পাইকগাছা প্রতিনিধি : পাইকগাছায় কপিলমুনি মেহেরুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক অজিয়ার রহমান অকাল মৃত্যুর ঘটনায় এলাকায় নানান রহস্য দেখা দিয়েছে। প্রিয় শিক্ষকের ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, দাম্পত্য কলহ, অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান বা অন্য কারোর সাথে অন্তর্কলহে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নিল কিনা এ নিয়ে কোটা এলাকায় নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী আমজাদ হোসেনের মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত কপিলমুনিতে মেহেরুন্নেছা বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক হিসেবে উপজেলার ভিলেজ পাইকগাছা গ্রামের ছমির গাজীর পুত্র অজিয়ার রহমান ২০১১ সালে যোগদান করেন। অজিয়ার রহমান সহকর্মী সহ শিক্ষার্থীদের কাছে প্রিয় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত এবং এলাকাবাসীর কাছে অসম্প্রদায়িক ও সদালপী আদর্শবান শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি বিদ্যালয়ের পাশে রামনগর গ্রামে বিবাহ করেন এবং ব্যক্তিগত জীবনে নিঃসন্তান ছিলেন। তার মৃত্যুকে ঘিরে নানান রহস্য দেখা দিয়েছে। এদিকে, প্রিয় সন্তানকে হারিয়ে শোকাহত পরিবার বুকে পাথর বেঁধে অজানা আতংকে মুখ খুলতে চাচ্ছে না, তবে মৃতের স্ত্রী সাজেদা খাতুন স্বামীর অকাল মৃত্যুর জন্য প্রকাশ্যে লোকের সামনে ঐ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে ইঙ্গিত করে নানান প্রলাপ করে দায়ী করেছেন। এলাকায় জানাজানি হলে অজিয়ারের মৃত্যু রহস্য নানা জট খুলছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যালয়ের আর্থিক সংক্রান্ত বিষয়ে অন্তর্কলহ, আর্থিক সংক্রান্ত ও পারিবারিক দ্বন্দ্বে পড়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছেন বলে কেউ কেউ দাবী করেছেন। মৃত্যুর ২দিন আগে ১৩ মার্চ ২দিনের ছুটি চাওয়ার পর প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অজিয়ার রহমান অসুস্থ হয়ে পড়ে বিভিন্ন জায়গায় জানান দেন তাকে র্যাব দিয়ে ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক সম্পা এ বিষয়ে এড়িয়ে বলেন, স্যার অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি ও সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালাম, বিশ^জিত দে শ^শুর বাড়ি রামনগরে পৌছে দিয়ে চিকিৎসার কথা বলি। অভিযোগ উঠেছে, এর আগে প্রধান শিক্ষিকা, শিক্ষক অজিয়ার রহমানের অন্তর্কলহের জেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ১৪ মার্চ চিকিৎসার জন্য অজিয়ার দম্পত্তি খুলনায় গিয়ে চিকিৎসা শেষে শালিকার বাসায় ওঠেন। বাসায় ওঠেই সে বাথরুমে যেয়ে হারপিক পান করলে তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৫ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। হারপিক পানের বিষয়টি তার বাড়িতে খবর পৌছায়নি। ময়না তদন্ত ছাড়াই শুক্রবার তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। তার মৃত্যুর খবর শুনে তার গ্রামের বাড়িতে কপিলমুনি, কলেজ, স্কুল সহ বিভিন্ন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, বিশিষ্টজন, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা আসলেও প্রধান শিক্ষিকা রহিমা আক্তার সম্পা অনুপস্থিতিতে নানান প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অজিয়ারের মৃত্যুর এক সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও ঐ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তার কোন শোক সভা করা হয়নি। এ কারণে খোদ শিক্ষার্থী কপিলমুনির বিশিষ্টজনদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্ত অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সম্পা অস্বীকার করে জানান, ঘটনার দিন স্যার র্যাব দিয়ে তাকে ধরানো হচ্ছে এমন অভিযোগ তুললে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। এক পর্যায়ে তাকে বাসায় পৌছে দেয়। স্যার ছুটি নিয়ে খুলনায় চিকিৎসা নিতে গেলে শুনি বুধবারে সে হারপিক পান করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং সেখানে তার মৃত্যু হয়েছে। কেন তার বাড়িতে যাননি বা এ পর্যন্ত শোক সভা করা হয়নি এ প্রশ্ন করা হলে সম্পা বলেন, অজিয়ারের স্ত্রী আমাকে নিয়ে যে পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন যে কারণে যায়নি এবং আমার সম্বন্ধে আনীত অভিযোগগুলো অহেতুক ও ভিত্তিহীন। ২৫ মার্চ বিদ্যালয়ে শোক সভা বিষয়ে সভা ডাকা হয়েছে বলে তিনি জানান।