কামরুল হোসেন মনি : বেড়েই চলেছে চালের দাম। প্রকার ভেদে কেজিতে ৩ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ভোজ্যতেল ও মুরগির দামও। ব্রয়লার ও কক কেজিতে বেড়েছে ২৫-৩০ টাকা। লুজ তেলে কেজিতে ৪ টাকা ও বোতলজাতে ৫ লিটারে বেড়েছে ১৫ টাকা। বেড়েছে মসুরির ডালও। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ ক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিক্রেতাদের দাবি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ৪০ টাকার নিচে কখনো চালের দাম আর আসবে না এমন ঘোষণার পর থেকে ভরা মৌসুমেও চালের দাম বাড়তির দিকে রয়েছে।
শুক্রবার নগরীর শেখপাড়া, নিউমার্কেট ও মিস্ত্রিপাড়া বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সাথে আলাপকালে বর্তমানে বাজারের এ চিত্র উঠে আসে।
শেখপাড়া বাজারের চাল বিক্রেতা মোঃ কাওছার এ প্রতিবেদককে জানান, জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে চালের দাম কমতির দিকে ছিল। ক্রেতারাও খুশি ছিলেন। কিন্তু গত ১ ফেব্রুয়ারি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ ৪০ টাকার নিচে কখনো চালের দাম আর আসবেনা এমন মন্তব্য করার পর থেকেই চালের দাম বেড়েই চলেছে।
তার দেওয়া তথ্য মতে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকার ভেদে চালের দাম কেজিতে ৩ টাকা থেকে ৮ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে স্বর্ণা মোটা চাল কেজিতে ৩৭ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ইরি আটাশ নামক চাল ৪২ টাকার পরিবর্তে ৪৫ টাকা, মিনিকেট ৫২ টাকার পরিবর্তে ৫৮-৬০ টাকা, ভাইটেল ৫০ টাকার পরিবর্তে ৫৫ টাকা, বাসমতি চাল ৬২ টাকার পরিবর্তে ৬৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু চালের দামই বাড়েনি বেড়েছে অন্যন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও। তবে পেঁয়াজের দাম আগের তুলনায় কমতির দিকে রয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের তুলনায় বোতলজাত তেল ও লুজ সয়াবিন তেলের দামও বাড়তির দিকে। গত সপ্তাহের তুলনায় সয়াবিন তেল লিটারে ৪ টাকা করে বেড়েছে। বর্তমানে ৮৬ টাকার পরিবর্তে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বোতলজাত ফ্রেস কোম্পানির বোতলজাত তেল ৫ লিটার ৪৯০ টাকার পরিবর্তে ৫০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তীর কোম্পানির বোতলজাত তেল ৫ লিটারে ৪৯০ টাকার পরিবর্তে ৪৯৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মসুরির ডাল (মোটা) ৪৮ টাকার পরিবর্তে ৫৫-৫৬ টাকা, মসুরির ডাল (দেশি) প্রকার ভেদে ৭৫ টাকার পরিবর্তে ৮৫-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম কমেছে। দেশি পেঁয়াজ ৫৫ টাকার পরিবর্তে ৪২ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে।
মুরগির বাজারে বিক্রেতা মোঃ সুবজ মিয়া জানান, গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ব্রয়লার ও ককের দাম কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা করে বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১২০ টাকার পরিবর্তে ১৪০ টাকা ও কক ১৫০ টাকার পরিবর্তে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকার দিকে ওই সব মুরগির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে চাহিদার তুলনায় মুরগির ঘাটতি থাকার কারণে দাম বেড়েছে। মাছ বাজারেও মাছের দামও গত সপ্তাহের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। ভেটকি মাছ এক কেজির নিচে গত সপ্তাহে দাম ছিল ৪শ’ টাকার মধ্যে শুক্রবার তা ৪৮০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। ছোট চিংড়ি মাছ কেজি ৪শ’ থেকে ৫শ’ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
নিউমার্কেট কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা আশিকুর রহমান এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি বলেন, যে চাল তিনি গত সপ্তাহে কেজি ৫৪ টাকায় কিনেছেন সেই চাল এখন ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই সাথে অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেড়েই চলেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ চালের দাম ৪০ টাকার নিচে আর কমবে না তার ব্যক্তিগত মতামত ঢালাওভাবে প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রচারের একদিন পর থেকেই সব কিছু যেন বেড়েই চলেছে। সরকারি সঠিক মনিটরিং ও তদারকি না থাকার কারণেই বাজারে এমন পরিস্থিতি বলে তিনি মনে করেন।
উল্লেখ্য, চলতি মাসে গত ১ ফেব্রুয়ারি সকালে চা প্রদর্শনী উপলক্ষে সচিবলায়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ মন্তব্য করেন যে, ৪০ টাকার নিচে চালের দাম বাস্তব সম্মত নয়। বাণিজ্যমন্ত্রীর এমন মন্তব্য করার পর ভরা মৌসুমেও সব ধরনের চালের দাম বাড়তির দিকে বলে স্থানীয় খুচরা চাল ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের মন্তব্য।