দাকোপে ধারাবাহিক ধর্ষনের ঘটনায় প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা

প্রকাশঃ ২০১৮-০৩-১২ - ১১:৩০

মাদকের ভয়াবহতায় বেড়ে গেছে কিশোর অপরাধ : পুলিশী তৎপরতা প্রশ্নবিদ্ধ

আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ : দাকোপে নারী শিশু নির্যাতন ও ধর্যনের ঘটনা যেন অপ্রতিরোধ্য ভাবে বেড়েই চলেছে। উঠতি বয়সি কিশোর থেকে মধ্য বয়সিরা জড়িয়ে পড়ছেন এমন অনৈতিক কাজে। একই সাথে মাদকের ভয়াবহতায় কিশোর অপরাধের সংখ্যাবৃদ্ধি পাওয়ায় সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। সর্বশেষ শিক্ষকের হাতে চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রী যৌন নীপিড়নের ঘটনায় সচেতন মহল প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
গত বছরের শেষ দিকে নারী শিশু নির্যাতন ও ধর্যনের ঘটনা যেখানে শেষ হয়েছিলো এ বছর সেখান থেকেই শুরু হয়েছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। ইভটিজিং ও প্রেমের নামে প্রতারনার শিকার হয়ে কলেজ ছাত্রী জয়ী মন্ডল, বর্না রায়, আতœহত্যায় বাধ্য হয়। দুটি ঘটনায় স্ব স্ব পরিবারের পক্ষ থেকে ৩ জনকে আসামী করে আতœহত্যা প্ররোচনার অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়। জয়ী আতœহত্যার পর সমগ্র দাকোপে গন আন্দোলন সৃষ্টি হয়। অভিযুক্তরা আদালতে আতœসমর্পন করে কিছুদিন হাজত বাসের পর জামিনে মুক্ত হয়। নতুন বছরের শুরুতে উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নে প্রেমে প্রতারনার শিকার হয়ে কলেজ ছাত্রী নাজমা আতœহত্যা করে। দরিদ্র পরিবারের ওই ছাত্রী ধনীক শ্রেনীর শাসন ব্যবস্থায় ন্যায় বিচার না পাওয়ার আশংকার কথা উল্লেখসহ আতœহত্যার জন্য প্রেমিক দেবাশিষ বাছাড়কে দায়ী করে নিজ হাতে পৃথক দু’টি পত্র লিখে যায়। এ ঘটনায় নাজমার পিতা আতœহত্যার প্রোরচনার অভিযোগ এনে দেবাশিষ বাছাড়সহ অভিযুক্তদের নামে দাকোপ থানায় মামলা দায়ের করে। ঘটনার সপ্তাহ খানেকের মধ্যে দেবাশিষ প্রকাশ্যে ফিরে আশায় বাদীপক্ষ মামলার ভবিষাত নিয়ে শংকিত। এরপর উপজেলার তিলডাঙ্গা ইউনিয়নে ঐতিহ্যবাহী কালী পূজায় হাজার হাজার লোক সমাগমের মাঝে ঘটে নানা অশ্লীল ঘটনা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ধারাবাহিক ঘটনার অংশ হিসেবে গত ২ রা মার্চ রাত সাড়ে ন’টার দিকে স্বজনদের সাথে বাজুয়ায় মহানামযজ্ঞ মাঠে আসা এক স্কুল ছাত্রী গন ধর্ষনের শিকার হয়। বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী ঘটনাস্থল থেকে এক যুবককে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ওই ঘটনায় ছাত্রীর পিতা গৌরাঙ্গ সরকার বাদী হয়ে দাকোপ থানায় মামলা দায়ের করে। এ ঘটনার একদিন পর উপজেলার গড়খালী আধারমানিক গ্রামে বিনয় সরকার (৪৮) নামে এক ব্যক্তি প্রতিবেশী তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্রীকে ধর্ষন করে বলে জানা যায়। মারাতœক অসুস্থ ওই ছাত্রীকে প্রথমে দাকোপ হাসপাতাল পরে খুলনা মেডিকেল কলেজের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সার্ভিস সেন্টারে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সর্বশেষ ঘটনাটি স্থানীয় পর্যায়ে ধামাচাপা দেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চলছে বলে জানা যায়। এ ঘটনার রেশ না কাটতেই গত ৮ মার্চ গুনারী গ্রামের ভোলানাথ মন্ডল তার শিশু কন্যা চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্রীকে যৌন নীপিড়ন করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে গুনারী শীতল চন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শশাংক সানা (৩৮) এর নামে নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করে। যা দাকোপ থানার মামলা নং ৪। জানা যায় স্কুল ছুটির পর অভিযুক্ত শিক্ষক ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়। এক পর্যায়ে ছাত্রীটির কান্নাকাটিতে তাকে ভয় দেখিয়ে ছেড়ে দেয়। পরে ছাত্রীটি তার পরিবারের কাছে ঘটনা জানায়। অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিশ গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরন করেছে। দাকোপের ধারাবাহিক এই নারী শিশু ধর্ষনের ঘটনায় প্রশাসনের তৎপরতাকে করেছে প্রশ্নবিদ্ধ। এর সাথে যোগ হয়েছে মাদকের ভয়াবহতা। যে কারনে অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে কিশোর অপরাধ। সম্প্রতি উপজেলার নলিয়ান কালাবগী এলাকায় ঘটে গেছে সিরিয়াল চুরির ঘটনা। ওই ঘটনায় সন্দেহভাজনদের তালিকা প্রদানসহ ভুক্তভোগীদের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু অদ্যবধী কোন মালামাল উর্দ্ধার বা আসামী গ্রেফতারে পুলিশ তেমন কোন সফলতা দেখাতে পারেনি। উপজেলা সদরের মোহাম্মাদ আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চালনা কেসি পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ মোড়ে উঠতি বয়সি বখাটেদের সার্বক্ষনিক আড্ডা অভিবাবক মহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। সামাজিক অবক্ষয়ের চলমান এ সকল ঘটনায় সব মহল উদ্বিগ্ন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উপজেলার সচেতন মহল।