ঢাকা ডেস্ক:
রাজধানীর পুরান ঢাকার আরামানীটোলায় একটি ভবনের রাসায়নিক গুদামের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরও দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল চারজনে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, ভোররাত সোয়া তিনটার দিকে ওই ভবনে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট ৩ ঘণ্টার চেষ্টার পর আজ সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। ওই ভবনের পাশের একটি ভবনের একজন বাসিন্দা অভিযোগ করেন, ওই ভবনের নিচে রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। তাঁর দাবি, আশপাশের প্রায় সব ভবনেই এ ধরনের গুদাম রয়েছে।
বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন ফকির জানান, ভবনের একদম ওপরের তলায় নিরাপত্তারক্ষীর কক্ষ থেকে তাঁরা ওয়ালিউল্লাহ ও কবির নামের দুজনের মরদেহ উদ্ধার করেছেন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লাশ দুটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে সকালে রাসেল ও সুমাইয়া নামে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সুমাইয়া ইডেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বলে জানায় পুলিশ। আর ওয়ালিউল্লাহ ওই ভবনের নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। প্রথমে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, রাসেল ওই ভবনের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন।
এ ঘটনায় ১৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, তাঁদের মধ্যে ১৪ জন ভবনের বাসিন্দা। আর ৩ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। তিনি বলেন, ধোঁয়ার কারণেই বেশির ভাগ মানুষ অসুস্থ হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিটফোর্ড হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক চিকিৎসক সামন্ত লাল সেন জানান, সেখানে চিকিৎসাধীন চারজনের শরীরের ২৫ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। তাঁদের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান জানান, ভবনের বাসিন্দাদের জানালার গ্রিল কেটে বের করে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো বোঝা যায়নি। ফায়ার সার্ভিস তদন্ত কমিটি গঠন করবে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, আগুন লাগার পরপর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় ভবনের নিচতলা। ধীরে ধীরে ধোঁয়া উঠতে থাকে ওপরের দিকে। এতে ওপরের তলার বাসিন্দারা আগুনের বিষয়টি টের পান। এ সময় মানুষজন বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেও ধোঁয়া ও আগুনের কারণে বের হতে পারেননি। তাঁরা ওপরের দিকে উঠতে থাকেন। তবে ভবনের ছাদ তালাবদ্ধ থাকায় কেউ ওপরে উঠতে পারেননি। বিভিন্ন ফ্লোরে আটকে থাকা লোকজন চিৎকার করতে থাকেন। আটকে পড়া বাসিন্দারা বারান্দা ও জানালা থেকে মোবাইলের আলো জ্বেলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন
ভোর পৌনে ৫টার দিকে বিভিন্ন ফ্লোর থেকে অন্তত ১৩/১৪ জনকে ক্রেন ব্যবহার করে বের করে আনেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। তাঁরা বারান্দার গ্রিল কেটে বাসিন্দাদের উদ্ধার করেন। পরে একে একে আটকে পড়া সবাইকে উদ্ধার করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ভবনটির নিচতলায় রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে বলে জানিয়েছেন এক প্রতিবেশী।