খুলনা অফিস : কর্মকর্তাদের ভুলের কারণে ও সার্ভেয়ারদের দৃষ্টি এড়িয়ে ভুল দাগ ও খতিয়ান ব্যবহার করায় বটিয়াঘাটা উপজেলার ভান্ডারকোট ইউনিয়নের ভান্ডারকোট গুচ্ছ গ্রাম প্রকল্পের বরাদ্দকৃত দেড় কোটি টাকা ফেরত যাওয়ায় উপজেলাবাসীর মনে দারুণ ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ভান্ডারকোট গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে পশুর নদী ভরাটী জায়গায় অনেক বছর আগে সরকার একটি আশ্রায়ণ কেন্দ্র গড়ে তোলে। আশ্রায়ণের ২১.৭ একর জায়গার সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার দাগ নম্বর এস.এ-১৪৯৯ আর.এস-২০৮৯ বাটা-১৬০৬। আশ্রায়ণের শতাধিক ব্র্যাকে সুফল ভোগীরা বসবাস করে থাকেন। ব্র্যাক সংলগ্ন জলাশয়ে তারা মাছ চাষ করেন। পরিকল্পিতভাবে জলাশয় গুলোকে দখলের জন্য মন্ত্রনালয়কে ভুল তথ্য দিয়ে প্রকল্পের নামে আর.এস-৫২৩ ও ২০৪৯ দাগ দেখানো হয়। বাস্তবে দেখা যায় ৫২৩ দাগ রয়েছে আশ্রায়ণ কেন্দ্র থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার উত্তরে এক জনের বাড়ী। ২০৪৯ দাগে রয়েছে গ্রামের গাঁঘেসে প্রবাহিত একটি পুরাতন খাল।
-ভূমি মন্ত্রনালয় থেকে গুচ্ছ গ্রাম তৈরির জন্য ১৭-১৮ অর্থ বছরে ৫২৩ ও ২০৪৯ দাগের উপর ১ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তাছাড়া মাটি ভরাটের জন্য ১৮-১৯ অর্থ বছরে ১৮৫ মেট্রিক টন চাল ব্যয় ধরা হয়। তার মধ্য থেকে ১৩৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দিলে প্রকল্পের চেয়ারম্যান ভান্ডারকোটের ইউপি চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন ৪৬ মেট্রিক টন চাল উত্তোলন করেন। তিনি কাজ শুরু করলে আশ্রায়নবাসী বাধা প্রদান করেন। পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে যান। তারা সবকিছু খতিয়ে দেখা কালে ভুল ধরা পড়ে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কর্মকর্তারা ও ভূমি অফিসের অভিজ্ঞ সার্ভেয়ার মাহামুদুল হক থাকা সত্বেও কিভাবে ভূল দাগ খতিয়ানের উপর প্রকল্প খাড়া করা হলো। এব্যাপারে সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল কাদের যিনি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে বটিয়াঘাটায় অনেক দিন দায়িত্ব পালন করেছেন তার কাছে জানতে চাইলে তিনি এক কথায় জানিয়ে দেন ভান্ডারকোট গুচ্ছ গ্রামের কাজ হচ্ছে না। তবে জনমনে প্রশ্ন, এব্যাপারে কি তার কোন দায়িত্ব ছিলনা? যেখানে অবহেলিত বটিয়াঘাটা উপজেলায় সরকারি প্রকল্পের সংখ্যা নগণ্য, সেখানে দেড় কোটি টাকা ব্যয় প্রকল্পটি বাতিল হওয়ার পেছনে দায়ী কারা? এ ব্যাপারে প্রকল্পের চেয়ারম্যান ইসমাইল হোসেন বাবু জানান, তিনি ৪৬ মেট্রিক টন উত্তোলিত চালের টাকা ফেরত দেবেন। তার কাছে আরও জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্প বাতিলের ব্যাপারে ইউ.এন.ও সাহেবরা ভাল জানেন। উপজেলার বর্তমান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, নির্ধারিত স্থানে সরেজমিনে যেয়ে দেখা যায় দাগ খতিয়ান নম্বর ঠিক নেই। তাছাড়া ভিলেজ পলিটিক্স এর কারণে একটি মামলাও সেখানে রয়েছে। যে কারণে অনেক চেষ্টা স্বত্বেও উপযুক্ত জমি না পাওয়ায় নির্ধারিত অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, উপযুক্ত জায়গা পেলে একটি আদর্শ গুচ্ছ গ্রাম করার ইচ্ছা তার রয়েছে। কর্তৃপক্ষের এহেন ভুলের মাশুল দিতে হচ্ছে ইউনিয়নবাসীকে।