দিঘলিয়ায় জমি অধিগ্রহণের জটিলতায় শুরু হয়নি ‘মডেল মসজিদ’ নির্মাণ কাজ

প্রকাশঃ ২০২১-০৪-১৮ - ১৪:৫০

ওয়াসিক রাজিব, দিঘলিয়া : ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র না পাওয়ায় কার্যাদেশ দেওয়ার ১৮ মাসের মধ্যে মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। এরপর আরও তিন মাস অতিবাহিত হয়েছে। অর্থাৎ ২১ মাস চলে গেলেও নির্মাণ কাজ শুরুই করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র না পাওয়া এর কারণ। ফলে একদিকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি, অন্যদিকে পুরাতন মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলায় জামাতে নামাজ আদায়ে মারাত্মক অসুবিধায় পড়েছেন পার্শ্ববর্তী এলাকার মুসল্লিরা। ঘটনাটি খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায়।

খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১ থেকে ২০১৯ সালের জুন মাসে কার্যাদেশ দেওয়া হয় খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের। কার্যাদেশ পাওয়ার এক মাসের মধ্যে টিচবি-মামুন (জেভি) কন্সট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে।কিন্তু বিপত্তি বাধে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র প্রদানে ধীর গতির কারণে।

খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১ সূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০ টি ‘মডেল মসজিদ’ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।উক্ত প্রকল্পের আওতায় খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা সদরে ৩১ শতক জায়গার উপর সোয়া ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ‘মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স’ নির্মাণের স্থান নির্ধারণ হয়।২০১৯ সালের ১৬ জুন খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ লতিফুল ইসলাম উপরোক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করেন।কার্যাদেশে কাজের মেয়াদ উল্লেখ করা হয় ১৮ মাস। সেই হিসাবে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা।কিন্ত বিপত্তি বাধে ধর্মমন্ত্রনালয় থেকে জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র দিতে ধীর গতির কারণে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় দিঘলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহাবুবুল আলম এর সংগে। তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন, উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় এ মসজিদটির নির্মাণ কাজ যাতে দ্রুত শুরু হয় সে লক্ষে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।অত্র উপজেলা ৭ মাস পূর্বে যোগদানের পর থেকে আমি সার্বক্ষনিক জেলা প্রশাসক, ইসলামী ফাউন্ডেশন এবং ধর্মমন্ত্রনালয়ের সংগে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছি।ছয় মাস পূর্বে খুলনা জেলা প্রশাসকের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার মাধ্যমে আমরা জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা ধর্ম মন্ত্রনালয়ে পাঠাই। কিন্ত ধর্ম মন্ত্রনালয় এক পত্রের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা পাঠাতে বলে।

তিনি আরো বলেন, মসজিদের লে-আউট দিতে গিয়ে দেখা যায় মসজিদের কেবলার অবস্থান হবে কৌনিক আকারের।যে কারণ প্রস্তাবিত জমির পরিমাণ বেড়ে যায়।

খুলনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহানাজ পারভীন ২২ মার্চ সোমবার দুপুরে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদকে বলেন, গত মাসে আমরা দিঘলিয়া উপজেলা সদরে মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাবনা ধর্ম মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছি।

ইসলামী ফাউন্ডেশনের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক শাহীন বিন জামান এ প্রতিবেদককে বলেন, গত শনিবার জমি গ্রহণের ছাড়পত্র নিয়ে ধর্ম মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব (উন্নয়ন) এর সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন, বিষয়টি দেখবো।

এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি চবি-মামুন (জেভি) কন্সট্রাকশন এর স্বত্বাধিকারী গাজী মাসুদ রানা এ প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৯ সালের ১৬ জুন কার্যাদেশ পাওয়ার পর এক মাসের মধ্যে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে মসজিদের কাজ শুরু করার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করি।আমরা পাইলিং কাষ্টিং পাইলিং রেডি। জমি অধিগ্রহণ না হওয়ার কারণে ড্রাইভ এর কাজ শুরু করতে পারছি না।ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জমি অধিগ্রহণের ছাড়পত্র না পাওয়ার কারণে আমরা মারাত্মকভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি।ইতিমধ্যে মসজিদ নির্মাণ কাজের জন্য আমরা প্রায় তিন কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি।প্রস্তাবিত মসজিদ তৈরির জায়গার উপর আমাদের নির্মাণ সামগ্রী রড, সিমেন্ট, পাথর প্রায় ৮ মাস ধরে অকেজো অবস্থায় পড়ে আছে।এ ব্যাপারে আমরা কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

অন্যদিকে প্রস্তাবিত মডেল মসজিদ নির্মাণের স্থানে থাকা পুরানো মসজিদটি ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।যে কারণে দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে মারাত্মক অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন।বর্তমানে মুসল্লীরা পুরাতন উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে নামাজ আদায় করছেন।

সৌদি আরবের আদলে গড়া অত্যাধুনিক এ মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মিত হলে ইসলামী ফাউন্ডেশনের সকল কার্যক্রম এখান থেকে পরিচালিত হবে।

আগামী ডিসেম্বরে সারাদেশে এ জাতীয় ২০০ টি মসজিদ দৃশ্যমান হওয়ার কথা।ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন উপজেলা এবং জেলায় ৪৮০ টি এ জাতীয় মডেল মসজিদের দরপত্র আহবান করা হয়েছে।