ফুলতলা (খুলনা) প্রতিনিধিঃ খুলনার ফুলতলার খানজাহানপুর এলাকায় ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে ভৈরব নদী সংলগ্ন প্রায় ১শ’ বিঘা জমির আখ ক্ষেতে লোনাপানিতে প্লাবিত হয়ে আখ বিনষ্ট হয়েছে। ফলে শতাধিক কৃষকের কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার পারভীন সুলতানা, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশারসহ কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, গত ২০ মে রাতে ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে ভৈরব নদীর জোয়ারের লোনাপানির তোড়ে খানজাহানপুর গ্রামের কার্লভার্ট সংলগ্ন ভেড়িবাধ ভেঙে আখ ক্ষেত প্লাবিত করে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ২/৩ দিন পর লোনাপানি নেমে যায়। তবে লবনাক্ততার প্রভাবে শতাধিক কৃষকের মওসুমী ফসল ক্ষেতের আখ ধীরে ধীরে বাদামী বর্ণ ধারণ করে শুকিয়ে মারা যায়। এতে ক্ষতির পরিমান কোটি টাকা বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা চামেলী মল্লিকের দাবি। খানজাহানপুর গ্রামের আখ চাষী ইসলাম শেখ (৩৫) বলেন, ভৈরব পাড়ের নিজস্ব ৫০ শতাংশ জমিতে ব্যাংক ঋণ করে আখের আবাদ করেছি। এ পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এ ফসল উঠতে আরও ৫০/৬০ হাজার টাকা খরচ হবে। অন্যান্য বছরের গড় হিসাব অনুযায়ী ২ লক্ষাধিক টাকা বিক্রি হওয়ার কথা। কিন্তু লোনাপানি উঠে সম্পূর্ন আখই মরে গেছে। এখন চিন্তা একদিকে সারা বছরের ভরণ পোষন, অনদিকে ঋণ পরিশোধের। পার্শ্ববর্তী পায়গ্রাম কসবা গ্রামের বর্গাচাষী শেখ কামাল (৫০) বলেন, একটি এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ ও অন্যের দেড় বিঘা জমি বর্গা নিয়ে আখ চাষে নামি। আশ্বিন/ কার্ত্তিক মাসে ফসল বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করা হবে এমন ওয়াদা করে ফুলতলা বাজারের একটি দোকান থেকে সার ও কীটনাশক বাকিতে এনেছি। কিন্তু ঘুর্ণিঝড়ের সময় ভেড়িবাধ ভেঙে নদীর লোনা পানি উঠে ক্ষেতের সব আখ মরে যায়। এ অবস্থায় এনজিও ঋণ, বাকিতে আনা সার ও কীটনাশকের টাকা পরিশোধের চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া বন্ধ। চরের জমিতে বছরে একবার আখ চাষ করতে বিঘা প্রতি প্রায় এক লক্ষ টাকা খরচ করলে সাধারণত দেড় থেকে ২ লক্ষ টাকা বিক্রি হয়। এ কথা বলেন খানজাহানপুর গ্রামের প্রবীন আখ চাষী ওয়েজক্রণ শেখ (৬৫)। তিনি নিজস্ব আড়াই বিঘা জমিতে লক্ষাধিক টাকা ইতোমধ্যে খরচ করেছেন। আর ৩ মাস পর ফসল উঠলে সে টাকা দিয়ে সারা বছরের সংসারের ভরণ পোষনের ব্যায় নির্বাহ করা হয়। কিন্ত আকষ্মিক লোনাপানির প্লাবনে সবই শেষ।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ আখ চাষিদের পক্ষ থেকে শেখ হাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত ইউএনও বরাবর লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ভেড়িবাধ সংস্কারের জন্য অপর আখ চাষি শামীম শেখ ও তার পিতা মোজাফ্ফর শেখের নিকট ১০ হাজার টাকা গচ্ছিত রাখা হয়। কিন্তু যথাসময় কাজ না করে সে টাকা আত্মসাত করার কারণে জোয়ারের লোনাপানিতেই আখ চাষিরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ। তারা ক্ষতিপূরণসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। অপরদিকে গচ্ছিত টাকার কথা স্বীকার করে শেখ শামীম বলেন, যথাস্থানে ভেড়িবাধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু ঘুর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জোয়ারের পানির তোড়ে সেটি ভেঙে ক্ষেতে লোনাপানি উঠে। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে এলাকার ব্যক্তি বিশেষ আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পারভীন সুলতানা বলেন, ঘুর্ণিঝড় আম্ফান পরবর্তীতে কৃষকদের ফসলের ক্ষতি বিষটি জানতে পেরে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছাঃ রীনা খাতুনসহ সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। কার্লভার্ট সংলগ্ন ভেড়িবাধ ভেঙে লোনাপানিতে আখ ক্ষেত প্লাবিত হওয়ার ফলেই ক্ষেতর আখ শুকিয়ে যায়। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আবুল বাশার এ প্রতিনিধিকে জানান, ঘটনার পর পরই স্থানীয় ইউপি সদস্যদের নিয়ে আখ ক্ষেত পরিদর্শন করা হয়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রনোদনা প্রদান এবং টেকসই ভেড়িবাধ নির্মানের দাবি জানান।