সেলিম হায়দার : তালা সেনেট্যারী কর্মকর্তার চরম অবহেলা ও অনিয়মে গত দেড় বছরেও ফেরেনি স্বাস্থ্য সেবার চিত্র। হেটেল-রেস্তোরা,বেকারী থেকে শুরু করে মাংশের দোকানগুলোর অবস্থা দেখলে সহজেই অনুমান করা যায় সেনেট্যারী কর্তা কতটা কর্তব্যপরায়ন। হোটেল-রেস্তোরা গুলোর সামনের সারাক্ষণ বিরাজ করে স্যাত-সেঁতে পরিবেশ। ড্রেন-ডোবার মশা-মাছি উড়ে পড়ছে খাদ্যে। মিষ্টি ও বেকারী গুলোর অবস্থা আরো খারাপ প্রায় প্রতিটি খাবারেই ব্যবহার হচ্ছে বিষাক্ত রং। মাংসের দোকানের কোন গবাদি পশুরই হয়না স্বাস্থ্য পরীক্ষা। শুধু মাসোহারাতেই সবকিছু হালাল হয় তালার সেনেট্যারী দপ্তর।
অভিযোগে জানাগেছে যে, সাতক্ষীরার তালা উপজেলা সেনেট্যারী ইন্সপেক্টর শাহানাজ আক্তার গত প্রায় দেড় বছর পূর্বে তালায় যোগদানের পর থেকেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নেমে এসেছে এমন হ-য-র-ব অবস্থা। তালা উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন ও একটি প্রশাসনিক থানাসহ দু’টি থানার বৃহৎ এলাকা জুড়ে একজন ইন্সপেক্টর দায়িত্ব পালন করেন এখানে। সূত্র জানায়,উপজেলা এলাকায় ছোট-বড় মিলিয়ে শতাধিক হাট ও বাজার রয়েছে। যার হোটেল-রেস্তোরাগুলোর অবস্থা এতটাই নাজুক যে,কোথাও ভাল ভাবে বসে খাবার উপায় নেই। আর তাদের রন্ধনশালার অবস্থা আরো খারাপ। সারাক্ষণ সেখানে বিরাজ করে স্যাত-সেঁতে পরিবেশ। বিভিন্ন মাংসের দোকানগলোর অবস্থা আরো খারাপ। কোন দোকানের কোন গবাদি পশু জবাইয়ের পূর্বে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়না। এই সুযোগে কসাই বা দোকানিরা ক্রেতা সাধারণকে নিয়মিত রুগ্ন গবাদি পশুর মাংশ খাওয়াচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মাংস সংশ্লিষ্টরা জানান,সেনেট্যারী কর্মকর্তা মহিলা হওয়ায় নিয়মিত তাদের দোকানে আসতে পারেননা। তবে তাকে নিয়মিত মাসোহারা পৌছে দেয়া হয়। বসে নেই বেকারী গুলোও। সরকার স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাদ্যে সকল প্রকার রং নিষিদ্ধ করলেও তালার কোন বেকারী এ পর্যন্ত কোন নির্দেশনা মানছেননা। মূলত ইন্সপেক্টরের অবহেলা ও দায়িত্বহীনতাই এর জন্য দায়ী বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
সুত্র জানায়,তালা উপজেলা চিংড়ি উৎপাদনের অন্যতম আঁধার হলেও এখানে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তার পোষ্টিং নেই। তাই ঐ সেক্টরের কাজগুলিও তার তদারকির কথা। সেনেট্যারী কর্মকর্তা হিসেবে প্রসিকিউটর হয়ে গত দেড় বছরে এখন পর্যন্ত তিনি কোন ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতে পারেনি। ফলে অপরাধিরাও এক প্রকার অবাধে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অপকর্ম।
জানাগেছে তালা উপজেলায় রয়েছে বহুল প্রচলিত একাধিক বেকারী ও সিমাই তৈরীর কারখানা। যার কোনটিরই বিএসটিআই’র অনুমতি নেই। তাই খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণে বহুলাংশে দায়িত্ব বর্তায় তার উপর কিন্তু তিনি অদ্যবধি তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নিতে পারেননি।
সূত্র জানায়,সেনেট্যারী কর্মকর্তা শাহানাজ আক্তারের বাড়ি কুষ্টিয়ায়। সাতক্ষীরা সদরে বাসা ভাড়া নিয়েই থাকেন তিনি। প্রতি দিন সাতক্ষীরা থেকে এসে মাঠ পর্যায়ে কাজ না করে নিজেকে মাসোহারার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন তিনি। এব্যাপারে তার সাথে কথা হলে তিনি আমার সংবাদের তালা উপজেলা প্রতিনিধিকে জানান,তিনি দোকানে দোকানে মাসোহারা নয় তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা রিপোর্ট ও লাইসেন্স নবায়ন করতে নির্দিষ্ট পরিমাণের টাকা নিয়ে থাকেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের তার বদলীর জন্য দোয়া করতে বলেন। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। কেননা,লাইসেন্স বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা রিপোর্ট নবায়ন করতে হয় বছরে এক বার। আর তিনি প্রতিটি এলাকায় যান মাসে একবার। এলাকাবাসীর প্রশ্ন,তিনি প্রতি মাসে কোন লাইসেন্স নবায়ন করতে নিয়মিত টাকা নিয়ে থাকেন?
এদিকে মাঠ পর্যায়ে খাদ্য’র মাণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ তদারকি না থাকায় ক্রেতা সাধারণ বুঝে কিংবা না বুঝে প্রতিনিয়তই খাচ্ছেন ভেজাল ও নোংরা খাদ্যদ্রব্য। এতে করে তারা প্রতিনিয়ত পেটের পীড়াসহ বিভিন্ন খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনে এলাকাবাসী সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।