দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন খুলনা-৫: মাঠে ১০ সম্ভাব্য প্রার্থী

প্রকাশঃ ২০২৩-০৯-০৩ - ১৫:৩৭

ইউনিক ডেস্ক : আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ডুমুরিয়া ও ফুলতলা এই দুই উপজেলা মিলে খুলনা-৫ আসন। স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকেই এ আসনটি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে। এক কথায় আওয়ামী লীগের দুর্গ বা ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। তবে এবারের নির্বাচনে সেই পরিস্থিতি নেই। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে আসনটিতে এখন চলছে চরম বিরোধ। বর্তমান সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপিকে নিয়েই যত আপত্তি। তার ওপর নাখোশ হয়ে একে একে ৯ প্রার্থী নেমেছেন মনোনয়ন মাঠে। ওদিকে মনোনয়ন নিয়ে বিরোধী দলের মধ্যে আপাতত নেই কোন হানাহানি। জোট প্রার্থী হিসেবে সাবেক এমপি পরোয়ারেই সন্তুষ্ট সকলেই।
উপজেলা নির্বাচন অফিস ও দলীয় সুত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের শেষে অথবা নতুন বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে পারে মহান জাতীয় সংসদের ১২তম নির্বাচনী আসর। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্ধারিত এ সময়ের মধ্যেই নির্বাচন হওয়ার জোর সম্ভবনা রয়েছে। মহান জাতীয় সংসদের ১০৩ নং সংসদীয় অঞ্চল হল ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলা। যা খুলনা-৫ আসন হিসেবে পরিচিত। সংসদীয় এ আসনে এবার মোট ভোটর সংখ্যা হল ৩ লক্ষ ৮২ হাজার ৯’শ ৯ জন। তারমধ্যে ডুমুরিয়ার ভোটার ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ১’শ ২৬ জন এবং ফুলতলায় ১ লক্ষ ১৩ হাজার ৭’শ ৮৩ জন। স্বাধীনতার পর থেকেই সংসদীয় এ আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। তারমধ্যে ২০০১ সালের নির্বাচনে চার দলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরোয়ার বিজয়ী হয়েছিলেন। পরবর্তী নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের লীগের প্রার্থী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি নির্বাচিত হন। সেই থেকে একটানা ১৫ বছর ধরে তিনি এমপি হিসেবে আছেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তার বিপক্ষ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক। আর ওই সারিতে আছেন খুলনা জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাড. মোঃ সাইফুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অজয় সরকার, ফুলতলা উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব শেখ আকরাম হোসেন, ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আঃ গণি মোল্লাহ্, প্রবর্তন পত্রিকার সম্পাদক মোস্তফা সরোয়ার, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মাহাবুব-উল-ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য মোঃ আজগর বিশ্বাস তারা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকৌশলী মৃনাল কান্তি জোর্দ্দার ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আবু সালেহ। মনোনয়ন প্রত্যাশী সকলেই এখন মাঠে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা উন্নয়ন আর অগ্রগতিসহ নিজের ভাবমুর্তি তুলে ধরে সবাই পৃথক পৃথক ভাবে সভা-সমাবেশের আয়োজন করছেন। একই সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীকে নিয়ে ইশারা-ইজ্ঞিতে করা হচ্ছে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। তবে সেই তীরটা বেশির ভাগ সময়ই ছোঁড়া হচ্ছে সাংসদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপির দিকে। বিশেষ করে ইউপি নির্বাচনে ডুমুরিয়া উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১২টিতে পরাজয়, উপজেলা নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষ্যে অবস্থান নেয়া, বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকদের চাকরির সুযোগ করে দেয়াসহ বহু অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার বিপক্ষ্যে। যা নিয়ে দলের মধ্যে এখন চলছে চরম দ্বিধা-দ্বন্দ। আর এর রেশ ছড়িয়ে