ডেস্ক নিউজ : একটু সময় লাগলেও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে মনে করেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। মূল্যস্ফীতি অফিসিয়ালি ১ শতাংশ কমেছে উল্লেখ করে দেশবাসীকে অধৈর্য না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
আজ বুধবার (০৯ অক্টোবর) বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন তিনি।
অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে বাড়ছে। এ ব্যাপারে জনমনে ক্ষোভ রয়েছে। সচিবালয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি অফিসিয়ালি ১ শতাংশ কমেছে। মূল্যস্ফীতি মোটামুটি এস্কর্টিং (থামাতে) করতে পেরেছি। এখন কমানোর ব্যাপারে একটু সময় লাগবে। আমরা কিছু ডিসিশন দিয়েছি। তেলের ওপর ডিউটি (শুল্ক) কমিয়েছি। আজ চিনির ওপর ডিউটি কমিয়ে দেওয়া হলো।’
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অভাব হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ মসুর ডাল কেনার অনুমোদন দেওয়া হলো। এলএনজি আমদানি, কৃষির সার কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আপনারা স্বস্তি পাবেন।’
সেই স্বস্তি কত দিনের মধ্যে মিলবে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন বলেন, ‘স্বস্তি পাবেন। আপনারা অধৈর্য হবেন না। এ জিনিসটা কিন্তু অনেক কমপ্লেক্স। মনে করবেন না মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে হঠাৎ করে। এটার পেছনে অনেক ফ্যাক্টর আছে। এখানে বাজারের ফ্যাক্টর আছে। বাজারে মনিটরিংয়ের ফ্যাক্টর আছে। পণ্য উৎপাদন, পণ্য বিপণন। উৎপাদন করলেও সেটা বিপণনের ক্ষেত্রে অনেক ব্যাপার আছে।’
দ্রব্যমূল্য বাড়ার একটি বড় কারণ চাঁদাবাজি। এই সরকারের আমলে চাঁদাবাজি কমেছে। তারপরও কেন দ্রব্যমূল্য কমছে না- এ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, ‘চাঁদাবাজি কমেনি, তা নয়। চাঁদাবাজি কমেছে। কিন্তু বিভিন্ন হাতবদল হওয়াটা এই মুহূর্তে কমেছে তা নয়।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে যাত্রা শুরু করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সব ক্ষেত্রে ভঙ্গুর অবস্থা স্বাভাবিক করতে শুরু থেকেই হিমশিম খাচ্ছে সরকার। তবে জাতির ক্রান্তিকালে দায়িত্ব নেওয়া এই সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামানো। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার মূল্যস্ফীতি যে পর্যায়ে রেখে গিয়েছিল, তা গত দুই মাসে কিছুটা কমে এলেও কোনোভাবেই সন্তোষজনক নয়।
এই সরকার দ্রব্যমূল্যে লাগাম টানতে সক্ষম হবে বলে যে জনআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল সেটার বাস্তবায়ন হয়নি গত দুই মাসে। এতে জনসাধারণের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভও তৈরি হচ্ছে। এই অবস্থায় বাজারে লাগাম টানতে নড়েচড়ে বসেছে সরকার। যেকোনো মূল্যে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক রাখতে নিচ্ছে নানা উদ্যোগ।
সরকার কিছু নিত্যপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেও বাজারে এর প্রতিফলন নেই। কিছু কিছু পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলায় জেলায় টাস্কফোর্স করেছে সরকার। সরকার টাস্কফোর্সের যে কার্যপরিধি নির্ধারণ করেছে তাতে বলা হয়েছে- টাস্কফোর্স নিয়মিত বিভিন্ন বাজার, বৃহৎ আড়ৎ/গোডাউন/কোল্ড স্টোরেজ ও সাপ্লাই চেইনের অন্যান্য স্থানগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারক করবে। উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্যে যাতে দামের পার্থক্য ন্যূনতম থাকে তা নিশ্চিত করবে ও সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে তারা।
প্রতিটি জেলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে গঠিত এ টাস্কফোর্স প্রতিদিনের মনিটরিং শেষে একটি প্রতিবেদন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা ও পূর্বাভাস সেল এবং জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে পাঠাবে।