পাইকগাছায় ভাটা শ্রমিকের আঘাতে গৃহবধূর গর্ভপাতের অভিযোগ, মৃত সন্তান প্রসব

প্রকাশঃ ২০২১-১০-০৫ - ০৮:০৪

ইউনিক  প্রতিবেদক:

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালি ইউনিয়নে ইট ভাটা শ্রমিকের বেপরোয়া আঘাতে ময়না বেগম (২৪) নামে এক গৃহবধু মৃত সন্তান প্রসব করেছেন। রবিবার সকাল সাড়ে ১১টায় চাঁদখালি ইউনিয়নের চাঁদখালি বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ময়না বেগম ওই গ্রামের মাংস বিক্রেতা মিজানুর সরদারের স্ত্রী। তবে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ঘটনার সাথে তাদেরকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে বলে অভিযুক্তরা দাবি করেছেন।  

ভূক্তভোগীর স্বামী জানান, রবিবার সকাল ১১টায় চাঁদখালী বাজারে পার্শ্ববর্তী কালিদাসপুর গ্রামের মৃত আবুল গাজীর ছেলে জিয়ারুল রহমান ওরফে চাকা আমার দোকানে মাংস কিনতে আসে। তার মাংসে এক টুকরো চর্বি দেওয়ায় সে আমাকে গালিগালাজ করে। পরে মাংস থেকে চর্বি ফেরত নিলেও সে আমাকে গালাগালি ও মারধর করে। মারামারির ঘটনা শুনে আমার স্ত্রী বাজারের পাশের বাড়ী থেকে ছুটে আসে। এ সময় জিয়ারুল রহমান চাকা ও তার সহযোগী ঘের ব্যবসায়ী কালিদাসপুর গ্রামে আজিজুল ইসলাম আমার স্ত্রীকেও মারপিট করে। এক পর্যায়ে তারা তার পেটে লাথি মারলে ছয় মাসের গর্ভবতী স্ত্রী ময়না মাটিতে লুটিয়ে পড়ে এবং রক্তক্ষরণ শুরু হয়। পরবর্তীতে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হলে রাতেই তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালের জরুরী বিভাগেই সে মৃত সন্তান প্রসব করে। আমার স্ত্রী হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে সোমবার বাড়িতে ফিরে যায়। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, রবিবার মধ্যরাতে পাইকগাছা থেকে ময়না নামক গৃহবধূ রক্তক্ষরণ নিয়ে আমাদের হাসপাতালে আসে। পরে সে মৃত সন্তান প্রসব করে। প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল যা চিকিৎসার মাধ্যমে বন্ধ করা হয়। তাকে গুরুত্বর অবস্থায় মেডিকেল কলেজের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে রাখা হয়। কোন বড় আঘাতের কারণে তার এ দূর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে তিনি ধারণা করছেন। সে শঙ্কামুক্ত হওয়ায় সোমবার তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ময়না বেগম বলেন, চাঁদখালী বাজারের পাশে আমাদের বাড়ী। রবিবার সকালে আমার স্বামীর মারামারি ঘটনা শুনে বাজারে গেলে কালিদাসপুর গ্রামের জিয়ারুল চাকা ও আজিজুল আমাকেও মারপিট ও তলপেটে লাথি মারে। লাথির কারণে আমার পেটে প্রচন্ড ব্যাথা ও রক্তপাত শুরু হয়। হাসপাতালে আসার পরে মরা সন্তান জম্ম হয়। ওরা আমার যাদুডারে মারি ফালাইছে আমি এর বিচার চাই, শাস্তি চাই।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত জিয়ারুল রহমান চাকার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি কোনভাবেই এ ঘটনার সাথে জড়িত না। ওই মহিলার পেটে কোন বাচ্চাই ছিল না। তারা কোথা থেকে মরা বাচ্চা এনে নাটক সাজাইছে। ওই মহিলা ও তার স্বামী কেউ ভাল না। এটা একটা চক্রান্ত।

অপর অভিযুক্ত ঘের ব্যবসায়ী আজিজুল ইসলাম মুঠোফোনে এ বিষয়ে বলেন, আমি ছিলাম না আর এ বিষয়ে জানিও না। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এরা আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল তাই আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘটনাটি চাঁদখালী বাজারে ঘটেছে সেখানে অনেক লোকজন উপস্থিত ছিলো। ওই মহিলাকে কোন মারধোর করা হয়নি। তার স্বামীর সাথে জিয়ারুলের মারামারির ঘটনা ঘটেছিল। আর আমরা দোষী হলে আমাদের শাস্তি হবে তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।

গৃহবধূ নির্যাতনের বিষয়ে পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ এজাজ শফি বলেন, গৃহবধূর পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোন অভিযোগ করেনি। তবে আমি মিডিয়া কর্মীদের কাছ থেকে বিষয়টি জেনে খোঁজখবর নিতে ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়েছি। বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে গ্রুপিং সংক্রান্ত হতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।