দাকোপে একই বিয়ের ঘটনায় বর-কনে পক্ষকে দুই ধরনের কাবিনের নকল!

প্রকাশঃ ২০১৯-০৪-০৮ - ১৯:২১

আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ : কাজীর কারসাজীতে একই বিয়ের ঘটনায় বর-কনে পক্ষকে দুই ধরনের রেজিস্ট্রি কাবিন মূল্যের নকল সরবরাহ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অবসরে গিয়েও দায়িত্ব পালনের অভিযোগ আলোচীত ওই কাজীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে দাকোপ উপজেলার নলিয়ান এলাকায়।
প্রাপ্ত অভিযোগ ও কাগজপত্রের তথ্য প্রমানে জানা যায়, গত ১৫/০৩/২০১৮ তারিখে দাকোপের কামারখোলা ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামের শহিদুল গাজীর পুত্র মোঃ আব্দুল কুদ্দুস গাজীর সাথে নলিয়ান গ্রামের রফিকুল গাজীর কন্যা সালেহা খাতুনের ২ লাখ ৭০ হাজার টাকার রেজিস্টি কাবিন মূল্যে বিয়ে হয়। কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় বিয়ের কয়েক মাস পর। অভিযোগ মতে ছেলে কুদ্দুস গাজী তার প্রথম স্ত্রীর (তালাকপ্রাপ্ত) সাথে মেবাইলে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পারিবারিক দ্বন্দ সৃষ্টি হয়। যে কারনে বিভিন্ন সময় কুদ্দুস তার স্ত্রীর উপর নির্যাতন চলতে থাকে। ঘটনার এক পর্যায়ে কুদ্দুস পূর্বের শশুরালয়ে গিয়ে প্রথম স্ত্রীর সাথে ঘর-সংসার শুরু করে। কোন উপায়ান্তর না দেখে সালেহা নলিয়ানে তার পিত্রালয়ে চলে আসে। এরপর কয়েকদফা শালিস বৈঠক শেষে উভয় পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় ছেলে পক্ষ রেজিস্টি কাবিনের টাকা পরিশোধের মাধ্যমে এ সংকটের স্থায়ী সমাধান করে নেবে। এ সুযোগে ছেলে পক্ষ মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কাজী মাওলানা ইউসুফ আলী সরদারের নিকট থেকে ৭০ হাজার টাকার রেজিস্টি কাবিনের নকল গ্রহন করে। এ ঘটনা জানাজানি হলে উভয় পক্ষের মাঝে নতুন করে দ্বন্দ সৃষ্টি হয়। উভয় পক্ষের রেজিস্টি কাবিনের কাগজ এ প্রতিবেদকের হাতে পৌছালে দেখা যায়, মেয়ে পক্ষের রেজিস্টি কাবিনের মূল্য ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা, অপারদিকে ছেলে পক্ষের নিকট সরবরাহকৃত রেজিস্টি কাবিন মূল্য মাত্র ৭০ হাজার টাকা। উভয় রেজিস্টি কাবিন সরবরাহের তারিখ ১৫/০৫/২০১৮ হওয়ায় বিষয়টি এক রহস্যের সৃষ্টি করে। ধরা পড়ে যায় কাজীর কারসাজী। বই নং-১, পৃঃ নং-২০, সব ঠিকঠাক থাকলেও ভিন্নতা দেখা দিয়েছে রেজিস্টি কাবিনের মূল্য নিয়ে। অপরদিকে আলোচীত ওই কাজী গত ৩০ জুন ২০১৮ অবসরে যান। কিন্তু কি করে তিনি সেপ্টেম্বর মাসে জনৈক ব্যক্তির রেজিস্টি কাবিন করেন তা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এ ধরনের নানা অভিযোগ রয়েছে। বাল্য বিবাহ রেজিস্টিতেও ওই কাজীর বিরুদ্ধে আছে নানা কারসাজীর অভিযোগ। একই বিয়ের দুই ধরনের রেজিস্টি কাবিন মূল্যের নকল (কাগজ) সরবরাহ করায় ওই কাজীর বিরুদ্ধে সালেহা খাতুনের পিতা রফিকুল গাজী নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। তিনি বলেন ইতিমধ্যে বিষয়টি মিমাংসার জন্য তার প্রবাসী পূত্র ইলিয়াস হোসেন, মৃত কারী আবু তালেব সরদারের ভাই গত ৫ এপ্রিল ২০১৯ সমাধানের জন্য আমার কাছে প্রস্তাব করে। কিন্তু তিনি কোন প্রস্তাবে রাজী না হয়ে বিষয়টি আইনগতভাবে এগিয়ে যাবার জন্য এ প্রতিবেদকের কাছে উল্লেখ করেন। এ অভিযোগ সম্পর্কে কাজী মাওলানা ইউসুফ আলী সরদারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন ৭০ হাজার টাকার কাবিনের নকল আমি দিয়েছি অন্যটা আমার দেওয়া না। এলাকাবাসীর প্রশ্ন ৩০ জুন ২০১৮ কাজীর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তার কাছে কি করে এ রেজিস্টি কাবিনের বই রক্ষিত থাকে ? সম্প্রতি নলিয়ান এলাকার গফ্ফার ফকিরের একটি বিয়ে সংক্রান্ত কারসাজী ধরা পড়েছে। বাল্য বিয়ে এ এলাকার জন্য একটি অভিশাপ হিসেবে দেখা দিয়েছে। স্কুল পড়–য়া ৪ জোড়া কিশোর/কিশোরী’র বিয়েকে কেন্দ্র করে এ ইউনিয়নে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। অভিভাবকরাও রয়েছে দুঃশ্চিন্তার মধ্যে। না জানি কখন কি ঘটে যায়। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, আইন-শৃংখলা বাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন মেয়ের পিতাসহ এলাকাবাসী।