নিজস্ব প্রতিবেদক :
হত্যা করা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মওদুদ আহমদকে এমনটাই দাবি করেছেন তাঁর স্ত্রী হাসনা মওদুদ। হাসনা মওদুদ বলেন, ‘তিনি (মওদুদ) করোনায় মারা যাননি। তাঁর অসুখ ধরা যায়নি। আমি শুনেছি, তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমাকেও হয়তো কেউ মেরে ফেলবে।’
আজ শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে মওদুদ আহমদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় এমন অভিযোগ করেন হাসনা মওদুদ। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ স্মৃতি পরিষদ এই স্মরণসভার আয়োজন করে।
হাসনা মওদুদ আরো বলেন, ‘মওদুদ সাহেবের শূন্য স্থান আমি শূন্য হতে দেব না। আমি তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করব। আমার নোয়াখালী–৫ আসনের গরিব মানুষের পাশে থাকব। আমি চেষ্টা করব, মওদুদ যেভাবে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করে গেছেন, সে রকম করেই আমার এলাকায় সেবা করব।’
মওদুদ আহমদকে স্মরণের ভালো উপায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ডাকা হরতালে সাড়া দিয়ে আইনজীবীদের আধা বেলা কাজ না করা দরকার বলে মনে করেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘দেশে দুর্ভিক্ষের কাছাকাছি অবস্থা, গণতন্ত্রহীনতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রয়োজন। ২৮ মার্চ বাম দলসহ অনেকেই হরতাল ডেকেছেন। আমি আশা করছি, সেদিন আধা বেলা আইনজীবীরা কোর্ট নাই–বা করলেন। জনগণের কাতারে এসে জনগণকে সাহস জোগালেন। আপনাদের সাহস জোগানোই হবে মওদুদ আহমদকে স্মরণ করার সবচেয়ে ভালো উপায়।’
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আবদুল মতিন বলেন, মওদুদ সাহেব প্রমাণ করে দিয়েছেন, আপনি যতই ব্যস্ত থাকেন, আপনার কিছুসংখ্যক মামলা থাকতে হবে গরিবদের। এ জন্য তাঁকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।
ব্যারিস্টার আমীর–উল ইসলাম বলেন, ‘তাঁকে (মওদুদ) বলতাম, আপনি যে বইগুলো লিখেছেন, সেগুলোর মাঝেই আপনি বেঁচে থাকবেন। আজ আমি লক্ষ্য করলাম, তিনি তাঁর লেখনীতে বেঁচে আছেন।’
একজন রাজনীতিবিদকে মূল্যায়ন করার জন্য সময়ের প্রয়োজন উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, মওদুদ যে দলেই থাকেন না কেন, তাঁর একটা উদার রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক চেতনা ছিল।
ইতিহাসের কাছে তিনি সৎ থাকার চেষ্টা করেছেন। আগামী প্রজন্মের জন্য তিনি যে শিক্ষা বইয়ের মধ্যে রেখে গেছেন, ইতিহাসের মাপকাঠিতে সেখানেই ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের চূড়ান্ত বিচার হবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, মওদুদ আহমদ নাকি বারবার দল বদল করেছেন। দল বদল করলে অসুবিধা কী? এরকম পরিবর্তন যখন হয়, তখন তিনি কি সুবিধাবাদের দিকে যান নাকি জনগণের পক্ষে থাকেন। সেটাই বড় কথা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মওদুদ আহমদ ব্যক্তিক্রমী ছিলেন উল্লেখ করে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তিনি বইয়ে নিজের বিশ্বাসের কথা বলতেন। তাঁর লেখার পরিপ্রেক্ষিতে দলের ভেতরে ঝড় উঠেছিল, তারপরও তিনি নিজের সিদ্ধান্তে স্থির ছিলেন।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ না খেয়ে আছে, হাহাকার। এ সরকার অন্ধ। মানুষের হাহাকার দেখে না। যেদিন দেশে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, স্বৈরাচারের পতন হবে, সেদিন মওদুদ ভাইয়ের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধা নিবেদিত হবে। মওদুদ ভাইকে যারা অপমানে জর্জরিত করেছে, তারা অচিরেই বিদায় নেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, সংগীত ব্যক্তিত্ব মুস্তাফা জামান আব্বাসী।