দাকোপ , খুলনা : খুলনার দাকোপ উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নের শ্রীনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সমরেশ রায় ঘরামী এবং প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার মন্ডলের বিরুদ্ধে মন্দিরের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে শ্রীনগর সঃ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পূজা উদ্যাপন কমিটির সদস্যদের সাথে আলাপকালে বেরিয়ে আসে নানান তথ্য। কমিটির সদস্যরা জানান, গত দূর্গাপূজার পূর্বে শ্রীনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সমরেশ রায় এবং অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার মন্ডল পূজা উদ্যাপন কমিটি ও গ্রামবাসীকে না জানিয়ে স্কুলের পুরানো মন্দিরটি ভেঙে ফেলেন। আসন্ন দূর্গাপূজা উপলক্ষে সভায় উক্ত সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সভাতে মন্দিরের উন্নতিকল্পে খুলনা জেলা পরিষদের ১লক্ষ টাকা অনুদান কি হয়েছে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি সবার সামনে টাকাটি তাঁদের কাছে গচ্ছিত আছে সময়মত দেওয়া হবে এই মর্মে স্বীকার করেন। ইতিপূর্বে বিশ্ব ব্যাংকের রাস্তা নির্মানের সময় উক্ত সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক মন্দিরের ক্ষতিপূরন বাবদ ৪ লক্ষ ১০ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য ভূয়া মন্দির কমিটি তৈরী করে বিশ্ব ব্যাংকে জমা দেন যা পূজা উদ্যাপন কমিটি ও গ্রামবাসী কেউ জানেন না। আসলে মন্দিরের জন্য যে কতটাকা বরাদ্দ এখনও জানা যায়নি। সভাতে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে-হতে স্থানীয় পার্থ রায়কে উক্ত স্কুলের নাইটগার্ড কাম দফতরি পদে নিয়োগ দেওয়ার নাম করে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে চাকুরি না দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠলে সভাতে উত্তেজনা বিরাজ করে। সভার সকল সদস্য সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষকের দূর্নীতির প্রতিবাদ করলে তাঁরা দু’জন সভাকক্ষ ত্যাগ করেন।
কমিটির সদস্যরা বলেন উক্ত টাকা আত্মসাতের জন্য তাঁরা পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতিসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দাকোপ থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ দিবাগত রাত্রে পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি ও কালিনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রসেনজিৎ রায়, নীহার রায় ও পার্থ রায় আটক হন এবং কারাবরণ করেন। ২০ সেপ্টেম্বর-২০১৭ তারিখে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।
এরপর থেকে মন্দিরটি ধ্বংস ও মন্দিরের টাকা আত্মসাৎ করার জন্য প্রসেনজিৎ রায়সহ অন্যদের বিরুদ্ধে ভয়ভিতি এবং থানায় মিথ্যা জিডি করে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। বর্তমান পূজা উদ্যাপন কমিটির সদস্যরা বলেন, সমরেশ রায় ঘরামী আ’লীগের উপজেলার নেতা তাই সবসময় আমাদের উপর দলের প্রভাব দেখিয়ে হুমকি প্রদর্শন করে চলেছেন। সদস্যরা আরও বলেন, শ্রীনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত মন্ডল স্ত্রীকে তালাক দেখিয়ে ভারতে রেখে এখানে চাকুরি এবং হুনডি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। সমরেশ রায়ের ছেলেও ২০/২৫ বছর পূর্বে ভারতে গিয়েছেন। এ দুৃই ব্যক্তি পরিবার ভারতে রেখে এখান থেকে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে ভারতে পাঠাচ্ছেন।
সম্প্রতি বিশ্ব ব্যাংকের টাকা উত্তোলনের জন্য পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি প্রসেনজিৎ রায় ও অন্যরা ব্যাংকে গেলে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সমরেশ রায় ঘরামী নিজেকে পূজা উদ্যাপন কমিটির সভাপতি বলে পরিচয় দেন এবং উক্ত কমিটির বিরুদ্ধে একটি জিডি করে টাকা উত্তোলন বন্ধ করে দেন। পূজা উদ্যাপন কমিটির বৈধ সভাপতি ও সম্পাদক জানান, টাকা উত্তোলন না করে মন্দিরের কাজ করতে পারছি না। জেলা পরিষদেরএক লক্ষ টাকাও এখনও হাতে পাইনি।
বর্তমানে কমিটির বিরুদ্ধে জিডিতে সমরেশ রায় যে ৩ জনকে সাক্ষি মেনেছেন তাঁদের মধ্যে যোগেশ চন্দ্র গাতিদার এবং সুনিল গাতিদার বলেন, জিডি সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তাদের বিরুদ্ধে জিডি করার মত কোনো ঘটনা এলাকায় ঘটেনি। সব কিছুই মিথ্যা।
শ্রীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমর গাতিদার বলেন, সবকিছু ফল্স। স্কুল ম্যাজেমেন্ট কমিটির সভাপতি এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক যা করছেন তা ঠিক নয়।
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন রিসিভ করেপরিচয় জেনে কেটে দেন এবং ফোন বন্ধ করে দেন। মুঠোফোনে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বারবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।
এদিকে মন্দিরটি যাতে ধ্বংস না হয় এবং মন্দিরের বৈধ কমিটি যাতে বিশ্ব ব্যাংকের টাকা উত্তোলন করে মন্দিরটি পূনরায় নির্মান করতে পারে তার ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকাবাসী।