পাল্টে গেল খুমেক হাসপাতালের খাবার বন্টননীতি

প্রকাশঃ ২০১৮-০১-২৭ - ১৪:০১

কামরুল হোসেন মনি, খুলনা : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) রোগী ভর্তি হলেই খাবার সরবরাহ পাচ্ছেন। আগে নির্দিষ্ট শয্যা সংখ্যার বেশি ভর্তি রোগীর জন্য খাবার বরাদ্দ ছিল না। হাসপাতালটির জন্মলগ্ন থেকে এই নিয়মটি চালু ছিল না। অবশেষে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে এই সুবিধা পাওয়ায় হতদরিদ্ররা স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন। গত ২৫ জানুয়ারি থেকে হাসপাতালে এই সুবিধা পেতে শুরু করেছে।
খুমেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ এটি এম মঞ্জুর মোর্শেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল ও চিকিৎসা শিক্ষাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত সভায় এই রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ওই সিদ্ধান্তটি আমি আসার আগে কেউ যদি চালু করে যেত তাহলে এতদিন হতদরিদ্ররা খাবারের জন্য হাহাকার করতো না। বিষয়টি আমি অবগত হওয়ার পর দেরি না করেই নিয়মটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছি। এছাড়া  শ্রেণিবিন্যাস চার্টে নতুন পরিচালন কোড সংযোজন হয়েছে। যার কারণে আর হাসপাতালের নামে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কোন জটিলতা থাকলো না। এতে হাসপাতালে রোগীর সেবার মান বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি হাসপাতালের জন্য অতিপ্রয়োজনীয় ভারী যন্ত্রপাতি চাহিতা পূরণেও প্রয়োজনে অর্থ বরাদ্দ পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতার অবসান হলো। তিনি বলেন, ওইসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার কারণে এখন আগের চেয়ে হাসপাতালে সেবার মান আরও বৃদ্ধি পাবে।
হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ বেলাল হোসেন বলেন, গত বুধবার শয্যা সংখ্যার বেশি রোগী ভর্তি হলে ওই সব রোগীরা খাবার পেতো না। এখন থেকে কোন রোগী ভর্তি হলেই তার জন্য খাবার বরাদ্দ রয়েছে। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার ৭৯৯ জন ও শুক্রবার ৭২২ জন ভর্তি রোগীকে খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। যদি এর চেয়ে আরও বেশি রোগী ভর্তি হয় তাও রোগীরা খাবার পাবে। যতই রোগী ভর্তি থাকুক না কেন। এর আগে বুধবার ৫শ’ শয্যা সংখ্যা রোগী ভর্তি ব্যতীত কেউ খাবার পেতেন না। এখন তার অবসান হয়েছে।
হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সিনিয়র স্টাফ নার্স নিলা বড়াল বলেন, এখানে যেসব রোগী ভর্তি হতো তার মধ্যে অধিকাংশই হতদরিদ্র পরিবার। সর্বমোট ২৮ বেডের ভর্তি রোগীদের আগে খাবার সরবরাহ করা হতো। এর বাইরে ২০-২৫ জন রোগী শয্যা ছাড়া ভর্তি থাকতো। যারা নিত্যন্ত গরিব তারা একটু খাবারের জন্য আমাদের কাছে ছুটে আসতো। এখন সবাই খাবার পাচ্ছেন তিন বেলা। এখন ওরাও খুশি, আমরাও খুশি।
শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালে গেলে, জসিমের স্ত্রী নাসিমা খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে হাসপাতাল থেকে তিন বেলা খাবার পেয়েছি। গত ১৮-২০ দিন তার স্বামী গরম তেলে ঝলসে গিয়ে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অভাবের সংসার, চিকিৎসার ব্যয় মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেয়ে হয়। খাবার পাবো কই, ওই সময় নার্স খাবারের কথা বললেও তারা দিতে পারতো না। এখন পাচ্ছি। একই কথা বললেন, ভর্তি হওয়া হতদরিদ্র রোগীরা। তারাও এখন তিন বেলা খাবার পাওয়ায় খুব খুশি।
জানা গেছে, বাংলাদেশ মহা-হিসাবনিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক বরাবরে দেওয়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের ২১ নম্বর স্মারকের পত্রে উল্লেখ করা হয়, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনুকূলে যে কোড নম্বর সংযোজন করা হয়েছে সেটি হচ্ছে ২৭৪১। এছাড়া হাসপাতালের পরিচালক কোড নম্বর ০১৫০। উক্ত পত্রের অনুলিপি দেওয়া হয়, বাংলাদেশ সচিবালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব, পিইএমএস কর্মসূচির কর্মসূচি পরিচালক (যুগ্ম সচিব), উপ-কর্মসূচি পরিচালক (শ্রেণিবিন্যাস), উপ-সচিব/সিনিয়র সহকারী সচিব (বাজেট শাখা/অধিশাখা-৪), বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মোঃ মিজানুল করিম বরাবরে।
২০১৫ সালের ১১ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল ও চিকিৎসা শিক্ষাসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত সভার ৯ নম্বর সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, শয্যা সংখ্যার অতিরিক্ত রোগীর পথ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণের জন্য যথাসম্ভব পরিকল্পনা প্রণয়ন করে, সে মোতাবেক ঘাটতি বাজেট প্রদানের জন্য চাহিদা প্রেরণ করতে হবে।