ফুলতলায় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত চারাবাটি ঘাট বধ্যভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের কর্মসূচি পালিত

প্রকাশঃ ২০২১-১২-১৪ - ১৯:৫৮

তাপস কুমার বিশ্বাস, ফুলতলা (খুলনা)// খুলনার ফুলতলা উপজেলার জামিরা ইউনিয়নে পিপরাইল খাল অবস্থিত। এ খালের অদূরে জামিরা বাজারে ১৯৭১ সালে স্থাপিত হয়েছিল রাজাকার ক্যাম্প। এখানে রয়েছে খাল পারাপারের জন্য চারাবাটি ঘাট। মুক্তিযুদ্ধের সময় এ ঘাটে অসংখ্য মানুষকে ধরে এনে হত্যা করে ওই খালে ভাসিয়ে দেয়া হত। যে কারখে ঘাটটি বধ্যভ‚মিতে পরিণত হয়।

এপ্রিল মাস থেকে খুলনার বিভিন্ন থানা ও গ্রামে পর্যায়ক্রমে পাকবাহিনী, রাজাকার ও এদেশীয় দোসরদের অত্যাচার, নির্যাতন, অগ্রিসংযোগ, হত্যা, লন্ঠন, ধর্ষণ প্রভৃতির লীলাভ‚মিতে পরিণত হলেও ডুমুরিয়ার ধামালিয়া ইউনিয়ন প্রায় আগষ্ট মাস পর্যন্ত হানাদারদেরকে প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়। মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব থেকেই ডুমুরিয়ায় নকশালের অবস্থান শক্ত ছিল। তারা শ্রেণীশত্রæ খতম নামে এলাকার প্রভাবশালী ও বিত্তবানদের হত্যা ও তাদের ধন সম্পদ লুটপাট করত। অন্যদিকে উঠতি বয়সের তরুন ও বেকারদেরকে শ্রেণী শত্রæ খতম ও চটকদার শ্লোগানে আকৃষ্ট করে তাদেরকে দলে ভেড়াতো। ফলে তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে এলাকার শান্তিপ্রিয় মানুষ সুসংগঠিত হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। অপরদিকে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পিস কমিটি ও রাজাকার বাহিনী গঠনের পর তাদের সাথে নকশালের স্বার্থের সংঘাত বাধে। নকশালের বাধার কারণে রাজাকাররা আগষ্ট মাস পর্যন্ত ধামালিয়ায় প্রবেশ করতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে পিস কমিটি ও রাজাকার এক বিশাল বাহিনী নিয়ে ধামালিয়ায় হামলা চালালে প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়ে গ্রামবাসী অন্যত্র আশ্রয় নেয়। এ সময় তারা ব্যাপক লুটপাট ও ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। এরপর রাজাকার ও পিস কমিটির সদস্যরা প্রতারনামূলক এক কৌশল অবলম্বন করে। তারা বিভিন্ন স্থানে সভা করে এলাকার মানুষকে আশ^স্ত করে যে, তারা যদি আত্মসমর্পণ করে তবে তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে। কোন প্রকার ক্ষতি করা হবে না। সে অনুযায়ী এলাকার সাধারণ নিরিহ মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার জন্য এবং সহায়-সম্বল রক্ষার্থে জামিরা রাজাকার ক্যাম্পে এসে আত্মসমর্পন করে। এ সময় রাজাকাররা তাদের মধ্য থেকে শতাধিক যুবক বেছে নিয়ে পিপরাইল চারাবাটি ঘাটে এনে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। নিহতের মধ্যে পিপরাইল গ্রামের জামাল সরদার, জালাল বিশ্বাস, ওহাব আলী গাজী, আবু বকর মোল্যা, আলী গাজী, আহম্মদ ফকির, আজাহার মোল্যা, আব্দুল জলিল , আলী হাফেজ গাজী, সরব মোল্যা, গোলাম মোস্তফা আকুঞ্জি, খোকা মোল্যা, ও যশোরত খাঁ, ডাউকোনা গ্রামের গোলাম নবী, ও ইমান আলী, কাটেঙ্গা গ্রামের আফছার চৌধুরী, সিদ্দিক মোল্যা, নুরুদ্দিন মোড়ল, বাবর আলী হালদার ও হাফেজ হালদার ৩০জনের জনের পরিচয় পাওয়া গেলে আরও অনেকের পরিচয় এখনও জানা যায়নি। তবে নিহত আহম্মদ ফকিরের ভাইপো আবদুস সালাম ও জালাল উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে হানিফ বিশ্বাস বলেন, রাজাকাররা এ ঘাটে ফুলতলা ও ডুমুরিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে অসংখ্য লোককে রশি দিয়ে বেধে এনে গুলি করেছে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সেদিনকার লোমাহর্ষক ঘটনা মনে পড়লে আজও গা শিউরে উঠে।

এ ব্যাপারে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কাজী জাফর বলেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৭ বছর পর গত ২০২০ সালে প্রথম চারাবাটি ঘাটকে বধ্যভ‚মি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ১৯৭১ সালের শহীদদের স্মরণে পুস্পস্তবক অর্পণ এবং তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া আফরিন বলেন, গত বছর বধ্যভ‚মিটি স্বীকৃতি পাওয়ার পর স্মৃতিফলক স্থাপন ও কর্মসূচি পালন করা হয়। এ বছর যাতায়াতের জন্য রাস্তাকে প্রসস্থকরণে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।