দাকোপে ১টি স্লুইজগেটের অভাবে ৭ হাজার বিঘা জমি অনাবাদী

প্রকাশঃ ২০২০-০৩-০৯ - ১৭:৫১

আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ : খুলনার উপকুলিয় উপজেলা দাকোপে নির্মিত বেড়ীবাঁধে এলাকাবাসীর জানমালের ঝুঁকি কমেছে কিন্তু অনেক জায়গায় বিশাল জনগোষ্টির খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। একটি মাত্র স্লুইজগেটের অভাবে সেখানকার প্রায় ৭ হাজার বিঘা জমি অনাবাদী। হতাশ এলাকাবাসী নব-নির্মিত বাঁধে গেট নির্মানের দাবীতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছে।
উপজেলার আইলা ক্ষতিগ্রস্থ ৬ নং কামারখোলা ইউনিয়নে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেড়ীবাঁধ নির্মান করছে। নব-নির্মিত পরিবর্তিত ডিজাইনের বাঁধে অত্যান্ত প্রয়োজনীয় অনেক স্থানের স্লুইজগেট উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে সেই এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে পানির সংকট। আবার অতিবৃষ্টিতে সেখানকার পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। তেমনই পরিস্থিতির শিকার হয়ে প্রায় ৭ হাজার বিঘা কৃষি জমি বছরের পর বছর অনাবাদী অবস্থায় পড়ে আছে ইউনিয়নের ভিটেভাঙ্গা পারজয়নগর এলাকায়। সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী নিরুপায় হয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানসহ পাউবোর বিভিন্ন দপ্তরে গেট নির্মানের দাবীতে ধর্না দিয়ে চলেছে। সরেজিমন খোজ নিয়ে জানা যায়, ৩য় মৎস্য প্রকল্পের আওতায় ভিটেভাঙ্গা গ্রামের বেড়ীবাঁধে একটি স্লুইজগেট নির্মান করা হয়। ওই গেটের পানি সরবরাহের আওতায় প্রায় ৭ হাজার বিঘা জমিতে ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন হত। কিন্তু অব্যহত নদী ভাঙনের ফলে গত কিছুদিন পূর্বে সেই গেটটি ঢাকী নদী গর্ভে চলে যায়। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে চলমান বাঁধ নির্মান প্রকল্পের আওতায় সেখানে নতুন বেড়ীবাঁধ নির্মান করা হয়। কিন্তু নব-নির্মিত বাঁধে পূর্বের ন্যায় স্লুইজ গেট রাখা হয়নি। ফলে পরিবর্তিত ডিজাইনের এই বাঁধে বিপাকে পড়েছে সেখানকার চাষিরা। খরা মৌসুমে দেখা দেয় পানির সংকট, আবার অতিবৃষ্টিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। সাধারনত চাষিরা বর্যা মৌসুমে নদীর মিষ্টি পানি গেটের সাহায্যে তুলে সেটি ধরে রেখে চাষাবাদ করে থাকে। আবার প্রয়োজন অনুসারে সেটা ওই গেটের সাহায্যে ছেড়ে দেয়। কিন্তু অতিপ্রয়োজনীয় গেটটি তুলে দেওয়ায় গত বছর সেখানে কোন ফসল ফলানো সম্ভব হয়নি। একটি মাত্র স্লুইজ গেটের অভাবে এই বিপুল পরিমান জমি পড়ে আছে অনাবাদী অবস্থায়। ওই ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের সাবেক ইউপি সদস্য ঈসা সানা বলেন, এই গেটের আওতায় ভিটেভাঙ্গা পূর্ব ও পশ্চিম পাড়া, পারজয়নগর, জয়নাগর পূর্বপাড়া ও গুনারী গ্রামের একটা অংশের জমি চাষাবাদের আওতায় আসতো। সেখানকার সফল আমন চাষি মুছা সানা বলেন, বাঁধ নির্মানের সময় আমরা জানি এখানে পূর্বের ন্যায় গেট নির্মান করা হবে। কিন্তু কোন অদৃশ্য কারনে সেটা হলোনা আমরা বুঝতে পারছিনা। চাষি বিশ্বজিত মিস্ত্রি বলেন, আমাদের বেঁচে থাকার সম্বল এই জমির ফসল, গেট তুলে নেওয়ায় ধান চাষ না হওয়ায় এলাকায় দূর্ভিক্ষবস্থা চলছে। একই এলাকার কুমারেশ মন্ডল, নেপাল মন্ডল, শহিদুল সানা, হাজরা বাইন বলেন নতুন রাস্তায় গেট না থাকায় আমরা তাৎক্ষনিক প্রতিবাদ করলে তারা পরে নির্মান হবে বলে আমাদের আশ্বাস দেয়। কিন্তু এখন বলছে নাকি তাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। এলাকাবাসী নতুন বাঁধে গেট নির্মানের দাবীতে সর্বশেষ গত ৪ জুলাই ২০১৯ উপকুলিয় বেড়ীবাঁধ উন্নয়ন প্রকল্প ফেজ-১ এর পরিচালক বরাবর গনস্বাক্ষরসহ লিখিত আবেদন করেছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে বাঁধটি এখন বিশ্বব্যাংকের প্রকল্পের আওতায় সুতরাং সেখানে আমাদের কিছুই করার নেই, আবার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বলছে আমাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। দু’টি সংস্থার মধ্যে চলছে রশি টানাটানি কিন্তু গেট নির্মানের দায়িত্ব কোন পক্ষ নিচ্ছেনা এমন দাবী তাদের। এ ব্যাপারে কামারখোলা ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডল বলেন, ভিটেভাঙ্গায় জমিতে ফসল ফলাতে সেখানে গেট নির্মান অপরিহার্য্য। সর্বশেষ বিশ্ব ব্যাংকের কান্টিডিরেক্টরসহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আসলে আমি তাদেরকে বাঁধ নির্মানের ডিজাইন অনুসরন করে ভিটেভাঙ্গা, জয়নাগর এবং শ্রীনগরে ৩ টি স্লুইজগেট নির্মানের দাবী জানিয়েছি। তারা আশ্বস্থ করে এখন বলছে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ। প্রয়োজনে মেয়াদ বাড়িয়ে গেট নির্মানের দাবী জানিয়েছেন তিনি। উপজেলা কৃষি অফিসার মেহেদী হাসান খানের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, কৃষি প্রধান এলাকা হিসাবে সরকার যেখানে দাকোপকে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাত করন এলাকা হিসাবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে সেখানে একটি গেটের অভাবে বিপুল পরিমান জমি অনাবাদী থাকতে পারেনা। তিনি ভিটেভাঙ্গায় হাজার হাজার বিঘা জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে সেখানে গেটের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় প্রকৌশলীরা বলছেন একদফা সময় বাড়ীয়ে সামনের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। সুতরাং এই সময়ের মধ্যে নতুন গেট নির্মান সম্ভব নয়। ভুক্তভোগী এলাকাবাসী সরকারের পানি সম্পদ ও কৃষি মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি আকর্ষন করে যে কোন মূল্যে ভিটেভাঙ্গায় স্লুইজগেট নির্মানের দাবী জানিয়েছেন।