ইউনিক প্রতিবেদক:
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, খুলনা সিটি মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেক দেশের বর্তমান মেয়রদের মধ্যে অন্যতম প্রবীণ ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি। কর্মবীর এ মেয়রের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। তাঁর নেতৃত্বে খুলনা মহানগরীতে উন্নয়নের যে ধারা সূচিত হয়েছে তা অব্যাহত থাকলে অচিরেই খুলনা একটি সমৃদ্ধ নগরীতে পরিণত হবে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, এ্যাসফল্ট প্লান্ট, ই-গভর্ণ্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা এবং রাজস্ব আদায় কার্যক্রম বিষয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন থেকে আগত প্রতিনিধি দলের সাথে শনিবার দুপুরে নগর ভবনের শহীদ আলতাফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কেসিসি পরিবারের এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় সিলেট সিটি মেয়র এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি আরো বলেন, নাগরিকদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সেবা সিটি কর্পোরেশন থেকে দেয়া হয়। তবে উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও সেবাদানের ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সমন্বয় না থাকায় অনেক সময় অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। উভয় সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে পারস্পারিক পরামর্শ ও অভিজ্ঞতা আদান-প্রদান করা গেলে উদ্ভুত সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন খুলনা সিটি মেয়র আলহাজ¦ তালুকদার আব্দুল খালেক।
সভাপতির বক্তৃতায় কেসিসি মেয়র আগত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে বলেন, সিলেট একটি সমৃদ্ধ নগরী। সে তুলনায় খুলনা ছিল অনেকটাই অবহেলিত। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে মূলত: এ অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত হয়। তিনি মোংলা বন্দর, মোংলা ইপিজেড, খান জাহান আলী সেতু, খুলনা মোংলা রেল লাইন ও রেল সেতুসহ খুলনা মহানগরীর উন্নয়নে প্রায় ১৪’শ কোটি টাকার বরাদ্দের বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, এ সকল প্রকল্পে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং এ অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন ঘটেছে। উভয় সিটি কর্পোরেশনের অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সহযোগিতা আদান-প্রদান সম্ভব হলে উভয় শহরের নাগরিকবৃন্দ উপকৃত হবেন বলেন সিটি মেয়র আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উল্লেখ্য, সিলেট সিটি মেয়রের নেতৃত্বে ৪৬ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ৩ দিনের এক্সচেঞ্জ ভিজিটে বর্তমানে খুলনা সফর করছেন। সভায় সিলেট সিটি মেয়র কেসিসি মেয়রসহ কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের সিলেট ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানান।
সভার শুরুতে কেসিসি মেয়র সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও মেয়র পত্নী শ্যামা হক চৌধুরী’কে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান এবং উভয় মেয়র পরস্পর পরস্পরকে শুভেচ্ছা স্মারক হিসেবে ক্রেস্ট উপহার দেন। এছাড়া আগত মেয়র প্যানেলের সদস্য, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাদের কেসিসি’র মেয়র প্যানেলের সদস্য, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাগণ ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান। সভায় কেসিসি’র বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
কেসিসি’র সচিব মো: আজমুল হক এর সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় নিজ নিজ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্যানেলের সদস্য এ্যাড. রোকসানা বেগম শাহনাজ, কাউন্সিলর মো: আজম খান ও এস এম শওকত আমীন তৌহিদ, কেসিসি’র মেয়র প্যানেলের সদস্য এ্যাড. মেমরী সুফিয়া রহমান শুনু ও কাউন্সিলর শেখ হাফিজুর রহমান হাফিজ বক্তৃতা করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন কেসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম। কেসিসি’র মেয়র প্যানেলের সদস্য মো: আলী আকবর টিপুসহ উভয় সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ও কর্মকর্তাগণ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
সাতক্ষীরায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ বোর্ড বাতিল!
ইউনিক প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা :
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খেজুরডাঙা আর কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের বোর্ড বাতিল করা হয়েছে। সদর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের তদারকিতে শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় দক্ষিণ কাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪০ লাখ টাকা লেনদেনের বিনিময়ে এ পাতানো নিয়োগ বোর্ড হচ্ছিল। খবর পেয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এ নিয়োগ বোর্ড বাতিল করে দিয়েছেন।
শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দক্ষিণ কাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশ কিছু অচেনা লোকের আনা-গোনা দেখে স্থানীয়রা বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান। খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে ওই বিদ্যালয়ের একটি শ্রেণীকক্ষে দুই নারীসহ ১১জনকে বসে থাকতে দেখা যায়। তাদের কাছে পরীক্ষা সংক্রান্ত প্রবেশপত্র ছিল। তবে তারা কোন বিষয়ে পরীক্ষা দেবেন তা নিয়ে তাৎক্ষণিক কেউ মুখ খোলেননি।
সেখানকার দায়িত্বপালনকারী জনৈক হাবিবুর রহমান নিজেকে খেজুরডাঙা আর কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক উল্লেখ করে বলেন, এখানে একটা মিটিং হচ্ছে। কিসের মিটিং হচ্ছে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।
একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান তার বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইদ্রিস আলীর কাছে ফোন ধরিয়ে দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ইদ্রিস আলী বলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে একজনের স্থায়ীকরণ, একজন প্রহরী ও একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর নিয়োগ পরীক্ষা সেখানে অনুষ্ঠিত হবে।
একপর্যায়ে বিষয়টি প্রকাশ হয়ে গেলে রাগতস্বরে প্রধান শিক্ষক বলেন, তিনি আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মোস্তাকিমের চাচাত ভাই। তার বোন ফারজানা আক্তার কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাই সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান নিয়োগ বোর্ডের সবাইকে ম্যানেজ করেই আগে থেকে প্রহরী পদে ও পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে তাহমিদ ও জাহিদকে নিশ্চয়তা দিয়েই বিশেষ প্রক্রিয়ায় কোরাম পূর্ণ করে এ পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। নিয়োগের ব্যাপারে স্থানীয় কাফেলা ও একটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় বলে জানান তিনি। দক্ষিণ কাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তিনি সেখানে পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ পরিবেশন না করার জন্য তিনি অনুরোধ করেন।
আগে থেকে ঠিক করে রাখা সহকারী প্রধান শিক্ষক গোপীনাথপুরের দেবেন গাইন বলেন, তিনি ১৯৯৫ সালের পহেলা জানুয়ারি থেকে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে এমপিওভুক্ত। তার বেসিক বেতন ২২ হাজার টাকা। বর্তমানে তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করলেও অনুমোদিত না হওয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষকের বেতন অনুযায়ী বেসিক ২৩ হাজার টাকা বেতন পাচ্ছেন না। তাই সবার সহযোগিতায় তিনি ওই পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুমোদন পাওয়ার জন্য এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন। তবে কোরাম পূরণের জন্য প্রধান শিক্ষকের বোন কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারজানা আক্তার ও বাঁশদহা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তৃপ্তি রানীকে আনা হয়েছে।
খেজুরডাঙা গ্রামের কণ্ঠরাম সরকারের ছেলে প্রবেশ সরকার বলেন, তাকে প্রহরী পদে নিয়োগ দেওয়ার জন্য দাবিকৃত আট লাখ টাকার পরিবর্তে ছয় লাখ টাকা নিলেও চাকরির বয়স নেই দেখিয়ে তাকে পরীক্ষার কার্ড দেওয়া হয়নি।
খেজুরডাঙা গ্রামের আব্দুর রহমানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান সাজু বলেন, পাঁচ মাস আগে পাতানো নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে একজন প্রহরী নেওয়ার চেষ্টা করলে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন। মামলার কারণে ওই সময় পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। এখন প্রধান শিক্ষক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে সমঝোতা করে তিনজনের কাছ থেকে কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকা নিয়ে পাতানো নিয়োগ বোর্ডের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছেন বলে তিনি জেনেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, এধরনের পাতানো নিয়োগ বোর্ডের আয়োজনে বেশ দক্ষ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান। শুক্রবারের এ নিয়োগে তিনি ৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
সাতক্ষীরা সদরের খেজুরডাঙা আর কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি লাবসা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম সাংবাদিকদের বলেন, পরীক্ষা হওয়ার কথা তিনি জানেন। তবে কোথায় হচ্ছে এটা তাকে অবহিত করা হয়নি। এতে অর্থনৈতিক লেনদেন এর অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
দক্ষিণ কাটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির নবনির্বাচিত সভাপতি জুনায়েত হোসেন বায়রন বলেন, তাদের বিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা হচ্ছে এমনটি তাকে কেউ অবহিত করেনি।
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষাক কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান বলেন, নিয়ম মেনেই নিয়োগ বোর্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। কেন গোপনে বোর্ড বসানো হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রথমে তিনি বলেন, সভাপতি আসতে দেরি করাতে বোর্ড বাতিল হয়েছে। সভাপতি বোর্ড বসানোর স্থান সম্পর্কে জানেন না, এমন কথা জানানো হলে তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তবে ৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেছেন।
সাতক্ষীরা জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি তাকে অবহিত করা হয়নি। তবে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক পাতানো নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।