পড়ছে দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ ভোটারের মধ্যে। দিনে দিনে দ্বিধা-বিভক্তি হচ্ছেন তারা। ফলে আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে খ্যাত এ আসনটির অবস্থা এবার খুবই নড়বড়ে। আর দলীয় এই পরিস্থিতি নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী খুলনা মহানগরীর সদর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ্যাড. সাইফুল ইসলাম বলেন- আমি মহানগরীর রাজনীতি ও আইন পেশার সাথে সম্পৃক্ত। তবে খুলনা-৫ আসন তথা ডুমুরিয়া-ফুলতলা নির্বাচনী এলাকাটি শহর সংলগ্ন। এখানকার রাজনীতি সম্পর্কে আমি যথেষ্ট অবগত। যার মধ্যে অনেক সফলতা ও ব্যর্থতা মিশে আছে। বিগত ১৫ বছর ধরে এখানে দলীয় নেতা-কর্মীরা অবহেলিত। দলীয় প্রতীক নৌকার প্রার্থীরা অদৃশ্য কারণে হেরে গেছে। বঞ্চনার শিকার ওইসব নেতা-কর্মীদের পাশে অবস্থান নিয়েছি। আশাকরি, আমি নমিনেশন পেলে দলের ওই ত্যাগী ও নিবেদিত সঙ্গে নিয়ে কাজ করবো। এমনি করে ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব শেখ আকরাম হোসেন জানান, বিগত ১৫ বছর ধরে এখানে বৈষম্য’র রাজনীতি করা হয়েছে। তিনি ইজ্ঞিত করে বলেন- এখানে উনার লোক না হলে দল করে কিছুই জুঠবে না। আমি এই ব্যক্তি রাজনীতির বিপক্ষ্যে। এছাড়া দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্যান্য প্রার্থীরা তেমন কোন মন্তব্যে জড়াতে চাননি। তবে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক অজয় সরকার বলেন- দলের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান, প্রবীণ অপেক্ষা তরুণ নেতৃত্ব গড়ে উঠুক। আমি সেই আস্থা ও বিশ্বাস নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশী। একই ভাবে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোঃ আজগর বিশ্বাস তারা, কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকৌশলী মৃনাল কান্তি জোর্দ্দার, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার আবু সালেহ জানান, জন্মসুত্রে আমরা আওয়ামী লীগ। বিগত সময়ে বিএনপি-জামাতের বিপক্ষ্যে আন্দোলন, লড়াই ও সংগ্রাম করেই আজ এ পর্যন্ত এসেছি। এখন সেই আস্থা নিয়েই মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশী দৈনিক প্রবর্তন প্রত্রিকা সম্পাদক মোস্তফা সরোয়ার বলেন- বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অনেক প্রতিযোগিতা ছিল। তখন আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করেও দলীয় প্রতীক নৌকা পেয়ে ছিলাম। তাই আমি বিশ্বাস করি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার সম্পর্কে অবগত আছেন। মনোনয়ন নিয়ে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মোঃ আঃ গণি মোল্লাহ্ বলেন-আমি ১৯৭৫ সাল থেকে ছাত্রলীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। জীবনের ওপর দিয়ে অনেক জুলুম অত্যাচার বয়ে গেছে। পেশাগত লাইফে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে অনেক দায়িত্ব দিয়েছেন। এখন মনোনয়নও তার ওপর নির্ভর করে। মনোনয়ন প্রসঙ্গে সাংসদ নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি বলেন- ডুমুরিয়া-ফুলতলা আসনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে এমপি নির্বাচিত করেছেন। এছাড়া তিনি আমাকে প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তাই মনোনয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ওপর আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আর স্থানীয় ভাবে এ আসনে বর্তমান সময়ে অনেক উন্নয়ন করা হয়েছে। এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে কাজ হয়নি। অপরদিকে মনোনয়ন নিয়ে চার দলীয় জোটে কোন বিরোধ নেই। এখানে শরীক দলের সাবেক এমপি বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার প্রার্থী হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের সাবেক মহাসচিব ও সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডাঃ গাজী আবদুল হক ও ডুমুরিয়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোল্ল্যা মোশাররফ হোসেন মফিজও মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে।