তারেক জিয়ার অনুসারীদের উচ্চ আদালতে রিট; পূর্বাঞ্চল রেলের স্ক্র্যাপ বিক্রয়ের আন্তর্জাতিক টেন্ডার  স্থগিত !

প্রকাশঃ ২০২০-০৮-১৮ - ১৬:১২

বিপ্লব দে, চট্টগ্রাম: পূর্বাঞ্চল রেলের টেন্ডার-লিজ-নিয়োগ এখনো তারেক জিয়ার অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে। পূর্বাঞ্চল রেলের সরঞ্জাম বিভাগের ব্যবহার অযোগ্য স্টিল ( স্ক্র্যাপ ) মালামাল নিলামে বিক্রয়ের আন্তর্জাতিক টেন্ডার স্থগিত চেয়ে রিট করেছেন বিএনপি-জামাত শাসনামলের হাওয়া ভবনের সিন্ডিকেটের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায় বিএনপি-জামাত সরকারের শাসনামলে হাওয়া ভবনের সদস্যরাই নিয়ন্ত্রণ করতেন রেলের টেন্ডার, ইজারা ও নিয়োগ বাণিজ্য। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে রেলওয়ে ভবন।

লন্ডনে পলাতক বিএনপি’র সহ-সভাপতি তারেক জিয়া ও তার বন্ধু সাজাপ্রাপ্ত আসামি গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঠিকাদার ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেলের সকল প্রকার টেন্ডার, ইজারা ও নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছে  এখনো।

ইতিপূর্বে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তারেক জিয়ার হাওয়া ভবনের সদস্যরা রেলে অগ্নিসংযোগ ও সরকার বিরোধী কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন ঐ তারেক জিয়ার আজ্ঞাবহ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিকরা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে একটি বিশাল কিশোর গ্যাং। কিশোর গ্যাং সদস্যদের মাদকের টাকা-পয়সার যোগান দেয় উক্ত ঠিকাদার ও কর্মকর্তা – কর্মচারী।

বর্তমান সরকারের কিছু সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে সরকার বিরোধী কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিকরা রেল মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-সচিব ও ডিজিকে ম্যানেজ করে সমগ্র রেলের টেন্ডার- নিয়োগ-লিজ তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।

তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি পূর্বাঞ্চল রেলের সরঞ্জাম বিভাগের ব্যবহার অযোগ্য স্টিল ( স্ক্র্যাপ ) মালামাল নিলামে বিক্রয়ের আন্তর্জাতিক টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি নং ২০১৯-২০/০২  তারিখ ১৭/১২/২০১৯ প্রকাশের পর তারেক জিয়ার অনুসারী ঠিকাদারগণ উক্ত দরপত্রের মালামাল নাম মাত্র মূল্যে ক্রয় করা জন্য গত ০৯-০২-২০২০ তারিখে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন নং ১৭০০/২০২০ দায়ের করে উক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্রের টেন্ডার স্থগিত করেছেন।

পূর্বাঞ্চল রেলের সরঞ্জাম বিভাগের ব্যবহার অযোগ্য স্টিল ( স্ক্র্যাপ ) মালামাল নিলামে বিক্রয়ের আন্তর্জাতিক টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি নং ২০১৯-২০/০২ পর্যালোচনা করে জানা যায় উল্লেখিত দরপত্রের দলিল (সিডিউল) ক্রয় করার জন্য(১) জেলা প্রশাসক, চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সাধারণ শাখা কক্ষ নং ১৩৮. (২) পুলিশ কমিশনার কার্যালয়, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ, দামপাড়া, চট্টগ্রাম. (৩) প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক, বাংলাদেশ রেলওয়ে পাহাড়তলী চট্টগ্রাম.(৪) সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক(পূর্ব ), বাংলাদেশ রেলওয়ে, সিআরবি, চট্টগ্রাম. (৫ )  সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পশ্চিম), বাংলাদেশ রেলওয়ে, রাজশাহী.(৬) এসিওএস, ঢাকা, বাংলাদেশ রেলওয়ে, কমলাপুর, ঢাকা কার্যালয় হতে সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট সময়ে উল্লেখিত স্থানে দরপত্র দাখিল করিতে হইবে।দরপত্র দাতাদের উপস্থিতিতে উক্ত দরপত্র খোলা হবে মর্মে রেলওয়ে আইন ও বিধি মোতাবেক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলেও সরকার বিরোধী ঠিকাদার চক্রটি রেলওয়ে আইনকে চ্যালেঞ্জ করে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেন।

এই আন্তর্জাতিক টেন্ডার স্থগিত হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ে ঠিকাদারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে সূত্রে জানা যায় জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে রেলওয়ে ডিজি উক্ত আন্তর্জাতিক টেন্ডার রেলওয়ে বিধি-বিধান অনুযায়ী পুনরায় টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার নির্দেশনা প্রদান করিলেও সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব ) বাংলাদেশ রেলওয়ে, সিআরবি, চট্টগ্রাম উত্তর টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক টিকাদার।

বাংলাদেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রেলওয়ে নিজস্ব আইনকে কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চ্যালেঞ্জ করতে পারে কিনা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জজ আদালতের বিজ্ঞ আইনজীবী এডভোকেট প্রকৃতির প্রতিবেদককে জানান দেশের যেকোনো সংক্ষুব্ধ নাগরিক তার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য যে কোনো সময় উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন তবে এক্ষেত্রে মহামান্য হাইকোর্টের বিজ্ঞ বিচারক কেন আন্তর্জাতিক টেন্ডার স্থগিতের আদেশ দিয়েছেন তাহা নথি পর্যালোচনা না করে মতামত প্রদান করা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেলাল হোসেন সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব ) বাংলাদেশ রেলওয়ে, সিআরবি, চট্টগ্রাম,  প্রতিবেদক বলেন ডিজি মহোদয় নির্দেশনা দিলেও মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। এক প্রশ্নের জবাবে বেলাল হোসেন প্রতিবেদককে জানান উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বসে বিষয় কি সুরাহা করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করে।