পরিস্থিতি ও আমাদের যৌথ দায়বদ্ধতা শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ তথ্য জানান।

এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, দেশে চলতি বছর এক লাখের মতো মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এই ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা এখনও সহজলভ্য না হওয়া এবং টিকা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তাই এটি প্রয়োগ করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

গর্ভবতী ও শিশুদের বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া বেশিরভাগই নারী। তাদের অনেকে অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাই গর্ভবতী মা ও শিশুদের জন্য বাড়তি সতর্ক ব্যবস্থা রাখতে হবে। ডেঙ্গু হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যাবে না এমনটা ঠিক না। ডেঙ্গুর চিকিৎসা হলো লক্ষণ নির্ভর। জ্বরের সঙ্গে যে রোগ হয়, তার চিকিৎসা দিতে হবে। চিকিৎসক যদি মনে করেন, অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া প্রয়োজন তবে রোগীকে তাই দেওয়া উচিত। আবার ডেঙ্গু হলেই প্লাটিলেট দিতে হবে এমনটাও নয়। আগে রোগীর অবস্থা কেমন তা জানতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে উন্নয়ন হয়েছে বলেই চারদিকে ভবন তৈরি হচ্ছে। এ ভবন তৈরির সময় অনেক জায়গায় পানি জমে থাকে। এসব ভবনের পানি জমে থাকলে মশা সৃষ্টি হবে। পানি জমি থাকলে ঠিকাদারদেরকে জরিমানার আওতায় নিয়ে আসতে হবে। থানাগুলোতে অনেক পুরানো পরিত্যক্ত গাড়ি আছে। সেখানে পানি জমে। সেখান থেকেও মশা হয়। হাসপাতালগুলোতে দেখতে হবে কোন অঞ্চলের রোগী বেশি আসছে। সেই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধিকে বলতে হবে আপনার এলাকায় রোগী বেশি। আপনার এলাকায় ডেঙ্গু রোগ বাহক মশা নিধন করতে হবে। এই দায়িত্ব সবাইকে নিতে হবে।

মশা নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশকের কার্যকারীতার বিষয়ে তিনি বলেন, মশা নিধনে যেসব কীটনাশক রয়েছে তা অনেকটা প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এজন্য মশা নিধনে ব্যবহৃত কীটনাশকের মান বৃদ্ধিতে নজর দিতে হবে, প্রয়োজনে গবেষণা করতে হবে, কোনটি কাজ করে সেটি ব্যবহারের পরামর্শ দেবেন। এর বাইরেও আমরা শুনেছি, সিঙ্গাপুরে আরেকটা মশা রয়েছে। যেটি ডেঙ্গু মশা খেয়ে ফেলে। গাপ্পি মাছও মশা নিধনে ব্যবহার করতে হবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী রোগীদের ডেথ রিভিউ হচ্ছে। আমার এখানে ডেঙ্গুর জিনোম সিকুয়েন্সিং নিয়ে কাজ চলছে । আমরা খুব দ্রুতই তা জানাতে পারব। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে কোনো কোনো রোগীর রেনাল ফেইলর, হেপাটো ফেইলর হচ্ছে। এসব ব্যাপারে আমরা কাজ করছি।

ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউ উপাচার্য বলেন, আমরা ডেঙ্গুর ভ্যাকসিন নিয়ে ভাইরোলজিস্ট, ইমিউনোলজিস্ট নিয়ে কমিটি করে দিয়েছি। যখনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যদি কোন ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়, সেটি নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী এনে দেবেন। প্রতিবছর তাপমাত্রা ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ডেঙ্গুও বৃদ্ধি পাবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি রোধে বৃক্ষরোপণ করতে হবে।

সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডেঙ্গু মোকাবিলা করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ডেঙ্গু মোকাবিলায় সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে সংযুক্ত করতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে অংশগ্রহণ করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ছাত্রদের যার যার বাড়ি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব দিতে হবে। ওয়ার্ড কমিশনারকে তার এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য বিভিন্ন এনজিও, রাজনৈতিক সংগঠন, ব্যক্তিবর্গ ও স্কুলের শিক্ষক, ছাত্রদের নিয়ে কাজ করতে হবে। এতে এ সমস্যা থেকে অনেক পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। স্কুল-কলেজ, বিভিন্ন এনজিও আছে তারা কাজ করলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসবে।

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউর ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো আবুল কালাম আজাদ এবং প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদের ডিন ও পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আতিকুল হক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বিএমএর সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব ডা. আসরাফি আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ- উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ. এস. এম মাকসুদ কামাল, নিপসনের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম সারোয়ার, বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আফজালুন্নেসা প্রমুখ।

আলোচনা সভায় বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় সম্পর্কে বলেন এবং নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন। অনুষ্ঠান শেষে তারা শাহবাগ এলাকায় অধ্যাপক শারফুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ করেন।