তালা প্রতিনিধি : টানা বৃষ্টিপাত ও পাশ্ববর্তী এলাকার পানি তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের ১৭টি গ্রামই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন ৩হাজারের অধিক পরিবার। বিপাকে পড়েছে দিনমজুর ও খাদ্য সংকটে প্রাণীকূল। তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. রাসেল জানান, রবিবার বিকালে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, এই ইউনিয়নটি ১৭টি গ্রাম নিয়ে গঠিত। আর পানিতে প্লাবিত হয়েছে ১৭টি গ্রামই পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। কৃষকদের ফসল পানির নিচে থাকায় পচন ধরতে শুরু করেছে। বিশেষ করে টানা বর্ষণের ফলে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের মধ্যে বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিরাশুনী, লাউতাড়া, পাঁচরোখি, শুভাষিনী, মদনপুর, সুমজদিপুর গ্রাম। এছাড়া অন্যান্য গ্রামগুলোতে উঠানে পানি উঠেছে। সকল এলাকার ধানও সবজি পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে উপজেলা সদরের সাথে। কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ও বিদ্যুৎতের মিটার ছিঁড়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষের জীবন খুব সংকটময় পরিস্থিতিতে দিনাতিপাত করছে। অবধারিত খাদ্য সংকটে আগামী তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন।
এদিকে ধারাবাহিক বৃষ্টিতে বে সরকারি হিসাবে প্রায় ১হাজার মৎস্য ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে তাতে ৩-৪ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘের মালিকরা। এমনকি ইউনিয়ন জুড়ে প্রায় শতাধিক পোল্ট্রি খামার পানিতে তলিয়ে অর্ধ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন খামারী শিরিনা বেগমসহ একাধিক খামারী।
অপরদিকে মসজিদ, মন্দির গীর্জাসহ সকল ধরনের একাধিক ধর্মীয় উপাসনালয়ে পানি উঠেছে। এবছর সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব থমকে যাবে ।কয়েকটি পুঁজো মন্ডপ পানিতে তলিয়ে গেছে, অন্যান্য সকল মন্ডপে যাতায়াত করা যাচ্ছে না সকল রাস্তায় মাজা পানি তলিয়ে গেছে। ব্যাহত হচ্ছে ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান।
পানিবন্দি হয়েছে তেরছি, কলাপোতা, হাতবাস, শিরাশুনী লাউতাড়া পাঁচরোখি এলাকায় সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়, পানি উঠেছে বারান্দায়। ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসার মধ্যে ধলবাড়িয়া, শিরাশুনী, দেওয়ানীপাড়া দাখিল মাদ্রাসায় বারান্দায় পানি উঠেছে। বন্যায় পানিবন্দি হয়েছে শুভাষিনী ডিগ্রী কলেজ। সার্বিক পরিস্থিতিতে তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। চরম বিপাকে পড়েছেন এই জনপদের মানুষ। এলাকাজুড়ে পানি থাকায় স্যানেটারি ব্যবস্থায় পড়েছে বিরুপ প্রভাব। এতেকরে সুপ্রিয় পানির অভাবের পাশাপাশি, চর্ম রোগ, পানিবাহিত রোগ, ডায়রিয়া জনিত রোগে বেড়ে গেছে।
পাঁচরোখি গ্রামের আলো মতি দাশ, প্রকাশ দাশ, গনেষ দাশ, আলাউদ্দিন গাজী, মদনপুর গ্রামের, আব্দুল খালেক, সুমজদিপুর গ্রামের সুবাসী দাশ, শিরাশুনী গ্রামের মোমিন শেখ, শামিমা আক্তার, সালমা বেগম, আসমা বেগম, আলমগীর হোসেন, আছিয়া বেগম জানান তাঁরা পানিবন্দির স্থায়ী সমাধান চাই। তাড়াতাড়ি জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানান। পানিবন্দিরা জানান আমরা ত্রাণ চাই না, আমারা চাই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা।
টানা বৃষ্টিতে এমন পরিস্থিতির মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের জন্য সাধারণত যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার ভদ্রা নদী দিয়ে পানি সরবরাহ করতো। বর্তমানে ঐ এলাকার নননিয়া সুইস গেট পলিমাটি তে উঁচু হয়ে পানি সরতে পারছে না। খাল ও নদীর তলদেশ বর্তমানে নননিয়া খালের সুইস গেটের উপর চার পাঁচ ফুট পানি।
তিনি আরো বলেন, টানা বৃষ্টিপাতে এই ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশন হয়নি। এখানকার পানি সরবরাহের জন্য পলিমাটি অপসারণ না করলে যৌক্তিক সমাধান হবে না। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বেসরকারী কয়েকটি সংগঠনের সাথে এ বিষয় সমাধানের জন্য আলোচনা অব্যাহত রেখেছেন।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মো. রাসেল জানান, রবিবার বিকালে তেঁতুলিয়া ইউনিয়ন পরিদর্শন করা হয়েছে। পানি সরবরাহের প্রতিবন্ধকতা থাকলে দ্রুত সেগুলো অপসারণ করা হবে। পার্শ্ববর্তী জেলা যশোরের কেশবপুর থেকে তালা উপজেলার পানি আসার কারণে জলাবদ্ধতা বৃদ্ধি পেয়েছে।