প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের টাকায় চিকিৎসা নেয়া হলো না সুমনের

প্রকাশঃ ২০২৩-০২-০৫ - ১৮:২০

ফুলতলা (খুলনা) প্রতিনিধি// শনিবার সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৫টা। খুলনার ফুলতলা শহীদ আসাদ-রফি গ্রন্থাগারে বন্ধুরা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তার জন্য আবেদন পত্রে স্থানীয় সংসদ সদস্যের সুপারিশ নিচ্ছিলেন। ঠিক একই সময়ে খুমেক হাসপাতালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সুমন। রোববার সকাল ১০টায় জানাযা শেষে ফুলতলা উপজেলা সংলগ্ন সরকারি গোরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

বিয়াল্লিশ বছর বয়সী সদা হাস্যোজ্জল সুঠামদেহী যুবক মোঃ ইদ্রিস সরদার ওরফে সুমন। উপজেলার দামোদর গ্রামের দমোকপাড়া মাঠসংলগ্ন মৃতঃ ইউনুছ সরদারের পুত্র। কিডনী বিকল দুরারোগ্যে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। আজ (সোমবার) কিডনী প্রতিস্থাপনের জন্য রাজধানীর সিকেডি হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল তার। একমাত্র বড় বোন অন্ধ রেহেনা বেগম (৪৮) তার ১টি কিডনী ¯েœহের ভাই সুমনকে দান করে তার চোখে পৃথিবীর আলো দেখবেন তিনি। কিন্তু বিধির লিখন না যায় খন্ডন। বোনের স্বপ্ন পুরনের দুদিন আগেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমাতে হয় সুমনের।
খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর মধ্যপাড়া গ্রামের ইউনুছ সরদারের পুত্র মোঃ ইদ্রিস আলী সরদার সুমন। তিন বছর বয়সে তিনি পিতাকে এবং তার অল্পদিনের ব্যবধানে তার মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে পড়েন সুমন। কখনও চাচা কখনও বা খালা-খালুর তত্বাবধায়নে বড় হতে থাকেন তিনি। ১৯৯৭ সালে দামোদর এমএম হাইস্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পাশ করে ভাগ্যান্বেষনে রাজধানীতে পাড়ি জমান সুমন। অনেক চড়াই উৎরাই পেড়িয়ে শেষটায় গ্রামীন ফোনে চাকুরী জোটে তার।

পরবর্তীতে ফুলতলা ইউনিয়নের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিয়ে করেন তিনি। কোল আলো করে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানও আসে তাদের ঘরে। ২০২১ সালের মাঝামাঝি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সুমন। চলতে থাকে চিকিৎসা। গত বছরের প্রথম দিকে পরীক্ষা নিরীক্ষায় ধরা পড়ে তার দুটি কিডনীই বিকল। চাকুরীও চলে যায় তার। এককালীন ৮ লাখ টাকা দিয়ে কর্মস্থল থেকে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় বাড়িতে। শারিরীকভাবে দূর্বল হয়ে পড়তে থাকেন তিনি। অন্যদিকে তাকে ছেড়ে একমাত্র কন্যাসহ স্ত্রী থেকে যান পিত্রালয়ে।

অসহায় এতিম সুমনের জায়গা হয় অন্ধ বোনের বাড়িতে। নিজের মটর সাইকেল বিক্রি ও আতœীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবের সহায়তায় চিকিৎসা ও ডায়ালসিস চলতে থাকে। আজ (সোমবার) কিডনী প্রতিস্থাপনের জন্য রাজধানীর সিকেডি হাসপাতালে যাওয়ার কথা ছিল তার। ১টি কিডনী দান করবে তার অন্ধ বোন রেহেনা। প্রয়োজনীয় অর্থসহায়তার জন্য মানবিক ফুলতলার পক্ষ থেকে ২লাখ টাকার ব্যবস্থা এবং ব্যাচ-৯৭ এর পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে তার একাউন্টে ৫৪হাজার টাকা জমা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে চিকিৎসা সহায়তার জন্য তার আবেদন পত্রে শনিবার বিকালে যখন স্থানীয় সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দ সুপারিশ করছিলেন- ঠিক একই সময়ে খুলনার একটা ডায়ালসিস সেন্টারে ডায়ালসিস চলাকালে গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে দ্রæত তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেয়ার পরপরই তার মৃত্যু ঘটে।