নড়াইল টিটিসি’র অধ্যক্ষের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ!

প্রকাশঃ ২০২৪-১০-২৬ - ১২:২৮

নড়াইল প্রতিনিধি: নড়াইল টিটিসি’র অধ্যক্ষ আবুল বাসার আল মামুন সিদ্দকী’র বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। তার বিরূদ্ধে কথিত অর্থ আত্নসাতের অনিয়মের ধোয়া তুলে একটি দুর্নীতিবাজ চক্র আবারও সার্টিফিকেট জালিয়াতির স্বপ্ন দেখছে। শুধু তাই নয়,পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ চক্রটি অধ্যক্ষ’র চেয়ার দখল করে পূর্বের ন্যায় দুর্নীতি অনিয়মের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করতে চায় নড়াইল টিটিসি’তে।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) সকালে নড়াইল টিটিসি’র পাশর্^বর্তী বাসিন্দা পলাশ, আহম্মদ সহ আরোও অনেকে জানান, টিটিসি’তে সাবেক দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ শামীম হোসেন এর দু’জন অনুসারী আছেন। তারা আবার তাকে অধ্যক্ষ হিসেবে এখানে নিয়ে আসতে তৎপর হয়ে উঠেছে। সেই সাথে যোগ দিয়েছে সুযোগ সন্ধানী তথাকথিত দুষ্টু আওয়ামী চক্র। এ দু’টি চক্র অনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য এবং টিটিসি’তে বিশৃংখলা সৃষ্টির জন্য নানা কুটকৌশল করছেন। আওয়ামী পন্থি ওই দুষ্টু চক্র শুরু থেকেই অধ্যক্ষ আবুল বাসার আল মামুন সিদ্দকী’র পিছনে লেগে আছেন। তারা ৫ ওয়াক্ত জামায়াতে নামাজ পড়া এবং দাড়ি টুপি ওয়ালা অধ্যক্ষকে পছন্দ করতে পারছেন না। এ চক্রের কাজ হচ্ছে বিভিন্ন সরকারি বে-সরকারি দপ্তরের দুর্নীতবাজদের সাথে আতাত করে সুকৌশলে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে জিম্মি করে অবৈধ সুযোগ সুবিধা নেয়া ও হেনস্থা করা।

এদিকে নড়াইল রিপোর্টার্স ইউনিটি’র কার্যালয়ে গত ২০ অক্টোবর নড়াইল টিটিসি’র অধ্যক্ষ আবুল বাসার আল মামুন সিদ্দিকী এর বিরূদ্ধে অনিয়ম ও অর্থ আত্নসাতের অভিযোগ সম্বলিত একটি আবেদন আসে। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের একটি অনুসন্ধানী টিম সরজমিনে টিটিসিতে যায়।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে নড়াইল টিটিসি’র অধ্যক্ষ আবুল বাসার আল মামুন সিদ্দকী’র বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রের ভয়ংকর তথ্যচিত্র। অনুসন্ধানকালে ও সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ আবুল বাসার আল মামুন সিদ্দিকী ২০২২ সালের ১৪ ডিসেম্বর নড়াইল টিটিসিতে যোগদান করেন। কিন্তু সাবেক অধ্যক্ষ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ সপ্তাহে দ্বায়িত্ব হস্তান্তর করেন। দীর্ঘদিন পর দায়িত্ব হস্তান্তর করার মূল কারণ ছিল ঝালকাঠি টিটিসি থেকে পূনরায় তিনি নড়াইল টিটিসিতে ফিরে আসতে চান। দ্বায়িত্ব না দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত নানাভাবে ফিরে আসার চেষ্টা করেন। সকল চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর প্রশাসনিক জটিলতার কারনে বাধ্য হয়ে দ্বায়িত্ব হস্তান্তর করেন। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। ফিরে আসার জন্য সকল অপচেষ্টা ষড়যন্ত্র অব্যহত রেখেছেন।
এদিকে ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের কেনাকাটায় অনিয়মের বিষয়ে অধ্যক্ষ আবুল বাসার আল মামুন সিদ্দিকী জানান, তিনি যোগদানের পূর্বে ২ টি অকুপেশনে লেভেল পরীক্ষায় ১৫১ জন অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি (আবুল বাসার আল মামুন সিদ্দিকী) অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদানের পর বিভিন্ন ট্রেডে চলতি বছরের ২৮ জুলাই পর্যন্ত লেভেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সংখ্যা ৮৬৩ জন। বর্তমানে এখানে ১৫ টি অকুপেশনে লেভেল কার্যক্রম চালু রয়েছে। ওয়েল্ডিং ও অটোমোবাইলস ব্যাতীত প্রতিটি অকুপেশনে ২৪ থেকে ৩০ জনের প্রশিক্ষণার্থীর একত্রে লেভেল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের পরিমান। যার কারণে পরিদর্শন বহিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তর বা অন্য কোন দপ্তরের কর্মকর্তা /তদন্ত কমিটি /মনিটরিং কর্মকর্তা/ পরিদর্শনকারীদের মতামতে দাপ্তরিক, প্রশাসনিক, পরিষ্কার-পরিছন্নতা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের সন্তোষজনক মতামতের বিষয়টি সুস্পষ্ট ফুটে উঠেছে। সর্বোপরি সন্তোষজনক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের কারণে প্রশিক্ষণার্থীদের ফলাফলে সন্তোষজনক পাশের হার বিদ্যমান। যা বিগত দু’অর্থ বছরের বাজেটের যথাযথ ব্যবহারের ফল বলে জানান কেন্দ্রের অধ্যক্ষ ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নড়াইল টিটিসি সহ বিভিন্ন সরকারি ও বে-সরকারি দপ্তর কেন্দ্রিক একটি শক্তিশালী দুষ্টু চক্র রয়েছে। তাদের প্রথম কাজ প্রতিষ্ঠান প্রধানকে যেভাবে হোক হেনস্থা ও দুর্বল করে অনৈতিক সুবিধা গ্রহন করা। গত ১০ বছরে আওয়ামী পন্থি এ চক্রটি মারাত্নকভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ পর্যন্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যারা যোগদান করেছেন, তাদের সকলের বিরুদ্ধে বেনামেপত্র প্রেরণ ও মিডিয়ার মাধ্যমে হেনস্তা করা হয়েছে। অনিয়মের ধোয়া তুলে প্রশাসনকে বিভিন্ন উপায়ে অস্থির রেখে নিজেদের কুকর্ম চালিয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা ও অপকৌশল হিসেবে এসব ধান্দবাজি কার্যক্রম চলে আসছে। কখনও কখনও তারা সফল হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বিগত অধ্যক্ষের সময়ে এখানে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের মত ন্যাক্কারজনক ঘটনার জোর অভিযোগ রয়েছে। টিটিসি হতে সংগৃহিত কর্মকর্তাদের তালিকা মিলিয়ে দেখা যায় যে, অভিযোগের তালিকা হতে বাদ পড়েছেন কেন্দ্রের তিনজন ইন্সট্রাক্টর । এখান হতে বদলী হয়ে ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, খুলনায় কর্মরতদের সাথে এদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। অনুসন্ধানে এ সকল তথ্য বের হয়ে আসে। ইতোমধ্যে এ চক্রটি একাধিক বার বেনামে ও সাক্ষর জাল করে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগপত্র প্রেরণ করেছে। যাদের নাম ও সাক্ষর জাল করা হয়েছে, পরবর্তিতে তারাই জালিয়াতদের বিরদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আবেদন করে।

