যে কোন মুহুর্তে প্লাবিত হওয়ার আশংকা
দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি : অব্যাহত ভয়াবহ নদী ভাঙনে খুলনার দাকোপে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিনটি পোল্ডারের মধ্যে দুইটি পোল্ডারের ওয়াপদা বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ধারাবাহিক ভাঙনের কারনে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে এ সব নদী পাড়ের জনবসতীর মানচিত্র। অতি দ্রুত ঐ ঝঁকিপূর্ণ স্থানগুলি মেরামত না করলে যে কোন মুহুর্তে বেড়িবাঁধ নদী গর্ভে বিলিন হতে পারে। আর এতে চলতি মৌসুমে আমন ধানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকায় ভাঙনের কবলে পড়া এলাকার হাজারো লোকজন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, ভৌগলিক অবস্থানের কারনে পৃথক তিনটি দ্বীপের সমন্বয় গঠিত উপজেলা। এখানে সারা বছর ধরে চলে ভয়াবহ নদী ভাঙন। প্রতিনিয়ত এখানকার স্থানীয় বাসিনন্দারা ভাঙনের কবলে পড়ে তাদের সহায় সম্পত্তি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। শধুমাত্র নদী ভাঙনের কারনে সর্বস্ব হারিয়ে অনেক পরিবার ভিন্ন দেশে চলেও গেছেন। উপকূলিয় এই উপজেলার চারপাশ জুড়ে থাকা অসংখ্য নদ-নদীর মধ্যে রাক্ষুসী শিবসা, ঢাকী, চুনকুড়ি, পশুর, ঝপঝপিয়া ও মাঙ্গা নদীর ভাঙন এখনও পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩টি পোল্ডারের মধ্যে ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারে বিশ্বব্যাংক থেকে নেওয়া ১৫০ কোটি টাকা ঋণে নির্মিত হয়েছে টেকসই নতুন ওয়াপদা বেড়িবাঁধ। চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন। কিন্তু ৩২ নম্বর পোল্ডারের কালাবগি আমিনুল সানার বাড়ির সমানে, গুনারী কালিবাড়ি লঞ্চঘাট সংলগ্ন, সুতারখালী তেলির কোনা বাজারের সামনে ও নলিয়ান কাছারি বাড়ির সামনে ওয়াপদা বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশে ভাঙ্গন এবং ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে বিশ্বব্যাংক থেকে নেওয়া ১৫০ কোটি টাকা ঋণে নির্মিত বেড়িবাঁধ পোল্ডারবাসির কোনো কাজেই আসেনি। বরং মেগা প্রকল্পের নামে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হয়েছে বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন। এছাড়া ৩১ নম্বর পোল্ডারের লক্ষ্মীখোলা পিচের রাস্তার মাথায়, পানখালী জাবেরের খেয়াঘাট সংলগ্ন, পানখালী গিরিধার বাড়ির সামনে, খোনা মোল্যা বাড়ির সামনে, বটবুনিয়া বাজার সংলগ্ন, কামনিবাসিয়া ঝালবুনিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধ মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
নলিয়ান এলাকার রুহুল কুদ্দুস মোল্যা জানান, সঠিক পরিকল্পনার অভাবে টেকসই ওয়াপদা বেড়িবাঁধ নির্মান হচ্ছে না। যে কারণে সদ্য নির্মিত বেড়িবাঁধের কালাবগি, গুনারী কালিবাড়িসহ কয়েকটি স্থানে আবারও ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। তাছাড়া ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভাঙনের কবলে পড়লে স্থানীয় কিছু জনপ্রতিনিধি, টিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটে। এ জন্য দায়সারা মেরামত কাজেও অনেক বিলম্ব হয়। অতিদ্রুত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মেরামত না করলে যে কোন সময়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হতে পারে। আর এতে চলতি আমন মৌসুমে ধানের চারা রোপন ব্যাহতসহ এলাকার লোকজনের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে তিনি মনে করেন।
সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির বলেন, ৩২ নম্বর পোল্ডারে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টেকসই নতুন ওয়াপদা বেড়িবাঁধ নির্মান করেছেন। কিন্তু বেড়িবাঁধের কয়কটি স্থানে আবারও ভয়াবহ ভাঙনের কারণে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। বর্তমান সে সব স্থানে মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু অত্যান্ত ধির গতিতে কাজ চলায় এলাকার লোকজনের মাঝে আশংকা বাড়ছে।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী গোপাল কুমার দত্ত জানান, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে বেড়িবাঁধ মেরামত কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।