তালা প্রতিনিধি : সামাজিক ও নির্বাচনী বিরোধের জের ধরে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উক্ত ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ইউপি সদস্যবৃন্দ। এছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন অপপ্রচারের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে ইউনিয়নের সাধারণ মানুষও একাত্মতা প্রকাশ করে অপপ্রচারের জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন।
তালা সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ আব্দুর রাজ্জাক, মীর শামছুজ্জোহা আকবর কল্লোল, অরুন কুমার ঘোষ, আসাদুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী নিকারী, রেহেনা বেগমসহ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সম্প্রতি এলাকায় ত্রাণের তালিকা ও চাল বিতরণ নিয়ে একটি মহল নানা অপপ্রচার চালিয়ে জনপ্রিয় চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেনের সুনাম ক্ষুন্ন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ত্রাণের চাল রক্ষিত আছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে শনিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরের পর তালা থানা পুলিশ সদর ইউনিয়নের জেয়ালা নলতা গ্রামে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর বাড়িতে তল্লাশি চালায়। কিন্তু সেখানে কোন কিছু না পেয়ে পুলিশ ফিরে আসে। এ ঘটনায় সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে চেয়ারম্যান-মেম্বরসহ তাদের।
ইউনিয়ন পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে এলাকার দরিদ্র, অসহায় ও কর্মহীন প্রায় ১ হাজার মানুষকে বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে রবিবার (১৯ এপ্রিল) পর্যন্ত ট্যাগ অফিসারের উপস্থিতিতে ৫ দফায় প্রাপ্ত প্রত্যেকের ১০ কেজি করে ৭ হাজার ৯০০ কেজি (৭.৯০০ মেট্রিক টন) চাল ৭৯০ জন অসহায় ও দুস্থ নারী-পুরুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। দলমত নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিটি ও ইউপি সদস্যগণের সমন্বয়ে স্বচ্ছ তালিকার ভিত্তিতে উক্ত চাল বিতরণ করা হয়। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ও যুবলীগের পক্ষ থেকে আরও দুইশ’ অসহায় মানুষকে চালসহ বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হয়।
জেয়ালা নলতা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শরিফুল ইসলাম ও স্থানীয় যুবলীগ কর্মী মোঃ রুহুল আমীন, আসাদুল ইসলাম ও আক্তার হোসেন নিকারী জানান, একটি ষড়যন্ত্রকারী ও কুচক্রী মহলের ভূয়া অভিযোগে পুলিশ তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালায়। কোন কিছু উদ্ধার না করলেও এ অভিযানে ইউপি চেয়ারম্যান ও তাদের সামজিকভাবে হেয় করা হয়েছে। এজন্য প্রশাসনের কাছে তারা উক্ত ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করে তাদেরকে আটক করে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।
এদিকে উক্ত ঘটনায় শাহাবুদ্দীন বিশ্বাস, বাবু খাঁ, আবু বক্কার, লুৎফর রহমান, আনিছুর রহমান, পাচু দাস, পুষ্পরানী, আল আমিন সরদার, কামরুল ইসলাম, লিটন হোসেন, মোরশেদ নিকারী, খালেক নিকারী, ভানু বিবিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শত শত মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার সাথে তালিকা প্রস্তুত করে চাল বিতরণ করা হচ্ছে। কোথাও ত্রাণ নিয়ে কোন বিক্ষোভ হয়নি। অথচ একটি অনলাইনে মিথ্যাচার করে লেখা হয়েছে আলাদীপুর গ্রামে নাকি ত্রাণের জন্য বিক্ষোভ হয়েছে। গত ইউপি নির্বাচনে পরাজিত একটি গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানান ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। এটা উক্ত ষড়যন্ত্রেরই অংশ বলে তাদের দাবী।
তারা আরো বলেন, এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তারা।
এদিকে আলাদীপুর-জাতপুর-ডাংগানলতা ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ হাফিজুর রহমান শিকদার জানান, আলাদীপুর গ্রামে ত্রাণের জন্য কেউ বিক্ষোভ করিনি। তাছাড়া তিনি অনলাইন ‘জাগো নিউজ’কে কোন ধরণের সাক্ষাৎকার দেননি বলে জানান।
তালা উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি সরদার জাকির হোসেন বলেন, একটি কুচক্রীমহল ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হয়ে নানামুখী ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেছে। তারা আমাকে হয়রানি করতে একের পর এক ভুয়া ভিত্তিহীন ও কল্পকাহিনী রটাচ্ছে। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটে জয়লাভ করার পর থেকে এলাকার একটি চিহ্নিত অপরাধী ও কুচক্রীমহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। তিনি আরও বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে তালা সদর ইউনিয়নের ৫ থেকে ৬ হাজার দরিদ্র, অসহায় ও কর্মহীন মানুষের প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। সরকারের বরাদ্দকৃত চাল দলমত নির্বিশেষে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে তাদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
এছাড়া ত্রাণের দাবিতে আলাদীপুর এলাকায় কোন বিক্ষোভ হয়নি এবং সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য কারও কাছে কোন সাক্ষাৎকার দেননি দাবী করে ইউপি চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন বলেন, কারা এসব ষড়যন্ত্র করছেন আর কারা শেল্টার দিচ্ছেন সেটি সবার জানা। সময় মতো তাদের মুঁখোশ উন্মোচন হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ সকল বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করে থাকে। এ সকল বিষয়ে তারাও অবগত আছেন। তিনি কর্মী-সমর্থক ও ইউনিয়নবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, এসব বিষয়ে বিভ্রান্ত না হয়ে ধৈর্য্য ধরুন, ষড়যন্ত্র করে কারো জনপ্রিয়তা নষ্ট করা যায় না।
তালা সদর ইউনিয়নের ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সট্রাক্টর বৈদ্যনাথ সরকার বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে জিআরের চাল বিতরণ করা হচ্ছে।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মেহেদী রাসেল বলেন, ত্রাণের চাল লুকিয়ে রাখার গোপন খবর পেয়ে জেয়ালা নলতা গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু সেখানে কোন চাল পাওয়া যায়নি।
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, ত্রাণের চাল অসহায়দের না দিয়ে তা লুকিয়ে রাখার খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ পাঠানো হলেও চালের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। উক্ত খবরটি সঠিক ছিল না বলে জানান তিনি।