প্ররোচনা ক্ষোভ ও অপমানে খুলনায় আত্মহত্যা প্রবণতা বাড়ছে

প্রকাশঃ ২০১৭-১১-১৪ - ১৩:১১

ঝরে গেল চাঁদনী, জয়ী ও বন্যা

বি এম রাকিব হাসান, খুলনা : দিনের পর দিন বখাটে তরুণ, যুবক ও প্রেমিক নামধারী প্রতারকদের খপ্পড়ে পড়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যাচ্ছে তরুনীরা। মাত্র এক মাসের মধ্যেই খুলনার তিন তরুনী বখাটেদের উৎপাতে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। এরমধ্যে খুলনা সরকারী করোনেশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেনীর ছাত্রী সামসুন্নাহার চাঁদনী। এর কয়েকদিন পরে ২৭ অক্টোবর প্রতারক প্রেমিক অভিজিতের কারণে আত্মহত্যা করে দাকোপের বন্যা রায়। ৬ নভেম্বর বখাটে ইমজামামমুল হকের উত্যক্ত হতে রেহাই পেতে আত্মহত্যা করে আরেক তরুনী জয়ী মন্ডল। এই ঘটনা তিনটি নিয়ে অভিভাবক ও সচেতনমহল প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা রাজপথে আন্দোলন শুরু করে। এদিকে, সমাজে দিনের পর দিন এ ধরনের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবকসহ সচেতনমহল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবারিক বন্ধনে ধস, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ও পর্নোগ্রাফীতে অতিমাত্রায় আসক্তি এসব ঘটনার অন্যতম কারন। তাই সমাজ থেকে এসব নির্মূলে বা প্রতিরোধে সন্তানদের মানসিক পরিবর্তন ঘটাতে হবে। বিশেষ করে পারিবারিক শৃঙ্খলা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা, খেলাধূলা ও সাংস্কৃতিক চর্চায় উৎসাহিত করতে হবে। জানা যায়, দাকোপ উপজেলার বাজুয়া গ্রামের রবিন্দ্রনাথ মন্ডল ওরফে রবির ছেলে অভিজিৎ মন্ডলদের বাড়িতে বাজুয়া এসএন ডিগ্রী কলেজের মানবিক শাখার দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বন্যা রায় ভাড়া থাকতেন। সেই সূত্রে অভির সাথে বন্যার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। কিন্তু অভিজিৎ পরে বন্যার সাথে প্রেম অস্বীকার করে। বন্যা প্রতারিত হয়ে আত্মহননের পথ বেঁছে নেয়। বন্যা রায়ের পিতা অনিমেশ রায় বলেন, আমার মেয়ে বন্যার মৃত দেহের পাশে তার মুঠোফোন রাখা ছিল। তার পাশে ফোনের পাসওয়ার্ড লেখা একটি ডায়েরিসহ একাধিক প্রেম পত্র রাখা ছিল। আমরা তার মুঠোফোনের মাধ্যমে জানতে পারলাম অভিজিতের সাথে প্রেমের কারণে বন্যা আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনায় তিনি গত ৯ নভেম্বর থানায় আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলা দায়ের করে। পুলিশ প্রতারক প্রেমিক অভিজিতকে আটক করে। অভিজিতের বন্ধু স্বর্ণদীপ এখনও পলাতক রয়েছে। পুলিশ অভিজিতকে রিমান্ডে নেয়ার আবেদন করলে আদালত ১দিনে রিমান্ড মঞ্জুর করে। সোমবার তাকে খুলনা কারাগার থেকে দাকোপ থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অন্য দিকে, দাকোপের সরকারী এলবিকে কলেজের মেধাবী ছাত্রী জয়ী মন্ডল গত সপ্তাহে বাজুয়া এসএন ডিগ্রি কলেজের ছত্রলীগের সভাপতি ইনজামাম হক মির্জার হাতে লাঞ্ছিত হয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় ইনজামামুল হককে আসামী করে থানায় একটি আত্মহত্যায় প্ররোচনা মামলা দায়ের করা হয়। ঘটনার পর ইনজামামুল হক আত্মগোপন করে। পরে গত সপ্তাহে খুলনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত -১ মারুফ আহমেদের আদালতে জামিনের আবেদন করে আত্মসমর্পন করে ইনজামামুল হক। বিজ্ঞ বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিকে পুলিশ ইনজামামুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭দিনের রিমান্ড আবেদন করে। এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক কাজী নাজমুস সাকিব জানান, আসামী আড়াইটার দিকে আদালতে আত্মসমর্পন করে বলে জানতে পেরে তাৎক্ষণিক খুলনায় গিয়ে তাকে রিমান্ডে নেয়ার জন্য আবেদন করি। কিন্তু রিমান্ড শুনাণীর তারিখ এখনও জানতে পারিনি। অপরদিকে, খুলনা মহানগরীর লবনচরা থানা এলাকার সাচিবুনিয়া গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সার্জেন্ট রবিউল ইসলামের মেয়ে সামসুন্নাহার চাঁদনী প্রতিবেশী বখাটে যুবক শামিম হাওলাদার শুভ উত্যক্ত থেকে রেহাই পেতে আত্মহত্যার পথ বেঁেছ নেয়। এঘটনায় স্থাণীয় আওয়ামী লীগ নেত্রী মাফিয়া কবির , শুভর বাবা শাহ আলম হাওলাদার ও শুভর মা জাকিয়া বেগমকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লবণচরা থানার উপ-পরিদর্শক মোঃ ইউসুফ আলী হাওলাদার জানান, চাঁদনী আত্মহত্যা প্ররোচনা মামলার তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি মাসের যে কোনদিন আদালতে অভিযোগ পত্র দাখিল করা হবে।