আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ : দাকোপে উপজেলা পরিষদ অভ্যান্তরের কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনিতে অবস্থিত উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিস ও উপজেলা ভুমি অফিসে গভীর রাতে রহস্যজনক দূর্ধর্ষ চুরি সংগঠিত হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দাকোপ থানা পুলিশ এক নৈশ প্রহরীকে আটক করেছে।
দাকোপ থানার বাউন্ডারী সিমানার লাগোয়া উপজেলা পরিষদ বাউন্ডারীর নিরাপত্তার মধ্যে অবস্থিত সাব রেজিষ্ট্রি অফিস এবং উপজেলা ভ’মি অফিসে রহস্যজনকভাবে দূর্ধর্ষ চুরি সংগঠিত হয়েছে। ঘটনাটি এলাকাবাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। সংশ্লিষ্ট দুটি অফিসের কর্মকর্তারা জানায় গত বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ দিনে যথারীতি অফিস করে তাঁরা তালাবদ্ধ করে রেখে যায়। রবিবার সকালে এসে ওই দুটি অফিসের মুল ফটকসহ অভ্যান্তরীন সকল দরজার তালা ভাঙ্গা দেখা যায়। খোজ নিয়ে দেখা যায় ভুমি অফিসের রেকর্ডরুম বাদে অবশিষ্ঠ ৪ টি রুমের এবং অভ্যান্তরে থাকা ৭ টি ষ্টিলের আলমারী ও টেবিলের সকল ড্রয়ার এবং রেজিষ্ট্রি ৭টি আলমারীসহ ড্রয়ারের তালা ভাঙ্গা আবার কোনটা কাটা পাওয়া গেছে। ধারনা করা হচ্ছে গত শনিবার দিবাগত রাতের কোন এক সময় সংঘবদ্ধ চক্র এই দুঃসাহসিক কাজটি করেছে। উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি পারভিন সুলতানা জানায় তাঁর কক্ষসহ অপর ৩টি কক্ষের তালা ভেঙ্গে ৭টি আলমারী ও টেবিলের ড্রয়ার ভাঙ্গা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আনুমানিক ২/৩ হাজার টাকা ছাড়া ওই অফিসের অন্য কোন মালামাল খোয়া যায়নি বলে তাঁরা ধারনা করছে। অপরদিকে রেজিষ্ট্রি অফিসের সহকারী রবিন দাস জানায়, তাঁদের দপ্তরের ৭টি ষ্টিলের আলমারী এবং টেবিলের ৩টি ড্রয়ার ভাঙ্গা পাওয়া গেছে। তবে কোন মুল্যবান কাগজপত্র খোঁয়া যাওয়ার বিষয়টি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উভয় দপ্তর নিশ্চিত করতে পারেনি। চুরির বিষয়টি রহস্যবৃত্ত হয়ে উঠেছে এ কারনে যে, এত গুলো নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেদ করে চোরেরা সেখানে প্রবেশ করেও মুল্যবান কম্পিউটার ল্যাবটব অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী হাতের নাগালে পেয়েও তাঁরা কেন সেগুলো না নিয়ে মাত্র ২/৩ হাজার টাকা নিয়ে চলে গেল ? তাছাড়া কোন ফাইলপত্র তেমনভাবে অগোছালো পাওয়া গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন না। তাহলে অদৃশ্য কোন কারনে এত ঝুকি নিয়ে চোরচক্রের এই প্রচেষ্টা ? অপরদিকে গত কয়েক বছরের ব্যবধানে দাকোপ অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন এবং চালনা পৌরসভা কেন্দ্রীক নির্মিত হচ্ছে বহু প্রতিষ্ঠান। যে কারনে এ অঞ্চলে জমির দাম কয়েক গুন বেড়ে গেছে। সঙ্গত কারনে দাকোপ সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের মাধ্যমে বর্তমানে নানা কায়দায় স্থানীয় ও বহিরাগতদের মাঝে ব্যাপকহারে জমি হাত বদল হচ্ছে। যে প্রক্রিয়ায় রেজিষ্ট্রি অফিসের অনেকের বিরুদ্ধে ক্ষেত্র বিশেষ বেশ কিছু দূর্নীতি অনিয়মের চিত্র ও প্রকাশ পেয়েছে। গত কিছু দিন পূর্বে ওই অফিস নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর একাধীক কর্মকর্তা কর্মচারী বদলী এবং শাস্থির আওতায় পড়েছিল। আবার এই দপ্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অভ্যান্তরীন দ্বন্দ অনেক সময় প্রকাশ্যে এসেছে। তবে কি চুরি রহস্যের মাঝে ভিতরকার কোন বিষয় আছে এমন গুঞ্জন ও শোনা যাচ্ছে। এ দিকে গতকাল সকালে দাকোপ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ভুমি অফিসের নৈশ প্রহরী মিঠুন চক্রবর্তীকে তাঁদের হেফাজাতে নিয়েছে। এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার ভুমি জানায় শনিবার রাতে ওই নৈশ প্রহরী ভুমি অফিসে না থেকে পাশের ডরমেটারীতে ছিল এমন তথ্য পাওয়া গেছে। অন্যদিকে কোটি কোটি টাকার দলিল এবং মুল্যবান কাগজপত্রের নিরাপত্তায় রেজিষ্ট্রি অফিসে অজ্ঞাত কারনে কোন নৈশ প্রহরী থাকেনা এমন দাবী তাঁদের। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের পক্ষে রুহুলামিন মল্লিক, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের আঃ সামাদ, উপজেলা প্রকৌশলী দপ্তরের রফিকুল ইসলাম, সমাজসেবার শেখ জহুর আলী এবং কৃষি অফিসের পক্ষে তারেক আজিজ নৈশ প্রহরীর দায়িত্বে আছে। কিন্তু খোজ নিয়ে জানা গেছে রুহুলামিন মল্লিক ব্যতিত রাত্রী কালীন ওই কম্পাউন্ডে কাউকে দেখা যায়না। এমনকি মাধ্যমিক শিক্ষার আঃ সামাদ যে নৈশ প্রহরী সেটা পরিষদের অধিকাংশরা জানেইনা। কারন তাঁকে সর্বদা অফিসার লেভেলের কাজে দেখা যায়। এ ব্যাপারে দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন চৌধুরী বলেন, প্রাথমিক অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ১জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। বিষয়টির আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মারুফুল আলম পরিষদ অভ্যান্তরে দুঃসাহসিক এই চুরির ঘটনার বিষয়টি যে কোন ভাবে আইনের আওতায় এনে প্রকৃত রহস্য বের খুঁজে বের করা হবে।