আজগর হোসেন ছাব্বির, দাকোপঃ বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন আজ নানা কারনে হুমকির মুখে। এই বনের বহুমুখি ব্যবহার সীমিত করে সরকার বন রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করেছে। বনের ৫২ শতাংশ এলাকা অভয়ারণ্য ঘোষনা জীব বৈচিত্র রক্ষায় গ্রহন করা হয়েছে নতুন প্রকল্প। কিন্তু বিশাল এই বনাঞ্চল রক্ষায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বনরক্ষি এবং রক্ষিদের ব্যবহ্নত আগ্নেয়অস্ত্র এখন নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছে।
পৃথিবীর সেরা ৭ টি স্থানের তালিকায় নাম লেখানোর প্রতিযোগীতায় যে সুন্দরবন বিশেষ স্থান দখল করে বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে নতুন পরিচয়ে পরিচিতি করিয়েছে সেই বন আজ নানা কারনে হুমকির মুখে। বন বিভাগের সংশ্লিষ্ট সুত্র মতে ৩ লাখ ১৭.৯৫০ হেক্টর আয়তনের সুন্দরবন শুরু থেকে বহুমুখি ব্যবহার হয়ে আসছিল। দেশের ৫ টি উপকুলিয় জেলার ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ একক ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল। নোনা পানি ও মিষ্টি পানির সংমিশ্রনে গড়ে ওঠা বনাঞ্চলে জীব বৈচিত্রের রয়েছে বিশাল সমারোহ। এ ছাড়া এই বনের মধু কাঠ গোলপাতা এবং বন অভ্যান্তরে ছোট বড় খালের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ও কাকড়া সংগ্রহের মাধ্যমে উপকুলের বৃহৎজনগোষ্টি তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। আর এই বনভুমি এবং বনজ সম্পদকে নিরাপদ রাখতে সরকার বনরক্ষি নামে একটি বাহিনী নিয়োজিত করেছে। কিন্তু অতি সম্প্রতি কিছু অসাধু বনরক্ষিদের সহায়তায় বনজ সম্পদের অপব্যবহারের ফলে সুন্দরবন তাঁর আপন চেহারা আজ হারাতে বসেছে। যেখানে নির্বিচারে হচ্ছে বনজ সম্পদ পাচার, বন্যপ্রানী এবং বিশেষ প্রক্রিয়ায় মৎস্য সম্পদ নিধন করা হচ্ছে। আবার সুন্দরবনে গড়ে ওঠা দস্যুবাহিনীর কারনে প্রকৃত বনজীবিদের নিরাপত্তা এখন শতভাগ ঝুকির মুখে। যে কারনে সরকার সুন্দরবনের বহুমুখি ব্যবহার সংকোচিত করে বনের ঐতিহ্য রক্ষা এবং ভ্রমন পিপাসুদের দৃষ্টি আকর্ষনে সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্প বিকাশে অধীক মনোযোগী হয়েছে। সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং মায়াবী হরিণ বর্তমানে সবথেকে বেশী ঝুকির মুখে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার ১৯৯৬ সালে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯৯ দশমিক ৪৯৬ হেক্টর জায়গা জুড়ে অভয়ারণ্য ঘোষনা করে। বর্তমানে যেটি ২২ টি কম্পার্টমেন্ট নিয়ে সুন্দরবনের মোট আয়তনের ৫২.৯ শতাংশ এলাকা। এ বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় কর্মকর্তা বশিরুল আল মামুন নতুন অভয়ারন্য ঘোষনার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘোষিত এলাকায় বাঘ হরিণসহ অন্যান্য প্রাণীর নিরাপদ বিচরন নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। একই সাথে ঘোষিত এলাকায় সব ধরনের বনজ সম্পদ আহরন নিষিদ্ধ করা হবে। তিনি বলেন সুন্দরবন উপকুলবর্তী মানুষকে ভিন্ন পেশায় আকৃষ্ট এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। অপরদিকে সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় নিয়োজিত বনরক্ষিদের জীবনমান ও নিরাপত্তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। বিশাল এই বনভুমি রক্ষায় যে পরিমান জনবল দরকার বর্তমানে সেটা নেই। গহীন বনে তাঁদের জীবনের সার্বক্ষনিক ঝুকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেখানে দস্যুবাহিনী অধীক সংখ্যায় অত্যাধুনিক আগ্নেয়অস্ত্র ব্যবহার করছে সেখানে বনরক্ষিদের অস্ত্র সেই পুরাতন আমলের। নেই দ্রুতগামী জলযান, ক্ষেত্র বিশেষ বনজ সম্পদ বিক্রি করে জলযানের তৈল কিনতে হয়। যেখানে তাঁদের দায়িত্ব পালনে শতভাগ ঝুকি থাকে অথচ নেই কোন ঝুকিভাতা। গত ২৮ জুলাই সুন্দরবনের কালাবগী ষ্টেশন কর্মকর্তা শ্যামাপ্রসাদ গহীন বনে নিয়মিত টহলে গিয়ে দস্যুবাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ হয়। এ ধরনের ঘটনায় বর্তমানে বলা যায় বনরক্ষি এবং রক্ষিদের কাছে থাকা সরকারী আগ্নেয়অস্ত্র দুটোই নিরাপত্তাহীন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন সরকার আমাদের যে অস্ত্র দিয়েছে সেই অস্ত্রের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাই অন্যান্য বিষয়ের সাথে আধুনিক যুগপযোগী বনরক্ষি বাহিনী গড়ে তোলার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। একই সাথে বনরক্ষি বাহিনীটিকে সুশৃংক্ষল করতে তাঁদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা দরকার এমনটাই মনে করে সচেতন মহল।