আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ : সমুদ্র উপকূলীয় খুলনার দাকোপ উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র বেড়িবাঁধ নির্মানে জমি অধিগ্রহন বাবদ ক্ষতিপূরণের অথ্য প্রাপ্তির দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবী। সুতারখালী ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার এ টাকা পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা দীর্ঘদিন ধরে পাউবো এবং জেলা প্রশাসকের দপ্তরে ধর্ণা দিয়েও কোন সুফল না পেয়ে জেলা প্রশাসনের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী পরিবার।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানাগেছে, সরকার খুলনাসহ দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের উপকূল বাঁধ রক্ষায় ২০১৫ সালে বড় বাজেটের ৩ হাজার ২৮০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহন করে। এ প্রকল্পের আওতায় খুলনা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী জেলার ৬২৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মান ও সংস্কার করা হবে। এ কাজ বাস্তবায়নে অর্থায়ন করছে বিশ্বব্যাংক এবং তদারিক করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। খুলনার দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ও কামারখোলা ইউনিয়নে পাউবোর ৩২ নং পোল্ডার এবং বানিশান্তা, দাকোপ, বাজুয়া, লাউডোব ও কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নে পাউবোর ৩৩ পোল্ডারে ওই প্রকল্পের আওতায় কাজ চলছে। চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দি ফাস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো অব হিনান ওয়াটার কনজারভেন্সি কাজটি বাস্তবায়ন করছে। বেড়িবাঁধ নির্মানে জমি অধিগ্রহণের দায়িত্ব পড়েছে খুলনা জেলা প্রশাসনের ওপর। নিয়মানুযায়ী জমি অধিগ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসনের সার্ভেয়াররা মাঠ জরিপ করে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রাপ্য অর্থ বুঝে দিবেন। তবে ওই এলাকার প্রায় অর্ধশত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার এখনো পর্যন্ত অর্থ পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্ষতিপূরন পাওয়ার দাবি করে খুলনা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত দাকোপ উপজেলার কালাবগী গ্রামের জাহাঙ্গীর শেখ, অভিযোগে উল্লেখ করা হয় ১৯৮১ সালে তিনি ২ একর ১২ শতক জমি কবলা দলিলমূলে কিনে নেন। বর্তমান জরিপে রেকর্ড করা হয়েছে এবং ওই জমির ম্যাপও তৈরী হয়েছে। বর্তমানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে ও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে ওই জমির মধ্যে ২ বিঘা ১২ শতক জমি অধিগ্রহণ করে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে তিনি এবাবদ কোন ক্ষতিপূরণ পাননি। এ ছাড়া উক্ত জমিতে বিশ্বব্যাংকের লোকজন জোর করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এ কাজে বাঁধা দিলে তারা গ্রামের অসহায় লোকজনদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। একই অভিযোগ করেছেন দাকোপের কালাবগী গ্রামের সোলায়মান হোসেন, আকবর আলী খান, আবুল বাশার গাজীসহ অনেকেই। তারা জানায় গত কয়েক বছরে নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে প্রায় ২ হাজার ফুট ভীতরে চলে এসেছে। আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তিও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য আমাদের নিজস্ব জমি দখল করে নিয়েছে। ওই জমির রের্কড থাকা সত্বেও আমরা ক্ষতিপূরণ পাচ্ছি না। দাকোপ উপজেলার সুতারখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির জানান, সার্ভেয়াররা যখন সার্ভে করেছিলো তখন গোজামিল দিয়ে সার্ভে করেছে। ইউনিয়নে প্রায় ৭০/৮০পরিবার অধিগ্রহণকৃত জমির অর্থ পায়নি। অনেকের ভিটে মাটিও গেছে এই বেড়িবাঁধে। তাদের মাথা গোঁজারও ঠাঁই নেই। টাকা না পেলে তারা পথে বসবে। ওই এলাকার সবিধা বঞ্চিত জমির মালিক এম এ মালেক শেখ বলেন, চরম বৈষম্য করা হয়েছে জমি অধিগ্রহণে একই এলাকার কোন মালিক পেয়েছে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ লাখ টাকা আবার কেউ পেয়েছে ২০ লাখ টাকা। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসী আন্দোলন সংগ্রাম অব্যহত রেখেছে। সম্প্রতি কালাবগী এলাকায় নায্য ক্ষতিপুরনের দাবীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। জমি ক্ষতিপূরণের বিষয় খুলনা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল,এ) মনিরুজ্জামান বলেন, যাদের কাগজপত্র সঠিক রয়েছে তাদেরকে অবশ্যই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। অর্থ পায়নি এ ধরণের কোন অভিযোগ তার কাছে আসিনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন অনেকে রয়েছে যারা দীর্ঘদিন ধরে খাস জমিতে স্থাপনা তৈরী করে বসবাস করে আসছে। এমন কোন পরিবার অর্থ পাবে না। তবে যাদের রেকর্ডিয় সম্পত্তি রয়েছে অথচ অর্থ পাচ্ছে না এমন কেউ হলে তাদের টাকা দেওয়া হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী (৩২নং পোল্ডারের দায়িত্ব) আনোয়ার হোসেন বলেন, জমি অধিগ্রহণের বিষয়টি দেখভাল করেন জেলা প্রশাসন। আমরা অধিগ্রহণ বাবদ ১৭ কোটি টাকা জেলা প্রশাসনের দপ্তরে দিয়ে দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্থদের টাকা দেওয়ার বিষয়টি এখন জেলা প্রশাসনের এখতিয়ার।