২০২৩ সালের ২৫জানুয়ারি’র বিএমইটির স্বারক নং ৪৯.০১.০০০০.০০২.০৪.০১৬.২২.১৮৮ অনুযায়ী অত্র কেন্দ্রের পিডিও সনদপত্র অনিয়ম সম্পর্কিতপত্র যাচাই বাছাই পরবর্তী নড়াইল টিটিসির ৩ জনকে বদলি করা হয়। নড়াইলের সাবেক জেলা প্রশাসক নির্দেশিত কর্মে অবহেলার জন্য জেলা প্রশাসক হতে চারজন প্রশিক্ষককে নড়াইল টিটিসি হতে অনত্র বদলীর জন্য পত্র প্রেরণ করা হয় বিএমইটিতে। পরবর্তীতে সাবেক জেলা প্রশাসক বিএমইটিতে অতিরিক্ত মহা-পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন । পূর্বের পত্রানুযায়ী বদলী না হওয়ায় তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর একজন ইন্সট্রাক্টরকে পটুয়াখালি ও অন্য জনকে খাগড়াছড়ি বদলী করেন। যেহেত ুবদলী কার্যক্রম বিএমইটির দায়িত্বের আওতাভূক্ত।
পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটের সুযোগে পূর্বে সংঘটিত অপরাধের কারণে বদলীকৃতরা ফিরে আসার তোড়জোড় শুরু করেছেন যাহা অনুসন্ধানে বের হয়ে আসে। ফলে বর্তমান অধ্যক্ষের ভাবমূর্তি, প্রতিষ্ঠানের প্রাতিষ্ঠানিক অগ্রগতি তথা প্রশিক্ষনের মান, প্রশিক্ষণ পরিবেশ ও প্রশিক্ষণার্থীদের ফলাফলের সন্তোষজনক অগ্রগতির বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে অনিয়ম ও অর্থ আত্নসাতের অভিযোগের অন্তরালে চলছে চেয়ার দখল ও সার্টিফিকেট অনিয়মের পায়তারা। নড়াইল টিটিসি কেন্দ্রের অধ্যক্ষ আবুল বাসার আল মামুন সিদ্দিকী ষড়যন্ত্রকারি ও দুর্নীতিবাজদের বিরূদ্ধে যথাযথ তদন্তপূর্বক কঠোর শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন।