নুসরাতের লেখা চিঠি উদ্ধার

প্রকাশঃ ২০১৯-০৪-১১ - ১১:৩০

ঢাকা অফিস : যৌন নিপীড়নের অভিযোগে কারাগারে থাকা ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে যারা অংশ নিয়েছিলো তাদের প্রতি ক্ষোভ ছিলো নিপীড়নের শিকার মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাতের। তবে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিতের জন্য শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবার সংকল্প করেছিলেন তিনি। নুসরাতের পড়ার টেবিল থেকে উদ্ধার করা এক চিঠিতে জানা গেছে এ সব কথা।

নুসরাত যে মাদ্রাসার ছাত্রী সেই ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা তার উপর গত ২৭ মার্চ যে যৌন নিপীড়ন চালিয়েছিলেন তার বর্ণনা রয়েছে চিঠিটিতে। এজন্য নুসরাতকে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভনও দেখিয়েছিলেন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা।

চিঠিতে নুসরাত লেখেন এ ঘটনায় তিনি আত্মহত্যা করবেন না। তবে সিরাজউদ্দৌলা গ্রেপ্তার হলে তার মুক্তির দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বান্ধবীদের অংশগ্রহণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন নুসরাত। শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত অপরাধীদের বিরুদ্ধে লড়াই যাওয়ার প্রত্যয় ছিলো চিঠির ভাষায়।

পুলিশের ধারণা, চিঠিটি তার দুই বান্ধবী তামান্না ও সাথীকে উদ্দেশ্য করে লেখা। চিঠিটি আলামত হিসেবে জব্দ করেছেন তারা।

বুধবার রাত, সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত। বার্ন ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্তলাল সেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, ‘নুসরাতকে বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু শরীরের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া রোগীকে বাঁচানো খুবই কষ্টকর।’

এদিকে, সোনাগাজীর অগ্নিদগ্ধ মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত পাঁচ দিন ধরে নুসরাত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে নেয়ার কথা থাকলেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া সম্ভব হয়নি।

ফেনীর সোনাগাজীতে ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। এরপর, অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে প্রথমে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ফেনী সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু, শরীরের সত্তর শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় নুসরাতকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেয়া হয়।

প্রসঙ্গত, গেল ৬ই এপ্রিল সকালে সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে গেলে, নুসরাত জাহান রাফিকে পরীক্ষা কেন্দ্রের ছাদে ডেকে নিয়ে শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে বলা হয়।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গেল ২৭শে মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন নুসরাত জাহান রাফির মা। মামলার এজহারে বলা হয়, ২৭শে মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষ তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে নুসরাতকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধাঘন্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। পরে, পরিবারের করা মামলায় গ্রেপ্তার হন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা।

শ্লীলতাহানির অভিযোগে করা ওই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার লোকজন মামলা ও অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য চাপ দেয়। পরে, নুসরাত মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানালে মুখোশ পরা লোকজন তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।