আজগর হোসেন ছাব্বির : কৃষি ভান্ডার খ্যাত দাকোপে এবার ৬৩২০ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষাবাদ হয়েছে। মাঠ জুড়ে শোভা পাচ্ছে তরমুজের গাছ। আগামী ১ মাসের মধ্যে শুরু হবে ফল বিক্রি। নায্য মূল্য পেলে এবার চাষিরা বেশ লাভবান হবে এমনটাই আশা করা হচ্ছে।
গত বছর দাম না পাওয়ায় অধিকাংশ চাষিরা লোকসানের মুখে পড়ে। ফলে এ বছর দাকোপে তরমুজের চাষাবাদ অনেকাংশে কম হয়েছে। অনেকে আবার তরমুজ ছেড়ে ব্রো ধান চাষাবাদ করেছে। উপজেলা কৃষি দপ্তর জানায়, দাকোপে মোট চাষ যোগ্য জমির পরিমান ২০৮৮৩ হেক্টর। লবন পানি অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় উপজেলার শতভাগ জমি আমন চাষের আওতায় আসে। দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক ফলন হিসাবে দাকোপে তরমুজের চাষ ধারবাহিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ গত বছর উপজেলায় ৭৬০৫ হেক্টর জমিতে তরমুজের চাষ হয়েছিল। কিন্তু উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় অধিকাংশ চাষিরা গত বছর পুঁজি ফিরে পায়নি। অনেকের ক্ষেত ছিল অবিক্রি অবস্থায়। যার প্রভাবে এ বছর তরমুজের চাষ কমে গেছে। উপজেলায় ৬৩২০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হয়েছে। অপর দিকে ব্রো ধানের উৎপাদন গত বছর যেখানে ছিল ২১৫ হেক্টর এবার সেখানে বৃদ্ধি পেয়ে ৩৪০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। এ ছাড়া সূর্যমূখী ৩০৮ হেক্টর, ভূট্রা ২৮ এবং গম উৎপাদন হয়েছে ১ হেক্টর জমিতে। কিন্তু এ বছর চাষ মৌসুমে বৃষ্টি না হওয়ায় এবং পানিতে লবনের মাত্রা অনেক বেশী থাকায় ব্রো ধানের অধিকাংশ ক্ষেত মারা গেছে। তবে এখন পর্যন্ত তরমুজের গাছ বেশ ভাল দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ গাছে ফলন এসে গেছে। কোথাও কোথাও ফলন ১ থেকে দেড় কেজি ওজন হয়ে গেছে। উপজেলার রামনগর গ্রামের কৃষক ববিতা রায় বলেন, গত বছর লোকসান হওয়ায় এবার নিজেরা ৭ বিঘা জমিতে তরমুজ লাগিয়েছি। গাছের ফল ১ থেকে ২ কেজি পর্যন্ত এসে গেছে। উৎপাদন খরচ বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকার মত পড়েছে। আশা করছি সঠিক দাম পেলে এবার লাভবান হব। খাটাইল গ্রামের চাষি আলামিন গাজী বলেন, গত বছর লোকসান হওয়ায় এবার ১০ বিঘার স্থলে মাত্র ৩ বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। এবার সেচ পানির খুব সংকট দেখা দিয়েছে। বড় ধরনের কোন ঝুঁকি না থাকলেও চুলচুলি পোকার আক্রমন দেখা যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী স্প্রে করায় সেটা অনেকাংশে কমে এসেছে। তিনি বলেন এবার ৭ বিঘা জমিতে ব্রো ধান করেছিলাম। কিন্তু তার অর্ধেকের বেশী অংশ মারা গেছে। তবে আশা করছি এবার তরমুজে লাভবান হতে পারবো। অনুরুপ সেচ পানির সংকটের কথা বলেছেন অধিকাংশ চাষিরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে,এম মাকসুদুন্নবী বলেছেন গত বছর চাষিরা তরমুজের মূল্য না পাওয়ায় অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিলো। যে কারনে এবার চাষ কিছুটা কম হয়েছে। তবে আশা করছি এ বছর চাষিরা লাভবান হবে। সেচ পানির সংকটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন এই সংকট দূর করতে উপজেলার অভ্যান্তরীন সকল খাল খনন খুবই জরুরী। তবে এ বছর যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা ভাল হওয়ায় বহিরাগত ক্রেতার আগমন বেশী ঘটবে বলে তিনি আশা করছেন।