দাকোপে ২ কলেজ ছাত্রী আত্নহত্যার ঘটনাকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা

প্রকাশঃ ২০১৭-১১-১৬ - ১৭:১১

ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সন্দিহান ভুক্তভোগী পরিবার

আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপ : কয়েকদিনের ব্যবধানে ২ মেধাবী কলেজ ছাত্রী আত্নহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্দোলনে উত্তাল দাকোপ। দু’টি ঘটনায় অভিযুক্তরা ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের  হওয়ায় ভুক্তভোগী পরিবার ন্যায় বিচার পাওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান। অপরদিকে দাকোপ আওয়ামীলীগের সুবিধা বঞ্চিত অংশটি বিষয়টিকে পুঁজি করে নৌকার মনোনয়নে ফায়দা হাসিলে অপচেষ্টায় লিপ্ত এমন মন্তব্য সাধারন আওয়ামী ঘরানার সুশীল সমাজের।

উপকুলিয় শান্ত উপজেলা দাকোপ দু’জন কলেজ ছাত্রীর আত্নহত্যাকে কেন্দ্র করে অশান্ত হয়ে উঠেছে। গত ৬ নভেম্বর থেকে অদ্যবধী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ধারাবাহিকভাবে চলছে মিছিল সমাবেশ ও মানববন্ধন। কিন্তু এই প্রতিবাদ কর্মসূচীকে কেউ কেউ নৌকার আগামী মনোনয়নের সাথে মিলিয়ে ফেলায় আন্দোলনের সফলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। গত ৫ নভেম্বর দিবাগত রাতে লাউডোপ সরকারী এলবিকে মহিলা কলেজের মেধাবী ছাত্রী জয়ী মন্ডল নিজ কলেজ হোস্টেল কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যা করে। কারন অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বাজুয়া এস এন কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি ইনজামাম মীর্জার ধারাবাহিক পাশবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে সে আত্নহত্যায় বাধ্য হয়। এ ঘটনায় প্রথমে অপমৃত্যু মামলা দায়ের এবং গত ৭ নভেম্বর জয়ীর পিতা কুমারেশ মন্ডল বাদী হয়ে আত্নহত্যায় প্রোরচনার অভিযোগ এনে ইনজামামকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। যা দাকোপ থানার মামলা নং ৩। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভিযুক্তের শাস্থির দাবীতে ফুঁসে ওঠে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ। উত্তপ্ত এমন পরিস্থিতির মাঝে বাজুয়া এস এন কলেজ ছাত্রী বর্না রায় আত্নহত্যার ঘটনায় দাকোপ উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক স্বর্নদীপ জোয়াদ্দারসহ দু’জনকে আসামী করে বর্নার পিতা অনিমেষ রায় বাদী হয়ে গত ৯ নভেম্বর দাকোপ থানায় মামলা দায়ের করে। যা দাকোপ থানার মামলা নং ৫। বর্তমানে জয়ী আত্নহনন মামলার আসামী ইনজামাম এবং বর্না রায় আত্নহত্যা মামলার আসামী অভিজিত অভি জেলহাজতে আছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী ঘরানার সুশীল সমাজের অনেকে মন্তব্য করেছেন, দু’টি ঘটনায় ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল নেতারা অভিযুক্ত হওয়ায় উপজেলা আওয়ামীলীগের দলছুট অংশটি বিষয়টিকে পুঁজি করে আগামী দিনে নৌকার মনোনয়নে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও ঘটনার পর অভিযুক্তদের দল থেকে বহিস্কারসহ তাদের শাস্থির দাবীতে গড়ে ওঠা আন্দোলন সংগ্রামে উপজেলা আওয়ামীলীগ সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করছেন। তবে দলের বিরোধী পক্ষের মত এই বিতর্কিতদের দলের দায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত করতে যাদের আর্শিবাদ ছিল তারা আজ বহিস্কার করে দায় এড়াতে পারেনা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদলের পরস্পর বিরোধী দু’টি অংশ রাজনীতির মাঠে যতটা সরব স্থানীয় বিরোধী শক্তি বিএনপি ও জাতীয় পার্টি অজ্ঞাত কারনে ঠিক ততটাই নীরব। এখন পর্যন্ত ওই দু’টি দলের পক্ষে কেউ স্বজনহারা পরিবারের খোজ নিয়েছে বলে জানা যায়নি। খোদ ক্ষমতাসীন দলের পরস্পর বিরোধী দু’টি পক্ষ আন্দোলনকে বিভক্তকরার চেষ্টায় সাধারনের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। সব মিলিয়ে আন্দোলনের নামে রাজনৈতিক কুট কৌশলের অপতৎপরতায় শেষ পর্যন্ত জয়ী ও বর্না আত্নহত্যার ঘটনায় ন্যায় বিচার পাওয়ার ব্যাপারে সন্দিহান তাদের পরিবার।

এ ব্যাপারে জয়ীর একমাত্র ভাই দেবাঞ্জন মন্ডল এই প্রতিবেদকের নিকট তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,“অভিযুক্ত ইনজামাম আমার বোনকে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করেছে,বিচারের বানী থেমে গেলে আমার বিচার আমি করবো”। অনুরুপ মন্তব্য বর্না রায়ের পরিবারের।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দাকোপ থানার অফিসার ইনচার্জ শাহাবুদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্না আত্নহত্যা মামলার প্রধান আসামী অভিজিত ১ দিনের পুলিশ হেফাজাতে গুরুত্বপূর্ন তথ্য দিয়েছে এবং অপর আসামী স্বর্নদীপকে গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা চলছে। অন্যদিকে জয়ী মন্ডল আত্নহত্যা মামলার আসামী ইনজামামকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার আদালতে রিমান্ড শুনানী অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি জানান।

এদিকে সংখ্যালঘু পরিবারের ২ কলেজ ছাত্রী পাশবিক নির্যাতন ও লাঞ্চিত হয়ে আত্নহত্যায় বাধ্য হওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেনা স্থানীয় সংখ্যালঘুৃ সম্প্রদায়। আগামী সংসদ নির্বাচনে এর নীতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভবনা থেকে যাচ্ছে এমন মন্তব্য অনেকের। সচেতন দাকোপবাসী এ ঘটনাকে কোন রকমে রাজনীতিকরন না করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় সকলের ঐক্যবদ্ধ ভুমিকা প্রত্যাশা করছে।