তালা : অতিবৃষ্টি ও নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙনের ফলে স্থায়ী বন্যার কবলে তালা উপজেলার প্রাণীকুলের খাদ্য সংকট চরমে পৌছে গেছে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, যথাযথ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা, ফসলি জমি, মৎস্য ঘের তলিয়ে, জলমহল ইজারা নিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও নেটপাটা দিয়ে পানি নিষ্কাশনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, সার্বিক পরিস্থিতিতে ধুলিস্যাৎ হয়ে গেছে কৃষকের জীবন,পানিতে ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্ন।
যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, প্রাণে বাঁচাতে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে দীর্ঘ প্রতীক্ষা। পানিবাহিত রোগ প্রকোপ আকার ধারণ করেছে। সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেই যথাযথ ঔষধ সরবরাহ তার উপরে প্রকৃতি যেন বেঁকে বসেছে।নানাবিধ সংকটে এই জনপদের মানুষ। মধ্যবিত্ত দের চাপা কান্না, গরিবের আর্তনাদ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বাজার মনিটরিং নেই, ইচ্ছে খুশিতে চলছে সিন্ডিকেট দিয়ে ব্যাবসা। নাজেহাল সাধারণ মানুষ।
তালা উপজেলা সরকারি তথ্য মতে ২৫৫৩ হেক্টর আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে, বেসরকারিভাবে কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে ধান পচে গলে গেছে। শতকরা ৮৫ভাগ ধানের জমিতে পানি। উপজেলা সকল সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে খাদ্যশস্য উৎপাদন তলানিতে উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের খাবার সংকট অবধারিত। এই উপরে আবার সরকারী হিসাবে উপজেলার মিঠা পানি ৬৪৫০ হেক্টর এবং লোনা পানি ১২৯৫ হেক্টর মৎস ঘেরের মধ্যে ৯০৫ হেক্টর আয়তন, ১০২৭টি ঘের তলিয়ে গেছে। বেসরকারিভাবে কয়েক হাজার হেক্টর মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে তছনছ হয়ে গেছে। কোথাও কোন মৎস্য ঘের অবশিষ্ট নেই। খাদ্য সংকট সহ অর্থনীতি সংকটে এই জনপদের মানুষ।
মানব খাদ্যের উপসর্গগুলো থেকে গোখাদ্য উৎপাদন হয়, যখন মানব খাদ্যে উৎপাদন বিনষ্ট সেখানে গোখাদ্য উৎপাদনের সম্ভাবনা নেই। আর গোখাদ্য উৎপাদন না হওয়ার ফলে খামারীরা রয়েছে উভয় সংকটে, পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে খামারে থাকা গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদন কেন্দ্র তালার জেয়ালা ঘোষপাড়া সেখানে খামারে থাকা গাভীদের যথাযথ খাবার সরবরাহ না করতে পারার দুধ উৎপাদনে ব্যাহত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণের কারনে নানা রোগে আক্রান্ত যাচ্ছে গাভী। তবে সরকারী ভাবে কিছু ছাগল খামারে বিভিন্ন ভ্যাকসিন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে তবে সেটি যথাযথ নয়।
সরকারি প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের তথ্যমতে, উপজেলায় গাভীর খামার ৩৭৬৫টি, এড়ে গরু মোটাতাজাকরণ ২৫৯০টি, ছাগলের খামার ২১৯টি, ভেড়ার খামার ১৯টি, শুকরের খামার ১০টি, মুরগির খামার ৬২৩টি এর মধ্যে লেয়ার ৭৬ ব্রয়লার ১৭৬ সোনালী ৫৫২, হাঁসের খামার ১৭টি, কোয়েল ০৭, টার্কি ৫টি আছে।
সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের কোন তথ্য তালা উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে নেই বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাছুম বিল্লাহ। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে মতে ২৫-৩০% খামারির ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার প্রায় সকল পানিতে তলিয়ে গেছে। আর এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সকল খামারিরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে খামার করে এখন কিস্তির টাকা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। কি ভাবে কোন উপায়ে বাঁচাতে পারে এই জনপদের মানুষ তার কোন যৌক্তিক সমাধান নেই, সরকারী ভাবে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি এখনো। উপজেলা একাধিক মানুষ মনে করেন সরকারী ভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনের স্থায়ী সমাধান করা সহ পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা প্রদান করা অতিব জরুরী। অন্যথায় এর বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।