সেলিম হায়দার, তালা : সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ১২ নং খলিলনগনর ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এলজিএসপি-৩,টিআর ও কাবিখার বরাদ্দকৃত টাকা আতœসাৎ থেকে শুরু করে ব্যাপক দূর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে বলা হয়েছে,খলিলনগর ইউপি চেয়ারম্যান এস.এম আজিজুর রহমান বিভিন্ন সময় সরকারি বরাদ্দকৃত বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আতœসাৎ করে চলেছেন সেই প্রথম থেকেই। পরিষদের রক্ষণশীল সম্পদ ম্যানুয়ালের বিপরীতে কর্মকান্ড পরিচালনা করায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্থবির হয়ে পড়েছে খলিলনগরের উন্নয়ন কার্যক্রম।
অভিযোগে প্রকাশ,এলজিএসপি বাস্তবায়নে কোন প্রকার দরপত্র আহ্বান না করেই কাগজে-কলমে আরএফকিউ অনুসরণ করে ভুয়া ঠিকাদার নিয়োগ দেখানো হয়। গত প্রায় ৩ বছরে এলজিএসপি-৩ এর বরাদ্দকৃত অর্থে মানব কল্যাণ ও পিছিয়ে পড়া নারীদের ক্ষমতায়নে নামমাত্র প্রকল্প দেখিয়ে সমুদয় অর্থ আতœসাৎ করেছেন। প্রকল্পের আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ঐ প্রকল্পের আওতায় ইউনিয়নের ১১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭০৯ জন ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে হটপট বিতরণের জন্য ১,৩৪,১১০ টাকার প্রকল্প গ্রহন ও উত্তোলন করা হলেও কোন বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে হটপট বিতরণ হয়নি। সূত্র জানায়,উক্ত ১১ টি বিদ্যালয়ে মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ৬১১ জন হলেও ৯৮ জনের অতিরিক্ত তালিকা প্রস্তুত করে সমুদয় টাকা আতœসাৎ করা হয়েছে। একই অর্থ বছরে প্রকল্পের আওতায় পিজিবি বরাদ্দে ইউনিয়নটিতে দর্জি প্রশিক্ষণ ও ২০ জন দুস্থ্য নারীদেও মাঝে বিনামূল্যে সেলাই মেশিন বিতরনে ১,৯৯,০০০ টাকা বরাদ্দ ও অর্থ উত্তোলন করার হয়। এতে কাগুজে প্রশিক্ষণ প্রদান হলেও মেশিন বিতরণ করা হয়েছে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের নিকটাতœীয়দের মধ্যে। সূত্র জানায়,তালিকাভূক্তদের মধ্যে মাছিয়াড়ার মোঃ ওয়াজেদ আলীর মেয়ে রেহেনা সুলতানা স্থানীয় মহিলা ওয়ার্ড সদস্য শিরিনা সুলতানার আপন ছোট বোন,নলতার অদুদ সরদারের মেয়ে বৃষ্টি খাতুন ইউপি চেয়ারম্যানের আপন চাচাতো বোন,হরিশ চন্দ্রকাটির নাজমুল সরদারের স্ত্রী মুসলিমা খাতুন স্থানীয় ইউপি সদস্য মোকাম আলী সরদারের আপন পুত্রবধূ। এভাবে তালিকাভূক্ত অন্যান্যরা কোন কোন জনপ্রতিনিধির নিকটাতœীয় কিংবা বিশেষ সুবিধা নিয়ে তাদেও তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।
২০১৭-১৮ অর্থ বছরে পিজিবি বরাদ্দে ইটের সোলিং রাস্তা নির্মাণে ২০,৩৭,৮৯৫ টাকা বরাদ্দ হলেও অধিকাংশ রাস্তা নির্মাণে নি¤œ মাণের ইট ও বালির পরিমাণ কম দেওয়া হয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে টিআর ও কাবিখা বরাদ্দের অধিকাংশ প্রকল্প বিভিন্ন নামে খলিলনগর হাসপাতাল ও নলতা স্লুইচ গেট পর্যন্ত খাল পুণ:খনন ও সংষ্কার প্রকল্প গ্রহন করা হলেও প্রকল্পের মাটি স্থানীয় ইট ভাটা মালিক কল্যাণ বসুর কাছে বিক্রি করা হয়। তিনি মৌসুম জুড়ে ঐ মাটি ভাটায় নিয়ে ইট পুড়িয়েছেন। ফলে বরাদ্দের সমুদয় টাকা চেয়ারম্যান উত্তোলন করে আতœসাৎ করেছেন। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে কোন ওয়ার্ড সভা,ওয়ার্ড কমিটি বা স্কিম সুপার ভিশন কমিটি গঠন করা হয়নি। তবে কাগজ কলমে দেখানো হয়েছে। পরিষদের রাজস্ব আয়ের বিভিন্ন টাকা ভূয়া ভাউচারে আতœসাৎ করায় তা যথাযথ নিয়মে ব্যাংকে লেনদেন হয়না।
অভিযোগ রয়েছে,ইউনিয়নের বিভিন্ন ভাতা ভোগীদের কাছ থেকে তালিকাভূক্তির আগেই ৪/৫ হাজার টাকা জনপ্রতি উৎকোচ গ্রহন করা হয়। ইউডিসিসি স্থায়ী কমিটির সভা ও পরিকল্পনা সভাও করা হয়না বলে অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এছাড়া গ্রাম পুলিশদের জন্য গ্রাম আদালতের বিভিন্ন নোটিশজারীর পারিশ্রমিকের অর্থ সরকার প্রদত্ত। পরিষদের অধিকাংশ কার্যক্রম ২/৪ জন ইউপি সদস্য ছাড়া অন্যান্যদের অবহিত কিংবা মতামত নেয়া হয়না। অতি দরিদ্রর জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচীর আওতায় ৩/১ তালিকা শ্রমিকগণ কাজে অনুপস্থিত থাকলেও তাদের উপস্থিতি দেখিয়ে কৌশলে ঐটাকা আতœসাৎ করা হয়।
এতদসংক্রান্ত বিষয়ে ইউপি সদস্যদের কেউ প্রতিবাদ কিংবা জানতে চাইলে তাদেরকে এলজিএসপি’র অডিট টিম, ও ডিষ্ট্রিক ফেসিলিটেটর (ডিএফ) সহ সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে উৎকোচ দিতে হয় বলে জানানো হলেও মূলত সমুদয় টাকা তিনি আতœসাৎ করে থাকেন।
এব্যাপারে খলিলনগর ইউপি সচিব জাহাঙ্গীর আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে এ প্রতিনিধিকে বলেন,ছাত্র-ছাত্রীদের হটপট কেনা হয়েছে তবে বিতরণ হয়নি। এছাড়া দর্জি প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন বিতরণে তালিকা প্রস্তুত করণে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করতে বলে ফোন কেটে দেন। বিধায় তার কাছ থেকে অন্যান্য প্রকল্পের অর্থ আতœসাতের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি।
এব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান রাজুর সাথে যোযোগ করতে তার ব্যবহৃত ফোনে বারংবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।