পাইকগাছায় প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হলো দুর্গোৎসব

প্রকাশঃ ২০২০-১০-২৭ - ১২:৪৬

মোঃ আসাদুল ইসলাম আসাদ, পাইকগাছা : ভক্তদের চোখের জলে ভাসিয়ে সপরিবারে দুর্গতিনাশিনী দেবী মা দুর্গা বাবার বাড়ি থেকে ফিরে গেলেন স্বামীর ঘর কৈলাসে। এর মধ্য দিয়ে শেষ হলো হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসব। সোমবার প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় পাঁচ দিনের এই মহা আয়োজন। পূজার শেষ দিনে পাইকগাছার পৌর সদরের সবগুলো মণ্ডপগুলোতে ছিল মানুষের ঢল। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, মানুষের মনের আসুরিক প্রবৃত্তি যেমন কাম, ক্রোধ, হিংসা, লালসা বিসর্জন দেওয়াই মূলত বিজয়া দশমীর মূল তাৎপর্য। এ প্রবৃত্তিগুলো বিসর্জন দিয়ে একে অন্যের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য।

পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্ত্যলোকে (পৃথিবী) আসেন এবং স্বর্গলোকে বিদায় নেন গজে গমন (হাতি) চড়ে। যার ফল হচ্ছে ফসল শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা। তবে ভক্তদের বিশ্বাস, ফসল শস্যপূর্ণা বসুন্ধরা পূর্ন করে মঙ্গলময়ী ও আনন্দময়ী দেবী দুর্গা সবার কল্যাণই করবেন।

গত পাঁচ দিনের আয়োজনে সেটাই ছিল মুল প্রার্থনা। পাইকগাছা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এবার উপজেলায় সর্বমোট ১৩৮ টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। মানুষের মধ্যে নিরন্তর শান্তি-সম্প্রীতির আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে এই উৎসব শুরু হয়েছিল। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তার পরিসমাপ্তি হলো।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে সোমবার ছিল সরকারি ছুটি। পাইকগাছা কয়রার মাননীয় সংসদসদস্য জনাব আলহাজ্ব মোঃ আক্তারুজ্জামান বাবু বিভিন্ন মন্ডপে উপস্থিত হয়ে সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সোমবার সকালে সব মণ্ডপে দশমী পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন করা হয়। বিষাদের ছায়া ছিল ঢাক-ঢোল, কাঁসর-ঘণ্টাসহ বিভিন্ন বাদ্যে, আলোকিত করা ধূপ আরতি ও দেবীর পূজা-অর্চনায়। বিসর্জনের আগে সকাল থেকে উপজেলার পৌর সদরের মন্দিরে চলে সিঁদুর খেলা আর আনন্দ উৎসব। প্রতিমা বিসর্জনের উদ্দেশ্যে উপজেলা কেন্দ্রীয় পুজা মন্দির থেকে কেন্দ্রীয় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হয়। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ নেচে-গেয়ে শোভাযাত্রাকে আরো বর্ণিল করে তোলে। অনেকেই দুর্গা, শিব ও মহিষাসুরসহ পৌরাণিক চরিত্রের নানা সাজে শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। যাত্রাপথে রাস্তার দুই পাশে এবং আশপাশের ভবনের ছাদ-বারান্দায় দাঁড়িয়ে অসংখ্য মানুষ শোভাযাত্রাকে স্বাগত জানায়। দুপুরে পূজা উদযাপন পরিষদ এর উদ্যোগে বের হয় পৌর সদরের উপজেলা কেন্দ্রীয় সর্বজনিন পূজা মন্দির, পৌর কেন্দীয় পূজা মন্দির, বাজার পূজা মন্দির, শিববাটি পূজা মন্দির, সরল দাশপাড়া পূজা মন্দির ও শিববাটি উত্তর পাড়া পুজা মন্দির। মোট ৬ টি পুজা মন্ডপের হওয়া এই বর্ণাঢ্য বিজয়া শোভাযাত্রাটি পৌর সদরের মেইন মেইন সড়ক প্রোদক্ষিন করে শিববাটি পুরাতন পেরিঘাটে পৌছায়। ঢাকের শব্দে আর ধূপের গন্ধে মুখরিত হয়ে ওঠে শিববাটি পুরাতন ফেরিঘাট এলাকা।

যাত্রাপথে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সংশ্লিষ্ট সড়কগুলোতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করা হয়। বিপুলসংখ্যক পুলিশের পাশাপাশি আনসার বাহিনির সদস্যরাও মাঠে ছিলেন। এ সময় কপোতাক্ষ ও শিবসার মোহনা ও ব্রীজের উপরে হাজারো ভক্ত ও দর্শনার্থী প্রতিমা বিসর্জন দেখতে ভিড় করে। সেখানে ‘দুর্গা মায় কী জয়’, ‘আসছে বছর আবার হবে’ ইত্যাদি ধ্বনি ও উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বহনকারী নৌকাগুলো মাঝনদীতে গিয়ে বিসর্জন দেয় প্রতিমা। বিসর্জনের এই পর্ব চলেছে সন্ধা অবধি। অনেকে প্রতিমা বিসর্জনের সময় নৌকায় করে নদীতে আনন্দ করে। এরপর ভক্তরা শান্তিজল গ্রহণ ও মিষ্টিমুখ করে। প্রথা অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জনের পর সেখান থেকে শান্তিজল নিয়ে আসা হয়।