আজগর হোসেন ছাব্বির,দাকোপঃ দাকোপের পল্লীতে নতুন বছরের শুরুতেই প্রেমের বলি হয়ে এক কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। একই ঘটনায় ৩ বছরের ব্যবধানে দু’বোনের আত্মহত্যা। ঘটনায় অভিযুক্ত প্রেমিক গা ঢাকা দিয়েছে। এ ঘটনায় দাকোপ থানায় প্রাথমিকভাবে অপমৃত্যু মামলা দায়েরসহ লাশ ময়না তদন্তে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
দাকোপে প্রেমঘটিত অপরাধ প্রবনতা সদ্যগত হওয়া বছরে যেখানে শেষ হয়েছিল নতুন বছর হয়ত সেখান থেকে শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালের শেষ দিকে পর পর দুই কলেজ ছাত্রী জয়ী মন্ডল এবং বন্যা রায়ের আত্মহত্যার পথ অনুসরন করে এবার আত্মহত্যা করলো উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নের রেখামারী গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের কন্যা চালনা এম এম কলেজের ডিগ্রী শেষ বর্ষের ছাত্রী নাজমা খাতুন (২১)। গত কয়েক বছর যাবৎ একই ইউনিয়নের জয়নাগর গ্রামের লক্ষিপদ বাছাড়ের পুত্র দেবাশিষ বাছাড়ের সাথে তার প্রেমের সর্ম্পক চলছিল। দেবাশিষ খুলনা বিএল কলেজের ছাত্র বলে জানা যায়। সরেজমিন ভুক্তভোগী পরিবার এলাকাবাসী ও থানা পুলিশ সুত্র জানায়, ধারাবাহিক প্রেমের অংশ হিসেবে গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে দেবাশিষ নাজমা প্রতিবেশী সন্ন্যাসী মন্ডলের বাড়ীতে মিলিত হয়। এ সময় এলাকাবাসী তাদের দেখে বিষয়টি নিয়ে ধিক্কার জানিয়ে নানা সমালোচনা করে তাদের ছেড়ে দেয়। ঘটনার পর দেবাশিষ নাজমার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে গা ঢাকা দেয়। এ অপমান সইতে না পেরে গত পহেলা জানুয়ারী সোমবার নাজমা তার মা নুরজাহান বিবির নিকট তাদের দীর্ঘদিনের সর্ম্পকের কথা প্রকাশ করে বলে “মা আমার যা কিছু দেওয়ার ছিল সবই দেবাশিষকে দিয়েছি,সুতরাং এখন আমি আর অন্য ছেলেকে বিয়ে করতে পারবোনা” এমন উক্তির পর সোমবার দিবাগত গভীর রাতে নিজ বাড়ীর আঙিনায় গাছের সাথে গলায় রশি দিয়ে নাজমা আত্মহত্যা করে। আত্মহত্যার পর নাজমার বুকের ভীতর থেকে তাদের দু’জনের যুগল ছবি উর্দ্ধার করা হয়। নাজমার মা মেয়ে হারানোর শোকে প্রলাপ করতে করতে বলে, ওর বাপ পঙ্গু আমি অন্যের বাড়ী ঝিয়ের কাজ করে সব ভাই বোনদের কলেজে পাঠিয়েছি। তিনি বলেন আমি জানতে পেরে দেবাশিষকে আমার বাড়ীতে দাওয়াত করে বুঝিয়েছি বাবা আমরা গরীব মানুষ, আমরা মুসলমান তুমি হিন্দু আমার মেয়ের কাছ থেকে তুমি সরে যাও, কিন্তু সে আমার কথা না শুনে এমন সর্বনাশ করলো, আমি ওর ফাঁসী চাই। নাজমার বড় ভাই হাবিবুর ডিগ্রীর ছাত্র সে ঢাকায় শ্রম বিক্রি করে নিজের পড়ালেখা অব্যহত রেখেছে। আর ছোট ভাই হাসান এবার ডিগ্রীতে ভর্তি হয়েছে। রোড এক্সিডেন্টে পঙ্গু হয়ে বাবা এলাকায় ঘেরে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে সন্তানদের মানুষ করার চেষ্টা করছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দাকোপ থানার এস আই নাজমুস সাকিবের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান পঞ্চানন মন্ডলের উপস্থিতিতে লাশ উর্দ্ধারে ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিল। এ ঘটনায় নাজমার পিতা লহর আলী শেখ বাদী হয়ে প্রাথমিকভাবে দাকোপ থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে বলে জানায় অফিসার ইনচার্জ শাহাবুদ্দিন চৌধুরী। উল্লেখ্য গত ৩ বছর পূর্বে নাজমার ছোটবোন তহমিনা দেবাশিষের কাছে প্রাইভেট পড়াকালিন এই প্রেমের বিষয়টি তার কাছে ধরা পড়ে। বিষয়টি তার পরিবারকে জানালে দেবাশিষ ও নাজমার পক্ষ থেকে ঘটনা অস্বীকার করে তহমিনাকে অপমান জনক কথা বলা হয়। সেই অপমানে তখন তহমিনা অনুরুপভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। নাজমার পরিবার ও এলাকাবাসী আত্মহত্যার জন্য দেবাশিষকে দায়ী করে তার উপযুক্ত শাস্থির দাবী জানিয়েছে।