দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি : খুলনার দাকোপে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করেই চলে মানুষের জীবন সংগ্রাম। এখানকার মানুষ প্রধান ফসল আমনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু এই ফসলের একটি বৃহৎ অংশ নদী ভাঙন, খরাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে নষ্ট হয়ে থাকে। এ ছাড়া এখানকার নিম্ন আয়ের বেশির ভাগ মানুষ সুন্দরবনে মাছ ও কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তবে দূর্যোগে এলাকায় যে পরিমানে ক্ষতি হয় তা পুষিয়ে ওঠা এ অঞ্চলের মানুষের পক্ষে অসম্ভব। দূর্যোগ নিয়ে কাজ করা সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন এনজিও ও সংস্থার সুযোগ সুবিধা পায় খুবই কম পরিবার। তা ছাড়া ইউনিয়ন পরিষদে যে বাজেট আসে তা খুবই সামান্য। এ বাজেট দিয়ে এখানকার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা অসম্ভব বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীর অভিযোগ।
সরেজমিনে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ভৌগলিক অবস্থানের কারনে পৃথক তিনটি দ্বীপের সমন্বয় বঙ্গোপসাগর তথা সুন্দরবন উপকূলীয় এই উপজেলা ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এখানে প্রায় সারা বছর ধরে চলে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন, ঘূর্ণিঝড়সহ ছোট বড় নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগ। আর স্থানীয় বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত এ সব দূর্যোগের কবলে পড়ে তাদের সহায় সম্পত্তি হারিয়ে দিন দিন নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। অনেকে সর্বস্ব হারিয়ে পাশ^বর্তী দেশে চলেও গেছেন। এখনও পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য ভাঙনের কারনে ছোট্ট হয়ে আসছে জনবসতীর মানচিত্র। আবার গ্রীষ্মের শুরু থেকে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট লেগে থাকে। ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে লড়াই করেই এ অঞ্চলের মানুষের বেঁচে থাকতে হয়।
কালাবগি এলাকার জেলে ছালাম মোল্যা জানান, ঘূর্ণিঝড় আইলায় তার সহায় সম্পত্তি যা ছিলো সব শেষ হয়ে গেছে। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তার উপর ঝুপড়ি ঘরে বাস করেন। আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনে মাছ কাঁকড়া ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু কাঁকড়া ও মাছের প্রজনন মৌসুমে বনে মোট পাাঁচ মাস পাশ পারমিট বন্দো থাকে। এসময়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে চাল দেয় তা দিয়ে সংসার চলে না। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধাহারে অনাহারে খুবিই কষ্টে দিন কাটে। এ ছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের প্রধান আমন ফসলও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে নষ্ট হয়ে থাকে। তা ছাড়া এনজিওর সুযোগ সুবিধা পায় খুবই কম পরিবার। সরকার সুন্দরবন থেকে বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করলেও উপকূলীয় এলাকার মানুষের উন্নয়নে সরকারের বিশেষ বরাদ্দ তেমন একটা চোখে পড়ে না তার। অবিলম্বে এ অঞ্চলে বিশেষ করে ক্লাইমেট রেজিলেন্স ও সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করার দাবি জানান তিনি। তার মত একাধিক ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ একই অভিমত ব্যক্ত করেন।
সিএসও সদস্য দান কুমারী বলেন, সিএনআরএস ইভলভ প্রকল্পের উদ্দ্যোগে আমরা সিএসও ও সিবিও প্রতিনিধিগণ জনগণসহ স্থানীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রনয়ণে এখন অংশ গ্রহন করে থাকি। কিন্তু আমাদের চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। সরকারের উচিৎ আমাদের দুঃখের কথা চিন্তা করে এই এলাকার জন্য বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে হেলভেটাস বাংলাদেশের সহায়তায় এ উপজেলায় জলবায়ু ও জেন্ডার ভিত্তিক কার্যক্রম পরিচালনাসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীদের নিয়ে কাজ করা বে-সরকারি উন্নয়ন সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসার্চ স্টাডিজ (সিএনআরএস) ইভলভ্ প্রকল্পের প্রজেক্ট কোওর্ডিনেটর মিলন চৌধুরী জানান, তারা এ উপজেলায় জেন্ডার উন্নয়ন ও জলবায়ু মোকাবিলায় স্থানীয়ভাবে পিছিয়ে পড়া জনগনের কন্ঠস্বর বৃদ্ধি ও ক্ষমতায়ন বৃদ্ধিতে ওর্য়াড পর্যায় থেকে উপজেলা পর্যন্ত সিবিও ও সিএসও নেটওর্য়াকের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। ফলে স্থানীয় পরিকল্পনা থেকে অন্তভূক্তি মূলক বাজেট প্রনয়নে তারা সক্রিয় অংশগ্রহনের মাধ্যমে জলবায়ু মোকাবিলায় ভুমিকা রাখছেন।
বানিশান্ত ইউপি চেয়ারম্যান সুদেব কুমার রায় বলেন, আমরা স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে এখন বার্ষিক পরিকলপনা ও বাজেট প্রনয়ণ করছি। যেখানে জলবায়ু, জেন্ডার ও সামাজিক অন্তভূক্তির বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে আসছি। ফলে বাজেটে বরাদ্দের পরিমানও বেড়েছে, যদিও কর ও সেবা মেলার মত কার্যক্রমের ফলে ইফপির নিজস্ব আয় বেড়েছে কিন্ত বাজেট বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। ফলে সরকারকে সুন্দরবন বেষ্টিত এ এলাকার জন্য বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানা তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমত হোসেন জানান, সুন্দরবন সংলগ্ন এই উপজেলার মানুষ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকে। এ ছাড়া দূর্যোগে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন রাস্তাঘাট, ওয়াপদা বেড়িবাঁধসহ প্রধান ফসল আমনের প্রতি বছরই ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকে। পাশা পাশি দূর্যোগের ফলে নারী, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধি ব্যাক্তিরা বেশি ঝুকির মধ্যে থাকে। তাই সকল সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাগুলো তাদের কর্মকান্ডে সমাজের এই সমস্ত পিছিয়ে পড়া মানুষদের অগ্রাধিকার বিবেচনায় উপজেলা প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে।