আজগর হোসেন ছাব্বির,দাকোপ : দাকোপে মেয়াদ উত্তীর্ণ স্কুল ফিডিং বিস্কুট খেয়ে শিশু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট এনজিও সুশীলনের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা ও চরম দূর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নের ফকিরডাঙ্গা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জানা গেছে ওই স্কুলের ছাত্রী শংকর মাঝির কন্যা অন্তরা মাঝিসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গত ৮ মার্চ স্কুল ফিডিং বিস্কুট খেয়ে মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে অন্তরার অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় তাকে দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। বাকীরা প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হয়। অনুসন্ধানে জানা যায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার বৃদ্ধি, ঝরে পড়া রোধ, ক্ষুধা নিবারনের মাধ্যমে পাঠদানে মনোযোগ বৃদ্ধি, শিশুদের পুষ্টিমান বৃদ্ধি ও মেধা বিকাশের লক্ষ্যে সরকার দারিদ্র পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচী চালু করে। প্রকল্পটি ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত চলমান থাকার কথা আছে। তারই অংশ খুলনার বটিয়াঘাটা ও দাকোপ উপজেলার ২৩৪ টি বিদ্যালয়ে এই কর্মসূচী চালু আছে। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাস্তবায়িত এই প্রকল্পে স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থা এনজিও সহযোগী সংস্থা হিসেবে বাস্তবায়ন দেখভালের দায়িত্ব পালন করে আসছে। খুলনার দুটি উপজেলায় শুরু থেকে এনজিও সুশীলন সেই দায়িত্ব পালন করে আসছে। স্কুল পর্যায়ে কাজ তদারকির জন্য সুশীলনের বটিয়াঘাটায় ৪ জন এবং দাকোপে ৫ জন ফিল্ড মনিটর কাজ করছে। কিন্তু শুরু থেকে সুশীলনের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ শোনা গেছে। নিয়মিত স্কুল পরিদর্শন ও মনিটরিংয়ের কথা থাকলেও কাজটি না করে দায়িত্বশীলরা অফিসে বসে খাতাপত্র ঠিক রেখে কাজটি চালিয়ে নিচ্ছে এমন অভিযোগ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া গেছে। যে কারনে মেয়াদ উত্তীর্ণ বিস্কুট বিতরন সম্ভব হয়েছে। খোজ নিয়ে দেখা যায় ফকিরডাঙ্গা ওই স্কুলে বিতরন করা বিস্কুটের প্যাকেটের গায়ে মেয়াদ জানুয়ারী মাসে শেষ হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কোমল মতি শিশুদের মাঝে কিভাবে তা বিতরন হল এমন প্রশ্ন স্কুল কর্তৃপক্ষসহ অভিবাবক মহলের। সুশীলনের দাকোপ অঞ্চলের মনিটরিং ও রিপোটিং অফিসার আবু হাসান যার দায়িত্ব প্রত্যেকটি বিদ্যালয় নিয়মিত ভিজিট করা, অভিযোগ মতে তিনি সেটা না করে মাঝে মধ্যে দু একটা স্কুল ভিজিট করে দায়িত্ব পালনে চরম স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি নিজের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ঘটনা জানার সাথে সাথে আমি উর্ধর্তন কর্ত্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে সুশীলনের প্রকল্প সমন্বয়কারী সাহিদা খাতুন ডালিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। অভিযুক্ত ফিল্ড মনিটর আল ইমরানসহ যাদের চরম অবহেলায় এমন ঘটনা ঘটেছে তাদেরকে দিয়ে তদন্ত করালে কি ফল পাওয়া যাবে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আল ইমরানের সাথে অপর দুজনকে দেওয়া হয়েছে তারা অন্য ইউনিয়নে কাজ করে। তিনি বলেন আমি যতটুকু জেনেছি কার্টুনের গায়ে মেয়াদ ঠিক আছে, কিন্তু বিস্কুটের প্যাকেটের মেয়াদ জানুয়ারীর ১০ তারিখ শেষ হয়েছে। অপর দিকে নানা অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকল্পের উপপরিচালক রেজাউল ইসলাম চৌধুরীর দেওয়া মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ০৩/১০/১৭ তারিখ প্রকল্প পরিচালক রামচন্দ্র দাস সুশীলনের নির্বাহী প্রধান মোস্তফা নুুরুজ্জামানের নিকট তদন্ত প্রতিবেদনপত্র প্রেরন করে। যেখানে অন্যান্য অনিয়মের পাশাপাশি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সময়মত বেতন ভাতা পরিশোধ না করা, যাতায়াত ভাতা মোবাইল বিল না দেওয়া, এজেন্সির বাইরে ফিল্ড মনিটর দ্বারা বিস্কুট বিতরন করা, ত্রুটিপূর্ন ওয়্যার হাউজ ব্যবস্থাপনাসহ সুশীলনের নানা অনিয়মের বিষয় তুলে ধরে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু অদ্যবধী সেটার বাস্তবায়ন করা হয়নি বলে জানা গেছে। পক্ষান্তরে কর্মকর্তা কর্মচারীদের নানা কৌশলে সুশীলনের পক্ষে সাফাই গাইতে ব্যবহার করার কথা জানা গেছে।