মামলা দায়ের : মুলহোতাসহ আটক-৭
কামরুল হোসেন মনি, খুলনা : এস এম শামসুল আরেফিন ওরফে রনি ও মোঃ কামরুজ্জামান ওরফে সবুজ। এরা দুইজন খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এক সাথে ব্যবসাও করেন। ভবনের ডিজাইনের কথা বলে ‘হাসান’ নামে এক যুবক তাদেরকে খুলনা থেকে মোড়লগঞ্জে উদ্দেশ্যে শনিবার রওনা দেন। ট্রলারে উঠে কিছু সময় চলার পর তাদের ওপর নেমে আসে অমানষিক নির্যাতন। এ সময় বন্ধু রনি’র চিৎকারে এগিয়ে আসে সবুজ। সবুজের ওপর হামলা চলে। রনিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পায়ের আঘাত ও এক হাত ভেঙ্গে দিয়ে নদীতে ঝাপ দিতে বলে। সবুজের ওপর চলে একইকায়দায় নির্যাতন। রনি এ যাত্রা বেচে গেলেও সবুজকে এখনো খুজে পাওয়া যায়নি। তাদের দুই জনের নগরীর ২০নং ওয়ার্ড শেখ পাড়া এলাকার বাসিন্দা। রোববার বিকেলে এ ঘটনায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে রনির আত্মীয় সোনাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। নিখোজ সবুজের বাড়িতে শোকের মাতম। সবুজের দুই বছরের শিশুপুত্র আমান তার বাবা খুজছে।
বাগেরহাট পিরোজপুরে থানায় ঘটনার মুল পরিকল্পনাকারী হাসান ওরফে পরশসহ ৭ জনকে আটক করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ওসি মমতাজুল হক জানিয়েছেন। এ ঘটনায় ৭ জনের নাম মামলা দায়ের করা হয়। তবে সবুজের জীবিত বা মৃত দেহ এখনো উদ্ধার করা যায়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ জেল্লাল হোসেন রোবরাব রাত পৌনে এ প্রতিবেদককে বলেন, এই ঘটনায় মুলহোতা হাসান ওরফে পরশসহ বাগেরহাট পিরোজপুর থানা পুলিশ আটক করেছেন। এই মাত্র থানায় ঢুকলাম। আমরা আসামিদেরকে নিয়ে খুলনার উদ্দেশ্যে রওনা দেব।
নিখোজ ছেলের সবুজের বড় ভাই মনিরুজ্জামান মোক্তার রোববার রাতে এ প্রতিবেদককে বলেন, মোড়লগঞ্জ একজন ট্রলারের মাঝি তাকে বলেন, চলন্ত ট্রলার থেকে নদীতে একজনকে মারপিট করে ফেলে দেয়। তার কিছুক্ষনের পর আরও একজনকে ফেলে দেয়া হয়। প্রথমে যাকে ফেলে দেয়া হয় সেই আমার ভাই সবুজ ছিল। পরের জন্য ছিল রনি। তাকে উদ্ধার করতে পারলেও আমার ভাইকে উদ্ধার করতে পারেনি। রনিকে মারধর থেকে বাচাতে এগিয়ে এসে তার ভাইকে মারপিট করে নদীতে ফেলে দেয়। খুলনা থেকে যে ছেলেটি তাদেরকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছেন। আমার ভাইকে শনিবার ও রোববার সারাদিন নদীতে তল্লাশী চালানো হয়েছে কিন্তু পায়নি।
রোববার বিকেলে নগরীর শেখপাড়া সবুজের বাসায় গেলে সেখানে দেখা যায়, সবুজের শিশুপুত্র আমান মটরসাইকেল পড়ে বসে খেলা করছিল। বাড়ির মধ্যে লোকজন আসা যাওয়ার মধ্যে তার বাবাকে ঘুরে ফিরে খুজছে। অবুজ শিশু আমান জানে না তার বাবা কোথায়।
রোববার খুমেক হাসপাতালে অর্থোপেডিক্সে ভর্তি এস এম শামসুল আরেফিন ওরফে রনি এ প্রতিবেদককে বলেন, গত বৃহস্পতিবার হাসান নামে পরিচয় দানকারী এক যুবক আমার কাছে আসেন। এ সময় তিনি বলেন, মোড়লগঞ্ছ এলাকায় ব্লিডিংয়ের ডিজাইনের কাজ করার জন্য আমাকে প্রস্তাব দেয়। আমি বলেছি, এতো দুর যাওয়া সম্ভব না। তাকে ফিরিয়ে দেন। পরবর্তীতে আবার এসে বলে আমি আপনাদারে দিয়ে এ কাজটি করাতে চাচ্ছি। পরবর্তীতে আবার শনিবার সকালে আসলে আমি যেতে রাজি হই। সবুজ আমার ছোট বেলার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এক সাথে ব্যবসাও করি। সবুজকে সাথে নিয়ে আমরা হাসানের সাথে রওনা দেই। সকাল ১১টার দিকে তারা একটি ট্রলারে উঠে বলেশ্বর নদীর দিকে যেতে থাকে। ওই সময় ট্রলারটি রিজার্ভ করা হয়। ট্রলারের আরও লোকজন দেখে সন্দেহ হলে হাসানকে বলি এরা কারা। তখন সে বলে যে মালিকের কাছে যাচ্ছি তার ইটভাটার কর্মচারি। কোন সমস্যা নেই। কিছুক্ষন পরে সবুজের এদের গতিবেগ দেখে সন্দেহ হয়। তখন হাসান আমাকে ও সবুজ ট্রলারের ইঞ্জিন রুমে আসতে বলে। সবুজ তখন আমাকে বলে তুই যা, আমার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে। আমি বাইরে দিকে দেখছি। ইঞ্জিন রুমে ঢোকার পরপরই পেছন থেকে একজন মোটা লাঠি দিয়ে আমাকে আঘাত করলো। আমি চিৎকার দিয়ে সবুজকে ডাক দেই, ওরা আমাকে মারছে। সবুজ এগিয়ে আসলে তাকেও ঘিরে ফেলে। পরে ওরা আমার এক হাত ভেঙ্গে দেয় এবং পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে এবং বলে ‘হয় নদীতে লাফ দিব, না তুই এখানে মরবি’। আমি তখন নদীতে ঝাপ দেই। এর পর আমার শরীরের সব কিছু কাপড় খুলে ফেলি। একটি ট্রলারের ওখান থেকে যাচ্ছিল, আমি চিৎকার করে সাহায্যে চাইলে তারা আমাকে উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করান। এ ঘটনার আগে ট্রলার উঠে আমরা দুই বন্ধু সেলফি তুলি। ওই ছবিতে মুলহোতা হাসানের ছবিও উঠে যায়।
নিখোজ মোঃ কামরুজ্জামান ওরফে সবুজ নগরীর ২০নং ওয়ার্ডে শেখপাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত মোহাম্মদ নুরুজ্জামানের পুত্র। এর আগে সবুজ একটি ওষুধ কোম্পানীতে প্রতিনিধি হিসেবে চাকরিরত ছিলেন। কয়েক বছর আগে বিয়ে করেন। তার দুই বছরের শিশুপুত্র আমান রয়েছে। একই এলাকার বাসিন্দা মৃত শাহাদাত কবিরের পুত্র এস এম শামছুল আরেফিন ওরফে রনি। তিনি নগরীর কেডিএতে সার্ভায়ে হিসেবে কর্মরত রয়েছে। পাশাপাশি তিনি ব্যক্তিগত ব্যবসায় জড়িত রয়েছেন।