আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ, খুলনাঃ খুলনার উপকুলিয় দাকোপ উপজেলায় চলতি আমন মৌসমে তীব্র বীজ সংকটের কারনে কৃষকরা দিশেহারা। নিরুপায় হয়ে তাঁরা সরকার নির্ধারীত মূল্য অপেক্ষা ২/৩ গুন বেশী দামেও বীজের চাহিদা পুরন করতে পারছেনা। উপজেলা ও জেলা কৃষি বিভাগ নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন, ফলে বীজের অভাবে একটি বৃহৎ এলাকার জমি অনাবাদী থেকে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।
চলতি আমন মৌসুমের শুরু থেকে দাকোপের বিভিন্ন এলাকায় চাষিরা চাহিদা অনুযায়ী বীজ না পেয়ে হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে। সরকার প্রতি বস্তা বীজ ৩৫০ টাকা মূল্য নির্ধারন করে দেয়। কিন্তু এবার নানা কারনে বীজের সংকট দেখা দেওয়ায় ডিলাররা ৮ শ’ থেকে ১ হাজার টাকায় সেই বীজ বিক্রি করেছে। কিন্তু বর্তমানে অধিক মূল্যেও বাজারে বীজ মিলছেনা। বিক্ষুদ্ধ কৃষকরা বীজের দাবীতে দাকোপের বাজুয়াসহ কয়েকটি এলাকায় ইতিমধ্যে মানববন্ধসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছে। দাকোপ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্র জানায়, সমগ্র উপজেলায় ১৯ হাজার ৫০ হেক্টর জমি এবার আমন চাষের আওতায় আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। সে হিসেবে ৭ শ’ টন বীজের চাহিদা আছে। কিন্তু বীজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান উপজেলার নির্ধারীত ২০ জন ডিলারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত মাত্র ৫১ টন বীজ সরবরাহ করেছে। লবনাক্ত আবহাওয়ার কারনে দাকোপ অঞ্চলে ২৩ ধানের চাহিদা তুলনামুলক অনেক বেশী, কিন্তু টাকা হলেও এখন সেটি মিলছেনা। উপজেলার কালাবগী নলিয়ান অঞ্চলের কৃষক রফিজ উদ্দিন খান, মাহাবুব হোসেন, নিরান বৈদ্য জানায়, বীজের জন্য আমরা মরিয়া হয়ে সকলের কাছে গিয়েছি। কোন সমাধান নেই। পাশ্ববর্তী অঞ্চলে খোজ নিয়েও বীজ মিলছেনা। এখন কিভাবে জমি চাষ করবো এ নিয়ে আমরা দিশেহারা। তাঁদের আশংকা এবার একটি বড় অংশ জমি বীজ সংকটে অনাবাদী থেকে যাবে। সংকটের কারন অনুসন্ধানে জানা যায়, এবার তুলনামূলক ধানের চড়ামূল্য পাওয়ায় অধিকাংশ চাষিরা বীজের ধান বিক্রি করেছে। তাছাড়া হাওড় অঞ্চলের বন্যা এবং বেশ কয়েকটি অঞ্চল নতুন করে আমন চাষের আওতায় আসায় চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মোসাদ্দেক হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সংকট এবং চড়া মূল্যের কথা স্বীকার করে বলেন, সম্প্রতি জেলা প্রশাসকসহ আমার সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধর্তন কর্মকর্তাদের আমি এখানকার বাস্তবতা তুলে ধরেছি। কিন্তু বিএডিসি চাহিদা অনুযায়ী বীজ দিতে না পারায় আমাদের কিছু করনীয় নেই। এ ব্যাপারে জেলা বিএডিসির উপপরিচালক লিয়াকত হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, দাকোপ অঞ্চলে ২৩ ধানের চাহিদা অনেক বেশী, যেটা এই মূহুর্তে সংকট আছে। তবে লবন সহনশীল ভিন্ন জাতের বীজ সরবরাহ আছে। তবে এই সংকট উত্তোরনে করনীয় সর্ম্পকে তিনি কোন নির্দেশনা দিতে পারেননি। পরিস্থিতির বিবেচনায় এবার দাকোপে কেবলমাত্র বীজ সংকটের কারনে বৃহৎ এলাকা চাষাবাদের আওতায় না আসার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। চাষিরা এই সংকট থেকে উত্তোরনে সরকারের কৃষি মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে।