নীলফামারী প্রতিনিধিঃ টানা বৃষ্টি হচ্ছে উত্তরবঙ্গে। এতে নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেতে চলেছে। গত বহস্পতিবার (১০ আগষ্ট) সন্ধ্যা থেকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টির কারনে নীলফামারী জেলার বিভিন্ন এলাকা ও তিস্তা নদী অববাহিকার গ্রাম গুলো তলিয়ে গেছে। ভারী বর্ষনে আজ শনিবার এ পরিস্থিতি সৃস্টি হয়। এতে প্রায় তিন হাজার পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় ওই সব পরিবারকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
গত বুধবার (৯ আগষ্ট) হতে আজ শনিবার পর্যন্ত বৃস্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। টানা বৃস্টিতে নাখাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। এদিকে আজ শনিবার সকাল ৬টা হতে তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পানি উনয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র এ সুত্র জানায়।
শুক্রবার তিস্তা অববাহিকায় ডালিয়া পয়েন্টে ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ১৩২ মিলিমিটার।
এতে রোপা আমন ক্ষেত সহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। টানা বৃস্টিপাতের কারনে জেলার বিভিন্ন নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলা সদরের ইছামতি শাখা নদীর পানি উপচে ওই ইউনিয়নের কুমারপাড়া গ্রামটিকে তলিয়ে দিয়েছে। গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট ও আবাদী জমির উপর দিয়ে প্লাবনের পানির স্রোত বয়ে যাচ্ছে। বন্যা কবলিত পরিবারগুলোকে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দেয়া হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান।
এ ছাড়া গত রবিবার (৬ আগষ্ট) ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের পূর্বখড়িবাড়ি এলাকায় তিস্তা নদীর ডানতীরে স্বপন বাঁধ বিধ্বস্থ্য হয়। বৃস্টি ও নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই গ্রামে হুহু করে নদীর পানি প্রবেশ করে সব ছিল তলিয়ে দিতে শুরু করেছে। গ্রামের ৭শত পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ১৫টি পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ৫০ পরিবার বসতঘর সরিয়ে নিয়েছে বলে জানায় ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন।
ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়শিঙ্গেশ্বর গ্রামে ৭৪৫টি পরিবারের ঘরবাড়িও তলিয়ে গেছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান। খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কিছামত গ্রামে ২৩০টি পরিবারের বসত ঘরের ভেতর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন। জলঢাকা উপজেলার খুটামারী ইউনিয়নের বুড়িখোড়া নদীর পানি উপচে জেলেপাড়া গ্রামের ৫৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ শামীম।
ডিমলা উপজেলার ছোটখাতা কুমলাই মৎস্য খামার চাষী সমবায় সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, টানা বর্ষন ও উজানের ঢলের কারনে তার সমিতির ৪শ একর পুকুরের ৫ লক্ষাধিক টাকার মাছ ও ঝুনাগাছ চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, তার এলাকার পুকুরের ২ লক্ষাধিক টাকা মাছ ভেসে গেছে। নাউতরা ইউনিয়নের নাউতরা নদীর বাঁশের সাকো ভেঙ্গে পড়ার এলাকাবাসীকে চরম দুভোগে পড়তে হচ্ছে। নাউতরা ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম লেলিন বলেন, জরুরী ভিত্তিতে চলাচলের জন্য নৌকা ব্যবহার করা হচ্ছে।
নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাহিনুর আলম ও ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম ডিমলার বন্যা কবলিত এলাকার পরিদর্শনে আছেন। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, টানা বৃষ্টির কারনে ডিমলাসহ আশেপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান, আজ শনিবার তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি সকাল ৬টা হতে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উজানের ঢল ও বৃস্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।