তালিকাভুক্ত মহিলা মাদক বিক্রেতাসহ আটক-২০

প্রকাশঃ ২০১৯-০১-০৯ - ১০:৩৭

নতুন আইনে পৃষ্টপোষকদেরও সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান

কামরুল হোসেন মনি : জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় মাদক বিরোধী অভিযানে নতুন আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ২০ মাদক বিক্রেতা আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। গেল বছরের ২৭ ডিসেম্বর থেকে মাদকের নতুন আইন কার্যকর হয়েছে। এ আইনে ইয়াবা পাচার মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- ছাড়াও এই প্রথম পৃষ্টপোষকদেরও সর্বোচ্চ শাস্তির বিধার রাখা হয়েছে। ফলে পৃষ্টপোষকতারা আতংকে মধ্যে রয়েছেন।
এর আগে গত ২০১৮ সালে জেলা মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর মাদকবিরোধী অভিযানে ১২৮ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছেন। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা হয় ১১০টি। এ সময়ের মধ্যে আদালতের মাধ্যমে ১৫ মাদক ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ এর নতুন আইনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারী) পর্যন্ত ২০ মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাজা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেন। উক্ত সংস্থার পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামানে তত্ত্বাবধানে ‘ক’ ও ‘খ’ সার্কেল এবং গোয়েন্দা শাখার পৃথক অভিযান পরিচালনা করেন।
সূত্র মতে, মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারি) জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় মাদক বিরোধী অভিযানে তালিকাভুক্ত মহিলা মাদক ব্যবসায়ী ৪জনকে আটক করেছেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে ইয়াবা ও গাজা উদ্ধার করা হয়। আটককৃতরা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী পারভীন বেগম (৪০), মোঃ সেলিম হোসেন (৪৫), মোঃ ছাব্বির ইসলাম (২০) এবং ফয়জুল হক হোসেন রাব্বী (২২)। মঙ্গলবার (৮ জানুয়ারী) সংস্থার ‘ক’ ও ‘খ’ সার্কেল পৃথক অভিযান চালিয়ে নগরীতে পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করেন।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় সূত্র মতে, সংস্থার উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে ‘ক’ ও ‘খ’ সার্কেলের পরিদর্শক পৃথক দুইটি নগরীর খুলনাথানাধীনও খালিশপুর থানাধী মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় ‘খ’ সার্কেলের পরিদর্শক মোঃ সাইফুর রহমান রানার নেতৃত্বে একটি টিম গোপন সংবাদে ভিত্তিতে নগরীর খালিশপুর থানাধীন কাশিপুর এলাকায় অভিযান চালান। অভিযানে লেদু মিয়ার স্ত্রী তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী পারভীন বেগমকে ৫শ’ গ্রাম গাজাসহ আটক করেন। অপরদিকে ‘ক’ সার্কেলের পরিদর্শক হাওলাদার মোঃ সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি টিম নগরীর দোলখোলা শীতলবাড়ি এলাকায় অভিযান চালান। এ সময় মৃত আঃ জলিলের পুত্র মোঃ সেলিমকে ৫ ইয়াবা এবং একই এলাকার থেকে মোঃ আব্দুস সামাদের পুত্র মোঃ ছাব্বির ইসলামকে ১০ পিস ইয়াবাসহ আটক করেন। অপর অভিযানে নগরীর টিবি ক্রস রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোঃ তোতা মিয়ার পুত্র ফয়জুল্লাহ হক হোসেন রাব্বীকে ১১০ পিস ইয়াবাসহ আটক করেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানায় আটক মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
এর আগে ‘ক’ সার্কেলের পরিদর্শক হাওলাদার মোঃ সিরাজুল ইসলাম মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারী) সকালে নগরীর টুটপাড়া এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় মোঃ শফিকুল ইসলাম মনুর পুত্র আঃ ছামাদ হিরাকে ৫ লিটার ডিনোচার্ট স্প্রীটসহ আটক করেন। একই দিনে লবনচরা থানাধীন অভিযান চালিয়ে মৃত শ্রীপদ দাসের স্ত্রী বিপুল দাসকে গাজাসহ আটক করেন। এর আগে ‘ক’ সার্কেল পরিদর্শক আরও ৪ মাদক ব্যবসায়ীকে মাদকসহ আটক করেন। এছাড়া ‘খ’ সার্কেলের পরিদর্শক মোঃ সাইফুর রহমার রানার অভিযানে ৭ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেন। যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী মিলু ফকিরকে আটক করেন। এছাড়া গোয়েন্দা শাখার পরিদর্শক পারভিন আক্তারের নেতৃত্বে অভিযানে ২ জন মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেন।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন -২০১৮ অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য নতুন আইনের মধ্যে ইয়াবার সব উপাদান ‘ক’ শ্রেনীর মাদক হিসেবে চিহিৃত করে সর্বোচ্চ মৃত্যুদন্ড পর্যন্ত শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। নতুন এই আইনে মাদক কারবারীদের অবৈধ সম্পদের কারণে মানি লন্ডারিং মামলা দায়ের ও পৃষ্টপোষকদেরও সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। মাদক কারবারে জড়িত ব্যক্তিদের অর্থ, সম্পদ ও ব্যাকের হিসাব ও আয়কর খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে আইনের ৩৩ ধারায় উল্লেখ করা আছে। ৪০ ধারায় কোন ব্যক্তি মাদক সংক্রান্ত অপরাধে অর্থ বিনিয়োগ করলে, অর্থ সরবরাহ করলে, সহায়তা করলে বা পৃষ্টপোষতা করলে তিনি দন্ডে মুখোমুখি হবেন। যা আগে এই আইন ছিলো না।
জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় এর উপ-পরিচালক মোঃ রাশেদুজ্জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, নতুন আইনে মাদকের পৃষ্ঠপোষকতারাও দন্ডের বিধান রেখে আইন পাশ হওয়ায় তারাও এখন থেকে আতংকের মধ্যে থাকবে। এই আইন পাশ হওয়ার কারণে তারা এবার থেকে ছাড় পাবে না।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারী থেকে ১৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত গোয়েন্দা ও দুই সার্কেলে মিলে মোট অভিযান পরিচালনা করেন ৮৯৩টি। এ সময়ের মধ্যে নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয় ১২৮টি। এছাড়া মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন ১১০টি। বিভিন্ন মাদকসহ মোট ১২৮ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময়ের মধ্যে আদালতে বিচারকার্য শেষ হয়ে ১৫ জন মাদক ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়। অভিযানে সময় বিভিন্ন ধরনের মাদক জব্দ করা হয়েছে।