পাইকগাছা প্রতিনিধি : বাংলাদেশের চির পরিচিত ঐতিহ্যবাহী ও মাইকেল মধুসুদন দত্তের স্বপ্নের কপোতাক্ষ নদ মৃতপ্রায় অবস্থানে রয়েছে। যশোর, সাতক্ষীরা অঞ্চলের কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনে কিছু সংস্কার হলেও পাইকগাছার অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত সুন্দরবন সংলগ্ন কপোতাক্ষ নদ মৃতপুরিতে পরিণত ও দখলবাজদের অবৈধ দখল হলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে নাই। দ্রুত নদের সংস্কারের দাবীতে এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে।
ঐতিহ্যবাহী কপোতাক্ষ নদ উত্তরবঙ্গ থেকে প্রবাহিত হয়ে সমুদ্র উপকূলবর্তী পাইকগাছা উপজেলার রাড়–লী ও চাঁদখালী ইউনিয়নের ভিতর দিয়ে কয়রা হয়ে সুন্দরবন অভিমুখে প্রবাহিত হয়েছে। উক্ত নদের প্রায় ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এলাকা দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে রাড়–লী ও চাঁদখালী ইউনিয়নের পার্শ্ববতী এলাকা চরম ঝুকির মধ্যে পড়েছে। এক কালের প্রবহমান কপোতাক্ষ নদ আজ মৃত্যু প্রায়। কালের বিবর্তনে নদটি ভরাট হওয়ায় দু’পাড়ে জেগে উঠেছে বিশাল বিশাল চর। যা একের পর এক দখল করে নিচ্ছে ভূমি দস্যুরা। হারিয়ে যাচ্ছে কপোতাক্ষের অতীত, ঐতিহ্য। এছাড়া নদের চরভরাটি জায়গায় জনগণের বসতবাড়ী ও সরকারিভাবে আদর্শ গ্রাম নির্মাণ করায় দখলবাজদের অধীনে চলে যাচ্ছে সমস্ত এলাকা। জোয়ারের সময় কপোতাক্ষ নদে কোন পানিই ওঠে না। রাড়–লী ইউনিয়নের স্যার পিসি রায়ের প্রতিষ্ঠিত আর.কে.বি.কে কলেজিয়েট স্কুল হতে কাটিপাড়া বাজার হয়ে বাঁকা বাজারের পার্শ্ব দিয়ে কাটাখালী পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এবং কাটাখালী হতে চাঁদখালী বাজারের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত সুন্দরবন অভিমুখে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদের দু’পার দিয়ে পলি জমে প্রায় ভরাট হয়ে গেছে। উক্ত সীমানার দু’পার দিয়ে একাধিক স্লুইচ গেট থাকলেও পানি সরবরাহ করতে না পারায় তা সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে চাঁদখালী ও রাড়–লী ইউনিয়নের হাজার হাজার জনগণ বর্ষা মৌসুমে কপোতাক্ষ নদের নাব্যতার অভাবে এবং পানি সরবরাহের জন্য পাউবো কর্তৃক স্থাপিত স্লুইচ গেটগুলো অকেজো হয়ে পড়ায় পানিবন্ধী হয়ে পড়ে। ক্ষতি হয় হাজার হাজার বিঘা ফসলী জমি ও মৎস্য লীজ ঘের। অথচ কয়েক বছর পূর্বে এ নদে সব সময় চলতো অসংখ্য নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। ইঞ্জিন না থাকলেও পাল তোলা নৌকায় বসে মাঝিরা চলতো তাদের গন্তব্যে। এ নদ ছিল অনেকের জীবন-জীবিকার বড় রকমের উৎস। যার মধ্যে মাছ শিকার, মাঝিদের খেয়া পারাপার, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াত, কিংবা নৌভ্রমণ। যা আজ শুধুমাত্র কালের সাক্ষী হয়ে আছে। এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিশাল এলাকা জুড়ে নতুন নতুন চর জেগে উঠেছে। যা দখলের পর দখল হয়ে যাচ্ছে। জেগে উঠা চরের কোথাও কোথাও লাগানো হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। তৈরী করা হয়েছে, পাকা ও কাঁচা-পাকা একাধিক বসত বাড়ী এবং ইটের ভাটা। আবার নদের জেগে ওঠা চর ভূমিদস্যুরা অবৈধ দখল করে মৎস্য লীজ ঘের পরিচালনা করছে। বড়ই পরিতাপের বিষয়, বাংলাদেশের চির পরিচিত মাইকেল মধুসুদন দত্তের স্বপ্নের কপোতাক্ষ নদ এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ ভূমি কর্মকর্তারা ভূমিদস্যুদের নিকট হতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ইজারা প্রদান করে গেছেন। যে কারণে উক্ত নদে জবর দখলের ফলে নতুন নতুনভাবে ভরাটের প্রবণতা বেশি দেখা দিয়েছে। যে কারনে ক্রমেই সংকীর্ণ হচ্ছে নদের আয়তন। নদের বুক উচু হওয়ায় জোয়ারের পানি একটু অস্বাভাবিক হলেই উক্ত এলাকার ভেতরে পানি ঢুকে প্লাবিত হয় বিভিন্ন অঞ্চল। এ মুহুর্তে নদটি খননের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে কপোতাক্ষ নদের মৃত ঘটতে পারে সুন্দরবন অভিমুখ পর্যন্ত। সাতক্ষীরা ও যশোরে কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন বেগবান হলেও পাইকগাছায় উক্ত আন্দোলনের অভাবে সরকারিভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে কপোতাক্ষের শেষ সীমানা পাইকগাছার রাড়–লী হতে সুন্দরবন অভিমুখ পর্যন্ত। এক্ষেত্রে কপোতাক্ষের উত্তরবঙ্গ থেকে প্রবাহিত পানি কপোতাক্ষের বুকচিরে প্রবাহিত না হওয়ার কারণে এ এলাকা লোকালয় থেকে পলি জমে উঁচু হয়েছে। শেষ সীমানা খননের অভাবে কপোতাক্ষের উত্তরবঙ্গের প্রবাহিত পানি কানাল ঘেষে শিবসা নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দীন বলেন, কপোতাক্ষ নদ খননের ব্যাপারে সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। যেভাবে নদের তলদেশ ভরাট হচ্ছে তাতে সমতল ভূমি হতে আর বেশি দিন বাকী থাকবে না। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব এ্যাডঃ শেখ মোঃ নূরুল হক বলেন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সংসদ অধিবেশনে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। মৃত এই কপোতাক্ষ নদ দ্রুত খননে দাবীতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী।