আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ খুলনা: নিম্নচাপের প্রভাবে খুলনার উপকুলিয় উপজেলা দাকোপের নদ নদীতে ৪/৫ ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানির তোড়ে নলিয়ান ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন এলাকাসহ পৃথক ৪ টি স্থানের বেড়ীবাধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ঘটনায় সেখানকার ৪ শতাধীক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দ্রুত বাধ নির্মান সম্ভব না হলে নতুন নতুন এলাকায় পানি ঢুকে সুতারখালী ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশংকা করা হচ্ছে।
গত কয়েকদিনের টানা বর্ষন এবং নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানির চাপ বৃদ্ধি হওয়ায় দাকোপের অধিকাংশ বেড়ীবাধ ঝুকির মুখে আছে। এরই মাঝে শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে সুতারখালী ইউনিয়নের ২,৫,৬ নং ওয়ার্ডের পৃথক ৪টি স্থানের বাধ ভেঙে যায়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ২ টি স্থানের বাধ স্বেচ্ছাশ্রমে তাৎক্ষনিক আটকানো সম্ভব হয়েছে। তবে নলিয়ান ফরেষ্ট অফিস সংলগ্ন বাজার বেষ্টিত ২ বাধ আটকানো সম্ভব না হওয়ায় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে শুক্রবার রাতের শেষভাগে গুনারীর সাবেক ইউপি সদস্য অবণী বৈদ্যের বাড়ী সংলগ্ন, নলিয়ান ফরেষ্ট অফিস সংলগ্ন বাজার বেষ্টিত বাধের পৃথক ২টি স্থান এবং নলিয়ান জালাল গাজীর বাড়ী সংলগ্ন বেড়ীবাধের আনুমানিক ৪ শ’ গজ এলাকা ভেঙে যায়। এর মধ্যে বাজার এলাকার পাশাপাশি ২টি স্থান বাদে অপর ২টি স্থান জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় এলাকাবাসী তাৎক্ষনিক আটকাতে সক্ষম হয়েছে। নলিয়ান বাজার বেষ্টিত বাধ ভেঙে কমপক্ষে ৪ শতাধীক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া সেখানে থাকা জনগুরুত্বপূর্ন কৃষি ব্যাংক, নলিয়ান মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়, নলিয়ান দারুল উলুম মাদ্রাসা, ইউনিয়ন তহশিল অফিস, ফরেষ্ট অফিস এখন পানিতে তলিয়ে আছে। ২ হাজার বিঘা জমির ফসল পানির নীচেসহ শতাধীক পুকুর ভেসে গেছে, কাচা ঘরবাড়ী বিধ্বস্থ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও উপজেলার চালনা পৌরসভাসহ ৯টি ইউনিয়নে গত ৩দিনের অবিরাম ভারী বর্ষণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ওয়াপদা বাধের বাইরে কালাবগী ঝুলন পাড়া এলাকার পৃথক ৫/৬ টি স্থানে ভেঙে যাওয়ায় জমির ফসল ও মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির জানায়, নদীতে পানির প্রচন্ড চাপ থাকায় এখন কাজ করার পরিবেশ নেই, তবে রবিবার সকালে ফের নির্মান কাজ শুরু করা হবে বলে পরিষদের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান জানান, উপজেলার ৩২ ও ৩৩ নং পোল্ডারের বাঁধ নিমানের কাজ বিশ্ব ব্যাংক হাতে নেওয়ায় ওই দুটি পোল্ডারে আমরা করতে পারছিনা। তবে অধিক ঝুঁকিপুর্ণ বাঁধগুলি এই মুহুর্তে কোন রকম টিকিয়ে রাখতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। অবস্থার পরিবর্তন হলে ক্ষতিগ্রস্থ নদী ভাঙ্গন এলাকায় বাঁধ পূর্ণ নির্মাণ করা হবে। দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শেখ আবুল হোসেন বলেন, উপজেলার ৩টি পোল্ডারে ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংক ৩২ এবং ৩৩ পোল্ডারের টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ঠিকাদার প্রাতষ্ঠান কাজ শুরু করলেও তারা নদী শ্বাসন ব্যবস্থা না রেখে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু করায় দু’টি পোল্ডারসহ ৩১ নং পোল্ডারের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। জরুরী ভিত্তিতে ৩টি পোল্ডারের ঝুকিপূর্ণ বাঁধ সংস্কার করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। স্থানীয় সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস বলেন,সমুদ্র উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার পৃথক তিনটি পোল্ডারের ভয়াবহ নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নলিয়ান, গুনারী, কালাবগী, জালিয়াখালী, কামারখোলা, বটবুনিয়া, খোনা, কামিনীবাসিয়া এলাকা অধিক ঝুকিপূর্ন। এ গুলো দ্রুত সংস্কারের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্ধর্তন কর্ত্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন উপজেলার ৩২ ও ৩৩ নং পোল্ডারে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চলামন কাজে নদী শাসন ব্যতিত কাজ করায় পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হচ্ছেনা।