খুলনা : খুলনার একসময়ের খরস্রোতা আঠারোবাকি নদী এখন দখলদারদের কবলে। অবৈধ ভাবে দখল হচ্ছে রূপসা উপজেলার রামনগর-রহিমনগর এলাকার আঠারোবেকি নদীর পশ্চিম তীর। এ নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ থাকলেও দখলদারদের ভয়ে মুখ খুলছেন না তারা।
জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তন ফান্ডের আওতায় ২০১৩ সালের ২৩ মে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনার রূপসা উপজেলায় ২টি এবং দাকোপ উপজেলায় একটি কাজ বাস্তবায়নের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে রূপসা উপজেলার রামনগর ও রহিমনগর এলাকার আঠারোবেকি নদীর তীর সংলগ্ন এলাকা সংরক্ষণে এক কিলোমিটার সংস্কার ও ব্লক স্থাপনের প্রকল্পটি রয়েছে। ২০১৫ সালে প্রকল্পের কাজ শুর করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২০১৬ সালের জুন মাসে যা শেষ হয়।
ব্লক স্থাপনের পর থেকেই ধীরে ধীরে পলি জমতে শুরু করে আঠারোবাকির মেঝের খেয়া ঘাটের পশ্চিম তীরে পলিপড়ে নদীর তীর জাগতে সেখানে লোলুপ দৃষ্টিপড়ে দখলদারদের। ২০১৮ সালে নদীর পাড় দখলকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরবর্তীতে পরিকল্পিত ভাবে শুরু হয় পাড় দখলের কাজ। প্রথমে মাটি ফেলে পরে ইটের গাথুনি দিয়ে চলছে ভবন নির্মাণ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নদীর পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে ইমারত। কেউ আবার মাটি ভরাট করে খুঁটি গেঁড়ে তুলছেন দোকান। স্থানীয় সূত্র জানায়, রহিমনগরের ফজলু সরদার ও রামনগরের জামাল শেখের নেতৃত্বে চলছে এই দখল উৎসব।
স্থানীয় সূত্র জানায়, নদীর পাড়ের এই জমির মালিক গাজী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকবর আলী। তিনি ১৯৯৫ সালের দিকে জনৈক হিন্দু মহিলার কাছ থেকে জমি ক্রয় করেন। পরে সেখান থেকে ৫০ শতাংশ জমি গাজী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে দান করে। পরবর্তীতে জমি নদীগর্ভে চলে যায়। এখন সেই জমি অবৈধ ভাবে দখল চলছে।
১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ বলে ১৯৫০ সালের স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেনান্সি অ্যাক্ট-এর ৮৬ ধারায় পরিবর্তন এনে বলা হয়-নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া জমিতে মালিক তার সব অধিকার হারাবে। সেটা হবে সরকারের খাস জমি, যা ভূমিহীনদের মধ্যে বিতরণযোগ্য।
এ ব্যাপারে গাজী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজা খানম বলেন, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকবর আলী আনুমানিক প্রায় ৫০ শতাংশ জমি দান করেন। যার একটা বড় অংশ ভাঙ্গনের ফলে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয়ে দান করা জমির সকল কাগজপত্র বিদ্যালয় কতৃপক্ষের কাছে রয়েছে।
এ ব্যাপারে গাজী মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক শেখ মোঃ রহমত উল্লাহ বলেন, বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আকবর আলী দুই দফায় জমি দান করেছেন বিদ্যালয়ে। প্রথম দফায় ৩৪ শতাংশ ও দ্বিতীয় দফায় ৫০ শতাংশ জমি। আমি ১৯৯১ সালে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণ করি। দ্বিতীয় দফায় ৫০ শতাংশ জমি দান করার সময়ে আমিই দায়িত্বে ছিলাম। দ্বিতীয় দফার অধিকাংশ জমিই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
অভিযুক্ত রহিমনগরের ফজলু সরদার বলেন, আমরা নদীর কোন জমি দখল করিনি, যেখানে ভবন নির্মাণ করতেছি, তার কাগজ রয়েছে আমার কাছে। ওটা আমারই জমি।
নৈহাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বুলবুল জানান, সম্প্রতি দখলের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে এ ধরণের দখলের বিরুদ্ধে আমি সবসময় সোচ্চার ছিলাম।
রূপসা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো: সাজ্জাদ হোসেন বলেন, নদীর খাস জমি কারো দখল করার এখতিয়ার নেই। কেউ যদি দখল করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি উল্লেখিত জমির ব্যাপারে বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ নিয়ে আমরা অভিযুক্ত ব্যাক্তিকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আসতে বলেছি। সে যদি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে সক্ষম না হয়, তখন আমরা ব্যবস্খা নেবো।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলি কৃষ্ন পদ দাস বলেন, আমরা তদন্ত করবো। জমির জায়গায় দখলের সত্যতা মিললে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খুলনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) খন্দকার ইয়াসির আরেফিন বলেন, নদীর জমি দখল করে ইমারত নির্মাণ আইনত অপরাধ। এ ধরনের অভিযোগের প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে।